নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৫ ১১:৩৭ পিএম
তিন গুরুত্বপূর্ণ পদে একই ব্যক্তি রাখায় আপত্তি নেই বিএনপির
ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা—এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে একই ব্যক্তির দায়িত্ব পালনে কোনো আপত্তি দেখছে না বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলের মতে, এটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব গণতান্ত্রিক অধিকার, ফলে এতে কোনো বাধ্যবাধকতা আরোপ করা উচিত নয়।
শনিবার (২০ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বিতীয় ধাপের ১৫তম দিনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, “একই ব্যক্তি তিনটি পদে থাকতে পারবেন কি না—এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, এতে কোনো বাধ্যবাধকতা রাখা উচিত নয়। এটা একান্তই দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং গণতান্ত্রিক অধিকার।”
কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, একজন ব্যক্তি একসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না। এসব পদে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।
তবে বিএনপির অবস্থান ভিন্ন। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হিসেবে একই ব্যক্তি দায়িত্ব পালন করলে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু দলীয় প্রধানও একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন কি না, সেটা বিতর্কের বিষয়। আমাদের দল ইতোমধ্যে লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে এবং আগের আলোচনাতেও আমরা একই যুক্তি দিয়েছি।”
তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, “যুক্তরাজ্যেও দেখা যায়, দলীয় প্রধানরাই প্রধানমন্ত্রী হন। তবে সেটি নির্বাচন নয়, বরং সংসদীয় দলের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হয়। ফলে কেউ যদি দলের প্রধান হন, তাকে প্রধানমন্ত্রী হতে বাধা দেওয়ার যুক্তি নেই।”
বিএনপির মতে, দলীয় প্রধানের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্বের পথ খোলা রাখা গণতান্ত্রিক চর্চার অংশ। সালাহউদ্দিন বলেন, “সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তে যদি কেউ মনোনয়ন পান, তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন। আবার অন্য কেউ মনোনয়ন পেলে তিনিও হতে পারেন। কিন্তু সেই সুযোগটা খোলা রাখা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু দলীয় প্রধান হওয়ার কারণে কেউ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না—এমন বিধান গণতন্ত্রবিরোধী। এটি সংসদীয় গণতন্ত্রের পরিপন্থী।”
বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রসঙ্গও উঠে আসে। বিএনপি জানায়, এ বিষয়টি এখনো আদালতের আপিল বিভাগে রিভিউ পর্যায়ে বিচারাধীন। দলটির বিশ্বাস, আদালতের রায়ের মাধ্যমেই এ ব্যবস্থা আবার চালু হবে। তবে আদালতের রায়ে ফিরে না আসলেও, জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে বলেও মত দেন বিএনপি নেতা।
সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নিয়োগের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব এসেছে। এই কমিটিতে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, বিরোধীদলীয় হুইপ এবং তৃতীয় বৃহত্তম দলের একজন প্রতিনিধি থাকবেন।
তিনি বলেন, “কমিটি বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে প্রস্তাবিত নাম আহ্বান করতে পারবে। এরপর শর্টলিস্ট করে প্রয়োজনে র্যাংকড চয়েস ভোটিংয়ের মাধ্যমে একজন নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে মনোনীত করার প্রক্রিয়া তৈরি করা হচ্ছে।”
নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের মেয়াদ আগের মতো ৯০ দিন থাকছে। জরুরি পরিস্থিতিতে আরও ৩০ দিন সময় বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পূর্ণ ক্ষমতা নয়, বরং রুটিন দায়িত্ব পালন করবেন।
বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, “বাংলাদেশের বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক প্রথার আলোকে আমরা বিশ্বাস করি, সবাই যৌক্তিক চিন্তা করে একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থানে পৌঁছাতে পারবেন।”
ভোরের আকাশ//হ.র