আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫ ১২:৩৬ এএম
ব্রহ্মপুত্রে বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ শুরু করল চীন
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল চীন। তিব্বতের ইয়ারলুং জাংবো নদীতে (যেটি ভারত ও বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত) ৬০ গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিশাল বাঁধ নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করেছে বেইজিং।
শনিবার তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের নিংচি এলাকায় বাঁধ নির্মাণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পাঁচটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে গঠিত এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১.২ ট্রিলিয়ন ইউয়ান (১৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)। পরিকল্পনা অনুসারে, বাঁধটি শুধু তিব্বতের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাবে না, বরং চীনের অন্যান্য অঞ্চলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
ইয়ারলুং জাংবো বা ব্রহ্মপুত্র নদ ভারতের অরুণাচল ও আসাম রাজ্য এবং বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কোটি কোটি মানুষের পানির চাহিদা, কৃষিকাজ এবং জীবিকা এই নদীর ওপর নির্ভরশীল। ফলে চীনের এই বাঁধ নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারত ইতোমধ্যেই তাদের উদ্বেগ চীনের কাছে জানিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনকে বলা হয়েছে যেন উজানের কার্যক্রমে নিম্নপ্রবাহের দেশগুলোর স্বার্থ ক্ষুণ্ন না হয়। অপরদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশ্বস্ত করেছে যে, এই বাঁধ নিম্নপ্রবাহে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না এবং যোগাযোগ রক্ষা করা হবে।
পরিবেশবাদী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই মেগা বাঁধ প্রকল্পের কড়া সমালোচনা করেছে। তারা বলছেন, প্রকল্পটি তিব্বত মালভূমির মতো সংবেদনশীল পরিবেশে অপূরণীয় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে।
‘থ্রি গর্জেস ড্যাম’-এর চেয়েও বড় হতে চলেছে এই নতুন বাঁধ। আর আগের বাঁধ নির্মাণে ১৪ লাখ মানুষকে পুনর্বাসিত করেছিল চীন। তবে এবার কতজন মানুষ বাস্তুচ্যুত হবেন—সে বিষয়ে নির্মাণকারী সংস্থা এখনো কোনো তথ্য দেয়নি।
তিব্বতের হিমবাহ ও পাহাড়ি ঝর্ণা থেকে উৎপন্ন ব্রহ্মপুত্রের পানি ভারত, বাংলাদেশ ও ভুটানে প্রায় ১৮০ কোটিরও বেশি মানুষ ব্যবহার করে থাকেন। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই বাঁধের মাধ্যমে চীন ভবিষ্যতে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, যা ভাটির দেশগুলোর জন্য এক ধরনের ‘জল কূটনীতি’ তৈরি করতে পারে।
ভোরের আকাশ//হ.র