-->
উপেক্ষিত বিমা আইন

একই সাথে দুই বিমা কোম্পানির শিরোমনি বিএম ইউসুফ আলী

হেলাল সাজওয়াল
একই সাথে দুই বিমা কোম্পানির শিরোমনি বিএম ইউসুফ আলী
ছবি-সংগৃহীত

কোন ব্যক্তি একাধিক বীমা কোম্পানির পরিচালনার সাথে যুক্ত হতে পারবেন না, বা কোন কোম্পানির পরিচালক একই সঙ্গে অন্য কোন বিমা কোম্পানিতে লাভজনক কোন পদে চাকরীতে যুক্ত থাকতে পারবেন না। বিমা আইনে এমন বিধান থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত এ কাজটি করে আসছেন বিএম ইউসুফ আলী।জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পপুলার লাইফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পদ আগলে রাখা বি এম ইউসুফ আলী একই সাথে এনআরবি ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্সের উদ্যোক্তা পরিচালক। দেশে-বিদেশে নামে বেনামে গড়ে তুলেছেন অজস্র সম্পদ।

জানা গেছে, বি এম ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটিলিজেন্স ইউনিট বিএফআইইউ। বিমা আইন ২০১০এর দ্বিতীয় অধ্যায় বীমাকারীর জন্য প্রযোজ্য বিধানাবলী বীমা কোম্পানীর পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক কর্তৃক চাকুরী করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ ধারা ৭৮ এ রয়েছে ‘আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইন বা বীমাকারীর সংঘবিধিতে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন ব্যক্তি বীমাকারীর চাকুরীতে উপদেষ্টা, নিরীক্ষক, পরামর্শক বা অন্য কোন লাভজনক পদে নিয়োজিত থাকিলে তিনি উক্ত বীমাকারীর পরিচালক হইবার বা থাকিবার যোগ্য হইবেন না। এছাড়া যুগপৎভাবে একই শ্রেণীর একাধিক বীমাকারীর বা বীমাকারী ও ব্যাংক-কোম্পানীর বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে বিমা আইন ২০১০এ বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে ধারা ৭৫ এ বলা আছে আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইনে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, কোন বীমাকারীর পরিচালক একই শ্রেণীর বীমা ব্যবসার জন্য নিবন্ধীকৃত অন্য কোন বীমাকারীর বা কোন ব্যাংক-কোম্পানীর বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হইতে পারিবে না। কিন্তু বি এম ইউসুফ আলী বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন কতৃপক্ষ আইডিআরএ এবং অন্য সকল নিয়ন্ত্রন সংস্থাগুলোর তোয়াক্কা না করে একই সাথে দুটি কোম্পানির দায়িত্বে আসীন।

এ ব্যাপারে আইডিআরএ’র নির্বাহি পরিচালক এবং মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, বিমা আইনে এটা সম্ভব নয় তবে আমি দেখে বলতে পারবো। পপুলার লাইফ ইসুরেন্স কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এবং এনআরবি ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্সের পরিচালক পদে বহাল রয়েছেন। এটা তিনি জানেন না অথবা আইনটা তিনি জানেন না? বিএম ইউসুফ আলী বিমা প্রতিষ্ঠানসমূহের মুখ্য নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স ফোরামের প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স এসোসিয়েশন-এর নির্বাহী পরিষদের সদস্য। ২০০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি তিনি পপুলার লাইফের সিইওর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১৫ সালে তাঁর নেতৃত্বে সকল বিমা কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের নিয়ে বাংলাদেশ ইসুরেন্স ফোরাম (বিআইএফ) প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিদ্যমান বিমা আইন ২০১০ অনুযায়ী কোনো বিমা কোম্পানির পরিচালক যুগপৎ কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হতে পারেন না। এছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর ধারা ২৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি কোনো ব্যাংক কোম্পানির পরিচালক হলে একই সময়ে তিনি অন্য কোনো ব্যাংক কোম্পানি বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক থাকবেন না।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন ১৯৯৩-এর ধারা ২৫ (৩) ধারায় বলা হয়েছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা একাধিক ব্যাংক কোম্পানি বা একাধিক সাধারণ বিমা কোম্পানি বা একাধিক জীবনবিমা কোম্পানির পরিচালক থাকবেন না। এদিকে প্রস্তাবিত ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের ১৫ (২) ধারায় বলা হয়েছে, ফাইন্যান্স কোম্পানির কোনো পরিচালক একই সময়ে অন্য কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানি বা বিমা কোম্পানির পরিচালক থাকবেন না বা তাঁর পক্ষে অন্য কাউকে অন্য কোনো ফাইন্যান্স কোম্পানি বা ব্যাংক কোম্পানি বা বিমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক নিয়োগ করতে পারবেন না।

এ বিষয়ে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোন এক রহস্য জনক কারনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বিষয়টি দেখেও দেখছেন না। যে কারণে এ খাত থেকে অনিয়ম দুর করা যাচ্ছে না। তারা বলছেন মেজর একটি আইন দায়িত্বশীল ব্যাক্তির দ্বারা উপেক্ষিত হলে তা যদি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কতৃক দেখেও না দেখার ভান করা হয় তাহলে মাইনর আইনগুলো উপেক্ষা করতে কেউ আর দ্বিধান্বিত হবে না। কতৃপক্ষের এমন নিশ্চুপ ভুমিকা এ খাতে বিশৃঙ্খলা বাড়িয়ে দিবে।

ভোরের আকাশ/ ইস

মন্তব্য

Beta version