-->

পাম নদ দখল করে প্রভাবশালীর মাছের খামার

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পাম নদ দখল করে প্রভাবশালীর মাছের খামার
ক্যাপশন : ভেকু দিয়ে খননের পর পুকুর বানিয়ে চলছে মাছ চাষ

পঞ্চগড়ের সদর ও বোদা উপজেলার মধ্য দিয়ে এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর পাম নদ। স্থানীয় প্রভাবশালী জিয়াউর রহমান নদটি দখল করে ভেকু দিয়ে খননের পর পাড় বেঁধে পুকুর বানিয়ে করছেন মাছ চাষ। আর অন্য অংশে চলছে ধানের চাষ। নদটি নালায় পরিণত হয়ে গতিপথ পরিবর্তনের ফলে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দিয়ে। এদিকে আসছে বর্ষায় ভাঙনের শঙ্কায় স্থানীয় অর্ধশত পরিবারের দিন কাটছে।

 

দখল আর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে একসময়ের ছবির মতো সুন্দর পাম নদ। পঞ্চগড় জেলা সদরের ধাক্কামারা এলাকার নিম্নাঞ্চল থেকে উৎপত্তি হয়ে বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বন্দরমনি এলাকায় করতোয়ার সাথে মিলিত হয়েছে নদটি। এর দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ২০ মিটার।

 

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের পামেরপাড়া এলাকায় পঞ্চগড়-মাড়েয়া সড়কের কোল ঘেঁষে প্রভাবশালী জিয়াউর রহমানের তত্ত্বাবধানে চলছে নদ দখলের মহোৎসব। পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে মাড়েয়া যাওয়ার পথে পাম নদের বামদিকে দিনে দুপুরে ভেকু দিয়ে বাড়াচ্ছেন পুকুরের গভীরতা ও পরিধি। দখল পাকা পোক্ত করতে শক্ত করে বাঁধা হচ্ছে পুকুরের পাড়। এদিকে পাম নদের ওপর সেতুর পিলার ঘেঁষে খনন করায় ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি। একই সঙ্গে ব্লক দেওয়ায় সেতুর বাঁধও ক্ষতির মুখে। অন্যদিকে নদের গতিপথ পরিবর্তন করায় নিম্ন আয়ের অন্তত ৫০টি পরিবারের ঘরবাড়ি বর্ষায় ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। গত বছর ভাঙনের ক্ষত রয়েছে আজও।

 

জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও সহায়-সম্পত্তি ও অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা তার ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস দেখায় না। নীরব রয়েছে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। সরেজমিনে দেখা যায়, বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের পাম নদের যে স্থানে পুকুর খনন করা হয়েছে। সেখানে গতিপথ ছিল তার মাঝ দিয়ে। বর্তমানে প্রবাহ পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে পশ্চিমের জনবসতির পাশ দিয়ে। এতে উপড়ে পড়েছে পাড়ের বাঁশঝাড়সহ বিভিন্ন গাছপালা।

 

স্থানীয় বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম বলেন, নদটি আগে জিয়াদের বাড়ির পাশ দিয়ে ছিল। এখন পুকুর করে গতিপথ দিয়েছে আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে। গত বছর বর্ষায় আমাদের এপাশে ভাঙন শুরু হয়েছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কথা বলার সাহস পায় না।

 

ওই এলাকার বৃদ্ধ রূপবান বানু বলেন, আমি অনেক দিন ধরে দেখছি নদীটি ছিল বর্তমান যেখানে পুকুর করেছে তার মাঝবরাবর। এখন তারা পুকুর কেটে নদী করে দিয়েছে আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে। বর্ষা এলেই ভিটেতে ভাঙ্গন শুরু হয়। তাদের কেউ কিছু বলে না। আমরা গরিব মানুষ, তাদের সঙ্গে পেরে উঠতে পারব না। তাই চুপ থাকি।

 

নদ দখল করে পুকুর খননের বিষয়ে কথা হয় জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, নদীর জমি যেটি আপনারা বলছেন, সেটি আমার অর্পিত সম্পত্তি। আদালতের মাধ্যমে দায়মুক্তি পেয়েছি। আমার জমিতেই মাছ চাষ করার জন্য পাড়সহ পুকুর করেছি। নদী নদীর জায়গায় আছে। আমি নদী দখল করি নাই।

 

তবে দিনে দুপুরে এত বড় কর্মযজ্ঞ চললেও স্থানীয় বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব আলী কিছুই জানেন না বলে জানান। এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ করতে বলেন। ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ইউএনও ব্যবস্থা নেবেন বলে দায় এড়িয়ে যান।

 

পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মণ বলেন, এ বিষয়ে আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি। বিষয়টি পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় উত্থাপন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

বোদা ইউএনও শাহরিয়ার নজির বলেন, আমরা গিয়ে পুকুর খনন বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়া তাকে পূর্বের জায়গায় ফিরে যেতে সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এরপর আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version