ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্বাচনী আসনে কোনো প্রার্থী দেবে না জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন একটি সৌন্দর্য খালেদা জিয়া প্রার্থী হচ্ছেন। আমরা তাকে স্বাগত জানাই। কারণ তার আপসহীন ও লড়াকু নেতৃত্ব বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে অনেক শক্তিশালী করেছে। আমরা তার সম্মানার্থে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এছাড়াও বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময়ে ভূমিকা রাখায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান, আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরের আসনেও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিষয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা চলছে। আশা করি এ বিষয়ে একটি বার্তা আসবে।
এর আগে সোমবার (৩ নভেম্বর) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ২৩৭টি আসনে তাদের প্রাথমিক প্রার্থী ঘোষণা করে। তালিকা অনুযায়ী ফেনী-১, দিনাজপুর-৩ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে লড়বেন খালেদা জিয়া।
যদিও এনসিপি ৩০০ আসনে প্রার্থী দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল, তবে বিএনপির প্রার্থী তালিকা ঘোষণার একদিন পরই খালেদা জিয়ার আসনগুলোতে প্রার্থী না দেওয়ার এই তথ্য জানাল তারা।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সবগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত প্রায় তিন দশক ধরে দেশের নির্বাচনে খালেদা জিয়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনে খালেদা জিয়া কখনোই পরাজিত হননি।
ভোরের আকাশ/এসএইচ
সংশ্লিষ্ট
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট একইদিনে আয়োজন করাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তাদের ধারণা, দেশের অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন জরুরি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জুলাই সনদ সম্পর্কিত গণভোট সম্পর্কে দেশের অধিকাংশ মানুষের ধারণা নেই বললেই চলে। কাজেই দেশের মানুষকে আঁধারে রেখে আসলে গণভোটের আয়োজন করাকে অপ্রাসঙ্গিক ভাবছেন অনেকেই। এমন জটিল পরিস্থিতিতে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের ডাবল কর্মযজ্ঞ সামলাতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)- এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক সামগ্রী সংগ্রহ, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ ও গ্রামে-গঞ্জে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের গণভোট সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ধারণা দিতে হবে সাধারণ জনগণকে। সংসদ নির্বাচনের ভোট এবং গণভোটের সময় বাড়ানোর বিষয়টিও নজরে আনতে হচ্ছে।এছাড়াও ভোট গণনা থেকে শুরু হয়ে ফলাফল ঘোষণা পয়ন্ত কঠিন চ্যালেঞ্জও রয়েছে ইসির ভাবছেন এই বিশ্লেষকরা। ইসির চাপ হ্রাসে গণভোট সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে হতে পারে কি? কারণ হিসেবে রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে বিষয় সম্পর্কে গণভোট, সেটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে বুঝাতে হবে, নচেৎ জনগণ না বুঝে ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়ার প্রবণতা থেকে যাবে বলেও মনে করছেন তারা।বিশ্লেষকরা বলছে, দেশের ইতিহাসে অতীতে যে গণভোট হয়েছে, সেটি ছিল নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের ওপর। কিন্তু জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যে গণভোট হবে সেটি চারটি প্রশ্নের ওপর। এখানেই দ্বিমত রয়েছে বেশ কযেকটি রাজনৈতিক দলেরও। গত ১৩ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণে জানান, জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট হবে এবং চারটি বিষয়ে একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিতে হবে।এ প্রসঙ্গে বিএনপি বলছে, ‘গণভোটে চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ উত্তর দেওয়ার বিধান রেখেছে। তবে চারটি প্রশ্নের যেকোনো একটির সঙ্গে দ্বিমত থাকলে ভোটাররা ‘না’ বলবে কোথায়? তাছাড়া, ৯০ ভাগ মানুষ যদি গণভোটের উদ্দেশ্যই না বোঝে, তাহলে এ প্রক্রিয়া জনগণকে অন্ধকারে রাখার শামিল। মানুষের বোঝার মতো করে প্রশ্নমালা প্রণয়ন করতে হবে।’এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চারটি প্রশ্নের যেকোনো একটির সঙ্গে দ্বিমত থাকলে ভোটাররা ‘না’ বলবে কোথায়? রিজভী বলেন, ৯০ ভাগ মানুষ যদি গণভোটের উদ্দেশ্যই না বোঝে, তাহলে এ প্রক্রিয়া জনগণকে অন্ধকারে রাখার শামিল। মানুষের বোঝার মতো করে প্রশ্নমালা প্রণয়ন করতে হবে।গণভোটের চারটি বিষয় : ক. নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে। খ. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ জন সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে। গ. সংসদে নারীর প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে। ঘ. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।জুলাই সনদ বাস্তবায়নে সম্মতি আদায়ে অনুষ্ঠেয় গণভোটের জন্য সরকার চারটি প্রশ্ন নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, এই চারটি প্রশ্ন পড়ে এবং বুঝে দেশের শতকরা কতজন মানুষ সম্মতি দিতে পারবে। তাছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রশ্নে যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই বিরোধ রয়েছে, সেখানে সমর্থক ভোটারদের ভোট দিতে তারা উৎসাহিত করবেন কি না সে প্রশ্নও রয়েছে।এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, চার প্রশ্ন সম্পর্কে জনগণকে বোঝাতে পারলে তারা হয়তো বুঝতে পারবে। একেবারেই পারবে না এটি যেমন ঠিক নয়, তেমনি ষোলো আনা পারবে সেটিও ঠিক নয়। তবে একটু কঠিন হবে।তিনি বলেন, আমাদের দেশের মানুষ বুদ্ধিমান আছে। তারা মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন অ্যাপস তো ভালোই চালায়। আবার এটিও ঠিক, চারটি প্রশ্নের জন্য ব্যাপকভাবে প্রচারণা না চালাতে পারলে সাড়া পাওয়া কঠিন হবে। তবে রেডিও-টেলিভিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবাই প্রচার চালালে জনগণ বুঝে উঠতে পারবে। তারপরও কিছু মানুষ বুঝবে না।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, আগের গণভোটের প্রশ্নটা বোঝা সহজ হলেও চার প্রশ্নের বিষয়টি বোঝা কিছুটা জটিল। এই প্রশ্ন বুঝতে হলে মানুষকে আর একটু ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে তাদের বোঝাতে হবে। সবার বোধগম্য হয় এমন ব্যবস্থা করতে হবে।তিনি বলেন, নির্বাচনের কয়েক মাস বাকি আছে। জনগণকে বোঝাতে সক্ষম না হলে গণভোট করা কঠিন হবে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাব, যাতে তারা গণভোট প্রশ্নে জনসচেতনতা তৈরি করে।রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, চারটি প্রশ্ন দিয়ে সরকার পরিস্থিতি জটিল করেছে। কাদের পরামর্শে এটা করা হলো সেটি একদিন ইতিহাস থেকে জানা যাবে। এই গণভোটের কোনো মানে নেই। এটি আমাদেরই বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। তাহলে সাধারণ মানুষ কী করে বুঝবে। বাংলাদেশের মানুষ এটি পড়ে বুঝে তারপর ভোট দেবে-যা অসম্ভব ব্যাপার বলে মনে হয়।সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, বিসিএসের মাল্টিপল চয়েস পরীক্ষায় এসব প্রশ্ন দেওয়া হলে ভালো হতো। এটি বুঝতে হলে শুধু অক্ষরজ্ঞান থাকলে হবে না। তাকে পড়ে বিষয়গুলো বুঝে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওনাদের শখ হয়েছে ওনারা করেছেন আর কী!তিনি বলেন, একদিনেই এখন গণভোট ও সংসদ নির্বাচন থাকায় দুটি ব্যালট পেপার থাকবে। আমার ধারণা, গণভোটের ব্যালট পেপারে কেউ সিল মারবে না। এটি পড়ে-বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন। দেশে এই মুহূর্তে যে অবস্থা তাতে শতকরা ১০ ভাগের বেশি লোক এটি বুঝতে সক্ষম বলে মনে হয় না। সরকারের পক্ষ থেকে তিন মাস প্রচার-প্রচারণা এবং রাজনৈতিক দলগুলো এ বিষয়ে উদ্যোগী হলে বড়জোর শতকরা ২০ ভাগ লোক এটি বুঝতে বা গ্রহণ করতে পারে। এর বেশি কোনোমতেই সম্ভব নয়। আর শতকরা ৫০ ভাগ ভোট কাস্ট হলে সেখানে পাঁচ-সাত ভাগের বেশি ভোটার গণভোটের ব্যাপারে কিছু বলবে না। না বুঝে কেউ হ্যাঁ বা না বলে দেবে বলে মনে হয় না। তারা সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিলেও গণভোটের জায়গাটা ফাঁকা রাখবে’- যোগ করেন সিনিয়র এই আইনজীবী।সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনে একই সঙ্গে গণভোট করার সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশনকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে, এখন তাদের আগের পরিকল্পনায় গণভোটের প্রস্তুতিও সমন্বয় করতে হবে। এছাড়া এবারই প্রথম পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোটগ্রহণ হবে। দেশের প্রায় পৌনে ১৩ কোটি ভোটারের সঙ্গে প্রবাসের লাখ দশেক ভোটারকে নিয়ে এ নির্বাচন হবে। ফলে এই কর্মযজ্ঞ সামলাতে কী কী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে নির্বাচন কমিশনকে সেটি সামনে এসেছে।তবে ইসি ইতোমধ্যে বলেছে, জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে গণভোট নেওয়ার বিষয়টি এলে তাদের পরিকল্পনায়ও সমন্বয় আনতে হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে এ নির্বাচনের আয়োজনের সময় রাখা হয়েছে, যার তপশিল ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা করার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন। দেশে ১৯৭৭, ১৯৮৫ ও ১৯৯১ সালে তিনটি গণভোট হয়েছে। তবে কখন জাতীয় নির্বাচনের দিনে গণভোট হয়নি।বিগত দুটি গণভোটে সম্পৃক্ত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের এমন দুজন কর্মকর্তা বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির সঙ্গে ভোটকক্ষ বাড়ানো, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাড়ানো, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ আর ভোটার সংখ্যা অনুপাতে ব্যালট পেপার, ব্যালট বাক্সসহ সরঞ্জাম বাড়াতে হবে গণভোটে। প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের বিষয়টিও রয়েছে। সংসদ নির্বাচনে প্রতীক নিয়ে ব্যাপক প্রচার থাকবে প্রার্থীদের, আর গণভোট নিয়ে গ্রামে-গঞ্জে সচেতনতামূলক প্রচার চালানোর বিষয় রয়েছে।গণভোট সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি ও বিধি প্রণয়ণের পরই সার্বিক বিষয়ে প্রকৃত ধারণা পাওয়া যাবে বলেছেন তারা। এবার সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রায় ২৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। গণভোট আলাদাভাবে করলে এই ব্যয় ধারণা করা হয়েছিল। এখন সংসদ ও গণভোট একসঙ্গে করলে ব্যয় সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই দিনে সংসদ ও গণভোট হলে তার ব্যবস্থপনার বিষয়টি যেমন রয়েছে, তেমনি গণনার ক্ষেত্রে কোনটি আগে, কীভাবে করবে, তা নির্ধারণের বিষয়ও রয়েছে। আর গণভোটের ফলাফল গণনার সময় লাগবে বেশি।জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা সকল বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের আয়োজন করা হবে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনের মতো গণভোটও ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একইদিনে অনুষ্ঠিত হবে।একই দিনে দুই ভোট করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, তাতে নির্বাচন আরও উৎসবমুখর ও সাশ্রয়ী হবে। গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে উপযুক্ত সময়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা হবে। সংসদ নির্বাচনের দিনেই গণভোট আয়োজনে নির্বাচন কমিশন-ইসির চ্যালেঞ্জসহ সার্বিক বিষয়ে নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক সংস্থাটির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।ইসি সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচনের জন্য পৌনে ১৩ কোটি ভোটার ও প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটার বিবেচনায় রেখে ব্যালট পেপার মুদ্রণের পরিকল্পনা করেছে ইসি। প্রায় ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রে প্রায় ২ লাখ ৪৫ হাজার ভোটকক্ষ থাকবে। ৯ থেকে ১০ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ থেকে ৮ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবে ভোটে। ইসির নির্দেশনায় রিটার্নিং অফিসারের তত্ত্বাবধানে ৩০০ আসনে সার্বিক নির্বাচন পরিচালনা করা হয়। ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শেষ ধাপের সংলাপ চলছে।প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, অনেকে সংলাপে তপশিল কবে, ঘোষণা কবে, তারিখটা যেন আমরা বলি। তবে ইসি আশাবাদী, রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রার্থীরা সহযোগিতা করলে সুন্দর নির্বাচন সম্ভব।ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী বলছেন, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বাড়ানোর পাশাপাশি গণভোট ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভালো প্রশিক্ষণের বিষয় রয়েছে নির্বাচন কমিশনের।কমিশনের এই সদস্য বলেন, একদিনে সংসদ ও গণভোটের ক্ষেত্রে ভোটকক্ষ বাড়িয়ে দিলে সুচারুভাবে সম্পন্ন করা যায়। আমার ধারণা, কেন্দ্র না বাড়ালেও চলবে, আমার মনে হয়। ব্যালট পেপার গণনার সময় দুই সেট লোকবল লাগবে। এক সেট সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা করবে, আরেকট সেট ‘হ্যাঁ’ আর ‘না’ ভোট গণনা করবেন।’প্রশিক্ষণের বিষয়ে সাবেক এই ইসি কর্মকর্তা বলেন, গণভোটের ব্যালট পেপার কীভাবে ইস্যু করবে, যারা গণনা করবে, তারা কীভাবে করবে সে বিষয়গুলো আছে।জেসমিন টুলী বলেন, প্রিজাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের যখন প্রশিক্ষণ দেবে, একই সময়ে আরও দুটি সেশন বাড়িয়ে দিয়ে হয়ত গণভোটের প্রশিক্ষণটি করবে। গণভোটের ব্যয় ১০ থেকে ২০ শতাংশ বাড়বে সার্বিকভাবে। প্রবাসীদের পোস্টাল ব্যালটেও দুটি ব্যালট ইস্যু করতে হবে। এসব চ্যালেঞ্জ নয়, বরং এ কাজগুলো করতে হবে সামনে। ফেব্রুয়ারিতে দিন ছোট হওয়ায় ভোটের সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই বলে মনে করেন এ নির্বাচন বিশেষজ্ঞ।তিনি বলেন, সন্ধ্যার পরে নির্বাচন নেওয়ায় ঝুঁঁকি রয়েছে; অনেক জায়গায় বিদ্যুতের সমস্যা রয়েছে। ভোটকক্ষ বাড়িয়ে দিলে সকাল ৮টা বিকাল ৪টায় হয়ে যাবে। বয়োবৃদ্ধদের একটু সময় লাগে। ব্যালট বাক্স যেহেতু আলাদা হবে। প্রিজাইডিং অফিসার বাড়ানো ও সক্ষমতা বাড়ানো গেলে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না বলে মনে করেন জেসমিন টুলী। গণভোটের প্রশ্ন নিয়ে ব্যাপক প্রচার লাগবে বলেও মনে করেন তিনি। ভোটারদের আগে থেকে জানানো কেমন প্রশ্ন থাকে, বিশেষ করে গ্রামের দিকে বয়োবৃদ্ধ, নিরক্ষর মানুষদের একটু সময় লাগবে। আদেশের আলোকে গণভোট সংক্রান্ত আইন বা অধ্যাদেশ, বিধি সব হবে বললেন জেসমিন টুলী।ইসির সাবেক কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, সংসদ ও গণভোট একসঙ্গে হলে, ইতিবাচক দিক হল ভোটার উপস্থিতি। গণভোটে তো ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতে চায় না; প্রার্থীরা ভোটার সিøপ দেয় না। এখন দুই ভোট একদিনে হলে, একটা ভালো (সংখ্যক) ভোটার কেন্দ্রে যাবে। যারা জাতীয় সংসদে ভোট দেবে তারা কেন্দ্রে যাবে, সাথে গণভোটও দেবে। ভোটকেন্দ্রে অনিয়ম হলে কেন্দ্র বন্ধ, প্রয়োজনে পুরো আসনের ভোট বন্ধের বিধান রয়েছে সংসদে। গণভোটের ক্ষেত্রে কীভাবে আইনি বিষয়গুলো গণভোট অধ্যাদেশ, বিধিতে থাকবে?জবাবে তিনি বলেন, দুটো আইন-বিধি একদিনে সমন্বয় করার বিষয়টি রয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একজন ভোটারের একসঙ্গে তিন ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকায় সংসদ ও গণভাট এক দিনে দেওয়ায় কোনো ঝামেলা দেখছেন না সাবেক এই ইসি কর্মকর্তা। স্থানীয় নির্বাচনে চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য-তিন ভোট দেওয়ার চর্চা রয়েছে। দুটো ভোট দেওয়ায় ঝামেলা নেই। তবে প্রচার সংসদের দিকে যাবে বেশি, প্রার্থীরা সক্রিয় থাকে। ব্যালট বাক্স বাড়াতে হবে, ভোটের সময় না বাড়ালেও চৌহদ্দির মধ্যে থাকলে তো ভোট নিতে হবে। ভোট ব্যবস্থাপনার বিষয় রয়েছে। সংসদ নির্বাচনের পাশপাশি গণভোটের ফলাফল গণনা বিলম্ব হতে পারে বলে মনে করেন তিনি।মিহির সারওয়ার বলেন, ভোট গণনার সময়টা অনেক বেশি লাগবে। এজন্য গণনার সময় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা দরকার হবে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের দক্ষভাবে গড়ে তুলতে হবে, ভোট কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং ‘মডেল টেস্ট’ করতে পারলে ভালো।সাবেক এই ইসি কর্মকর্তা বলেন, গণনার সময় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের আগে গোনা হবে নাকি, গণভোটের ব্যালট পেপার আগে করবে-কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে। প্রথমবারের মতো দুটো নির্বাচন একসঙ্গে হওয়ায় কীভাবে কী কাজ করলে সহজভাবে হবে, নির্বাচন কমিশনকে কর্মপরিকল্পনা নিতে হবে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিয়ন মহিলা দলের সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও একই দিনে অনুষ্ঠিতব্য ‘হ্যাঁ না’ ভোট নিয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেন।সমাবেশে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে একই দিন সংসদ নির্বাচন এবং ‘হ্যাঁ-না’ জনমত ভোট অনুষ্ঠিত হবে। দুইটি ব্যালটই ভোটারদের হাতে দেওয়া হবে। একটি ব্যালটে রাজনৈতিক দলের প্রতীক থাকবে, যেমন ধানের শীষ, দাড়িপাল্লা, নৌকা।তবে বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি সংশোধনী এনে স্পষ্ট করে বলেন, না না, নৌকা থাকবে না। আপনারা ধানের শীষকে ভোট দেবেন। আর ‘হ্যাঁ-না’ ভোট সম্পর্কে আমার দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেই সিদ্ধান্তই আমাদের নেতারা আপনাদের কাছে পৌঁছে দেবেন।জয়নুল আবদিন ফারুক দুঃখ প্রকাশ করে আরও বলেন, আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, দুই এক পত্রিকা আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে এমনভাবে প্রচার করেছে, যা আদৌ আমার বলা কথা নয়। আমার বক্তব্যকে মিস কোট করে যেন প্রচার না করা হয়, সেটি বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।তিনি দাবি করেন, তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে তা উপস্থাপিত হয়েছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
আর মাত্র পৌনে তিন মাস পরই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে জয়ের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কৌশলে এগোচ্ছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। সর্বদিকে দৃষ্টি রেখে ভোটমুখী রয়েছে দলটি। অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা কোন দলের বিতর্কিত বক্তব্যকে উপেক্ষা করে চলছে দলটির নেতারা। কিছু মহল নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত করার অপচেষ্টা করলেও সজাগ-সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে দলটি।দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত সময়েই সংসদ নির্বাচন হোক- এটাই দলটির প্রত্যাশা। কাজেই জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিএনপি। একদিনে গণভোট ও নির্বাচনের সিদ্ধান্ত স্বাগত জানায় দলটির নেতারা। পক্ষান্তরে একদিনে গণভোট ও নির্বাচনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি তোলেন জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামপন্থি দল।গণভোট ও সংবিধান সংস্কার নিয়ে প্রতিক্রিয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নিজের সই করা জুলাই জাতীয় সনদ লঙ্ঘন করেছেন।বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, সংবিধান বাস্তবায়ন আদেশের সঙ্গে জুলাইয়ে স্বাক্ষরিত সনদের বহু গরমিল রয়েছে। রাষ্ট্রে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন তৈরি হচ্ছে এর দায় কি প্রধান উপদেষ্টা নেবেন? তিনি বলেন, সার্বভৌমত্বের এখতিয়ার সংসদের। কিছু চাপিয়ে দেওয়া এখতিয়ার বহির্ভুত, যেসব ধারণা উপস্থাপন করা হচ্ছে তা সাংঘর্ষিক।তিনি বলেন, গণভোটের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের বিষয়েও বিএনপি একমত কিন্তু গণভোটের চারটি প্রশ্ন জনগণের ওপর জবরদস্তিমূলকভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত ও নির্বাচনের দিন গণভোট অনুষ্ঠানের ঘোষণা করায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার রাতে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটি বৈঠক শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন দলটি।এছাড়া, নির্বাচনে বিজয় অর্জনের লক্ষে বিভিন্ন কৌশলী দলটি। তিনশত আসনের মধ্যে ২৩৬ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা করলেও বাকি আসনগুলোর মধ্যে প্রার্থী নির্ধারণ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিগত দিনের আন্দোলনে জোটসঙ্গীদের প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রেও যাচাই-বাছাই করে সমঝোতার মধ্য দিয়ে আসন বণ্টন করা হচ্ছে বলে দলটির সূত্রে জানা গেছে।বিএনপির স্পষ্ট বার্তা, জয়ের ব্যাপারে কোথাও ন্যূনতম ছাড় দিতে রাজি নয় দলটি। বহিষ্কৃত নেতাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া নির্বাচনী কৌশল মনে করছেন দলটির নেতারা।দলের সূত্রে জানা যায়, মান-অভিমান ভুলে পদবঞ্চিত ও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়া নেতাদেরও ধানের শীষ মার্কাটি তুলে দিচ্ছে দলটির হাইকমান্ড। মূলত দলের জন্য ত্যাগ, নিষ্ঠা ও জনপ্রিয়তাসহ মাঠের নানা বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে মনোনয়ন দিয়েছে দেশের প্রধান এই গণতান্ত্রিক দলটি। পদ স্থগিত-বহিষ্কারাদেশ অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের মনোনয়ন পাওয়ার তালিকায় আছেন খুলনা-২ আসনের নজরুল ইসলাম মঞ্জু, ময়মনসিংহ-৬-এ ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, পিরোজপুর-৩ আসনে রুহুল আমিন দুলাল, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। দলীয় আস্থা ও মূল্যায়ন পেয়ে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এসব প্রার্থী।খুলনা-২ আসনের মনোনীত বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু দক্ষিণ বঙ্গের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে ২০২১ সালে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তখন মঞ্জু ছিলেন খুলনা বিভাগের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। তার পরিবর্তে সহ-সাংগাঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্বে থাকা অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।সূত্রে জানা যায়, দেশের রাজনীতিতে খুলনা সবসময় আলোচিত। দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই অঞ্চল। এমন প্রেক্ষাপটে মঞ্জুর ফেরত আসা দলীয় রাজনীতিতে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত চার বছর পদবিহীন থাকলেও মাঠে ছিলেন সক্রিয়, নিজস্ব ব্যানারে নিয়মিত আয়োজন করেছেন রাজনৈতিক কর্মসূচি। দীর্ঘ বিরতির পর আবারও খুলনা-২ আসনে প্রার্থী মনোনীত হয়ে মঞ্জু বলেন, দল আমার ওপর যে আস্থা রেখেছে, জনগণকে সঙ্গে নিয়েই তা রক্ষা করতে চাই। খুলনা বিএনপি ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকলে জয় সুনিশ্চিত।তিনি আরও বলেন, দলের মধ্যে যে দূরত্ব ছিলো তা মনোনয়ন ঘোষণার মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয়েছে। আমরা সবাইকে নিয়েই ঐক্যবদ্ধ থেকে ধানের শীষের প্রতীকের জন্য লড়াই করবো। উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মঞ্জু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।এদিকে ময়মনসিংহ-৬ আসন থেকে বিএনপির সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু। যদিও ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের নানা অভিযোগে দল থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। ফখরুদ্দিন আহমেদ ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ছিলেন। তবে ভোটের মাঠে শক্ত অবস্থান, জনপ্রিয়তা এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে ত্যাগ ও নির্যাতনের শিকার এই নেতা শেষ পর্যায়ে এসে দলীয় মনোনয়ন পান। এর আগে চলতি বছরের ২৪ অক্টোবর বাচ্চুর বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে বিএনপি।এ ব্যাপারে ফখরুদ্দিন আহমেদ বাচ্চু বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে এলাকায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছি। দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছি। দল আমাকে মনোনীত করেছে। আশা করছি, দলমত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের প্রতীক জয়লাভ করাবো।পিরোজপুর-৩ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী রুহুল আমিন দুলাল। আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে গত বছর প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রুহুল আমিন দুলালকে। তবে একাধিক জরিপে দলের সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে দুলালের নাম উঠে আসে। এছাড়া স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও তার বড় অবদান ছিল। প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে জয় পেতে তাই দুলালের উপরই ভরসা রেখেছে বিএনপি।কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে একাধিকবার আলোচিত-সমালোচিত অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। চলতি বছরের ২৬ আগস্ট জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে ‘কুরুচিপূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য’ দেওয়ায় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ফজলুর রহমানের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলীয় সব ধরনের পদ তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়।দলীয় সিদ্ধান্তে বলা হয়েছিল, ফজলুর রহমান এখন থেকে টক শো কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো বক্তব্য দেওয়ার সময় যেন দেশের মর্যাদা ও দলের নীতিমালা ক্ষুণ্ন না হয় এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না লাগে, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে। নানা বিচার-বিশ্লেষণে এই আসনেও জয় নিশ্চিত করতে ফজলুর রহমানের উপরই ভরসা বেখেছে বিএনপি।ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বহিষ্কৃত এবং অব্যাহতি দেওয়া নেতাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (বীরবিক্রম) বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেকটা চ্যালেঞ্জের মোখোমুখি হতে হবে। তাই যারাই এলাকায় গ্রহণযোগ্য এবং জনপ্রিয় তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, সামনের চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনে জয়ের সম্ভাবনা যার বেশি, যে প্রার্থী নিজের যোগ্যতায় নির্বাচিত হতে পারবেন, এ ধরনের প্রার্থীকেই বিএনপি দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ বহিষ্কৃত ছিল। তবে আসন যাতে হাতছাড়া না হয় এবং আগামীতে দলকে আরও শক্তিশালী করার জন্য তাদের দলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মনোনয়ন দেওয়া ছাড়াও পদ স্থগিত বা অব্যাহতি পাওয়া অনেককে এরইমধ্যে স্বপদে বহাল করা হয়েছে।ভোরের আকাশ/এসএইচ
এবারের নির্বাচন যদি ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের মতো হয়, তাহলে জাতির ভাগ্যে চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার।শনিবার (১৫ নভেম্বর) সকাল সোয়া ৯টার দিকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার উদ্বোধনকালে খুলনার জিরো পয়েন্টের পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে জামায়াত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আপনারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুন এবং আগামী নির্বাচনকে স্বচ্ছ করুন। প্রত্যেক প্রার্থী যেন নির্বাচনী কার্যক্রমে সমান সুযোগ পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।তিনি অতীতে দলীয় আনুগত্য দেখিয়ে কাজ করা কর্মকর্তাদের পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, অতীতে যারা কোনো বিশেষ দলের পক্ষে কাজ করেছে, সেই ওসি, এসপিরা সবাই পালিয়ে গেছে এবং তাদের এখন ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে হচ্ছে। প্রধান বিচারপতি, বায়তুল মোকাররমের খতিব, ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার—অনেকেই পালিয়ে গেছেন। ওসিরা চাকরি ছেড়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চলে গেছেন।মিয়া গোলাম পরওয়ার নির্বাচনকে ‘কালো টাকার প্রভাবমুক্ত’ রাখার আহ্বান জানান। তিনি দাবি করেন, জনগণ এবার অতীতে যারা ‘ঘের দখল করেছে, মন্দির ভেঙেছে’, তাদের প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিয়ে শান্তিতে থাকার জন্য ‘দাঁড়িপাল্লায়’ (জামায়াতের অতীতের নির্বাচনী প্রতীক) ভোট দেওয়ার শপথ নিয়েছে।দেশের বিগত ৫৪ বছরের শাসনামলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নৌকা, লাঙ্গল, ধানের শীষ—অনেক দল ও মার্কাই দেখেছি। প্রতিটি শাসনেই দুর্নীতি হয়েছে, লুটপাট হয়েছে, এবং ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সমস্যার সমাধান হয়নি।খুলনার জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু হওয়া বিশাল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাটি গুটুদিয়া, ডুমুরিয়া, খর্ণিয়া, চুকনগর, আঠারোমাইল, রুদাঘরা, রঘুনাথপুর, শাহপুর, ধামালিয়া, জামিরা, ফুলতলা ও দামোদর হয়ে শিরোমনি শহীদ মিনার চত্বরে গিয়ে সংক্ষিপ্ত পথসভার মধ্য দিয়ে শেষ হয়। খুলনার জিরো পয়েন্টের পথ সভায় সভাপতিত্ব করেন হরিণটানা থানা আমির জিএম আব্দুল গফুর।ভোরের আকাশ/এসএইচ