সৌদির ‘মাসার নুসুক’ সিস্টেমে সমস্যা, ভিসা পেতে ভোগান্তি
হজ ও ওমরাহ পালনকারী মুসলমানদের ভিসা আবেদন, হোটেল বুকিং, পরিবহন, গাইড, অনুমতি এবং অন্যান্য সেবার জন্য তৈরি করা সৌদি আরব সরকারের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও অ্যাপ সিস্টেমে জটিলতা দেখা দেয়ায়’ ভিসা পেতে ভোগান্তিতে পরেছেন হজে যেতে ইচ্ছুক মানুষেরা।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত বরাবর এক চিঠিতে এ কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ হজ অফিস।
চিঠিতে বলা হয়, সৌদি সরকারের হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয় পরিচালিত মাসার নুসুক প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন সমস্যার কারণে হজযাত্রীদের ভিসা প্রাপ্তিতে বিলম্ব হচ্ছে। ভিসা প্রসেস করার পরে ৮/১০ দিন পর্যন্ত আন্ডার প্রসেসিং হিসেবে রয়েছে। ফলে সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনার ৪০০ এর অধিক ভিসা বিভিন্ন ধাপে আটকে আছে। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে এ সব হজযাত্রীদের ফ্লাইট। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভিসা পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট ফ্লাইটে আসা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে মদিনায় হোটেল বুকিং না পাওয়াসহ নানাবিধ সমস্যা তৈরি হবে এমনকি টিকিট বাতিল হয়ে যাবে। ফলে নতুন করে টিকিট কিনতে হবে এবং সে অনুযায়ী মদিনায় হোটেল ভাড়া করে মদিনা জিয়ারার ব্যবস্থা করতে হবে।
জরুরি গুরুত্বের সাথে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,এ বিষয়ে সৌদি হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয়ে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু সমাধানের গতি খুবই ধীর। ফলে হজযাত্রীসহ এজেন্সি মালিকরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। সার্বিক অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে এ সমস্যার সমাধান হওয়া প্রয়োজন। অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, জরুরি ভিত্তিতে সৌদি সরকারের হজ ও ওমরা মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করে সমাধানের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।
ভোরের আকাশ/এসআই
সংশ্লিষ্ট
হজ ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের একটি। একজন মুসলমানের জীবনে হজের সফর কেবলমাত্র একটি ভ্রমণ নয়—বরং আত্মিক, নৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের এক মহাসুযোগ। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, ‘আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দিন, তারা আপনার কাছে আসবে... যাতে তারা তাদের জন্য নির্ধারিত কল্যাণ প্রত্যক্ষ করতে পারে।’ (সুরা হজ: ২৭-২৮)।হজ পালন শেষে হাজিদের জীবন কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে আলোচনায় ইসলামic পণ্ডিত ও ধর্মবিশারদরা তুলে ধরেছেন কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক। আসুন জেনে নিই হজ-পরবর্তী জীবন কীভাবে পরিচালিত হওয়া উচিত:নবজাতকের মতো পাপমুক্ত জীবনবুখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত, হজের মাধ্যমে হাজিরা ফিরেন মা–এর গর্ভ থেকে সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে। এ অর্জনকে ধরে রাখতে দরকার পাপ ও অপকর্ম থেকে দূরে থাকা।জান্নাতের আশ্বাসরাসুল (সা.) বলেছেন, “যে হজ মাকবুল হয়, তার একমাত্র প্রতিদান হলো জান্নাত” (বুখারি: ১৭৭৩)। অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শুদ্ধ মনে হজ পালনকারী জান্নাতের উপযুক্ত হন।অফুরন্ত সওয়াবের ভাণ্ডারহজের প্রতিটি কাজ—তওয়াফ, সাঈ, আরাফাতে অবস্থান, হজরে আসওয়াদ স্পর্শ, এমনকি প্রতিটি কদমেও রয়েছে আলাদা সওয়াব। এমনকি জমজম পানির মধ্যেও রয়েছে শিফা।আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সংযমের প্রশিক্ষণইহরামের সময় অনেক বৈধ কাজ থেকেও বিরত থাকতে হয়, যা আত্মনিয়ন্ত্রণের বাস্তব অনুশীলন। এ অভ্যাস হজ-পরবর্তী জীবনেও সহায়ক হতে পারে দুনিয়ার মোহ কাটিয়ে পরকালমুখী হতে।মৃত্যুর প্রস্তুতির মানসিকতাহজের সময় কাফনের মতো সাদা ইহরাম পরিধান করা মানুষকে মনে করিয়ে দেয় মৃত্যু ও আল্লাহর দরবারে উপস্থিতির প্রস্তুতি নিতে।হজ-পরবর্তী জীবনে করণীয়🔸পাপ ও অশ্লীলতা থেকে দূরে থাকাকোরআনে বলা হয়েছে, ‘হজের সময় ও পরে গালাগালি, পাপ ও কলহ থেকে বিরত থাকো।’ (বাকারা: ১৯৭)🔸আল্লাহর জিকির ও কৃতজ্ঞতাহজে ফিরে বেশি বেশি আল্লাহর স্মরণ ও তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। কোরআন বলে, ‘হজ শেষে আল্লাহকে স্মরণ করো, যেমনিভাবে বাবা-দাদাকে স্মরণ করো—বরং আরও বেশি।’ (বাকারা: ২০০)🔸প্রদর্শনেচ্ছা পরিহারকেউ কেউ হজ করে ফেরার পর নামের সঙ্গে ‘হাজি’ যুক্ত করে তা ফলাও করে জানাতে চান। অথচ রাসুল (সা.) বলেন, “হে আল্লাহ! এ এমন হজ, যাতে নেই কোনো প্রদর্শনেচ্ছা।” (ইবন মাজাহ: ২৮৯০)🔸আখেরাতমুখী জীবনধারা গড়ে তোলাহজ কবুলের আলামত হলো, দুনিয়াবিমুখ হয়ে আখেরাতের প্রতি আগ্রহী হওয়া। আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের আশা বুকে লালন করা।🔸পাপ থেকে ফিরে আসা ও জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনাইমাম গাজালি (রহ.) বলেন, হজের পর হাজি যদি তার আগের পাপপরায়ণ জীবন ত্যাগ করেন, অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করে সৎ সঙ্গ গ্রহণ করেন, গানবাজনা ছাড়েন এবং দ্বিনি মজলিসে শরিক হতে শুরু করেন, তবে তা হজ কবুলের একটি লক্ষণ।উপসংহারহজ যেন কেবল স্মৃতি না হয়, বরং জীবনের গতিধারায় স্থায়ী প্রভাব ফেলে, সেটাই ইসলামের দাবি। যে হজ মানুষকে আল্লাহর সান্নিধ্যে নিয়ে যায়, সে হজের প্রতিফলন হাজির জীবনেও ফুটে উঠা উচিত—ভাষা, আচার, পোশাক, বন্ধুবান্ধব, সমাজ ও আত্মিক আচরণে। শুধু তখনই হজ হবে বাস্তব অর্থে মাকবুল হজ।ভোরের আকাশ//হ.র
হজ শেষে দেশে আসা হাজির সংখ্যা ২০ হাজার ৫০০ জন। এর মধ্যে সরকারি মাধ্যমে আসা হাজির সংখ্যা ২ হাজার ৯২৪ জন। বেসরকারি মাধ্যমে আসা হাজির সংখ্যা ১৭ হাজার ৫৭৬ জন। শনিবার (১৪ জুন) হজ বুলেটিন থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ফেরা হাজিদের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিবহন করেছে ৬ হাজার ২০৭ জন। এছাড়া সৌদি এয়ারলাইন্স পরিবহন করেছে ৭ হাজার ৮৭৩ জন এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স পরিবহন করেছে ৬ হাজার ৪২০ জন। এখন পর্যন্ত মোট ফিরতি ফ্লাইট সংখ্যা ৫২টি। এরমধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিচালিত ফ্লাইট সংখ্যা ১৬টি। আর সৌদি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করেছে ২০টি এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করেছে ১৬টি।এদিকে বাংলাদেশ থেকে হজ করতে গিয়ে সৌদিতে এখন পর্যন্ত মারা ২৯ জন। গত শুক্রবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ছিল ২৭। শনিবার (১৪ জুন) আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে পুরুষ ২৫ এবং নারী ৪ জন।প্রসঙ্গত, এবছর হজ অনুষ্ঠিত হয় ৫ জুন। হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রার প্রথম ফ্লাইট ছিল ২৯ এপ্রিল আর হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রার শেষ ফ্লাইট ছিল ৩১ মে। ১০ জুলাই পর্যন্ত চলবে ফিরতি হজের ফ্লাইট। বাংলাদেশ থেকে এ বছর ৮৭ হাজার ১৫৭ জন হজ পালন করেছেন।ভোরের আকাশ/জাআ
পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবে রোকেয়া বেগম (৬২) নামে আরেকজন বাংলাদেশি হাজির মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে হজপালনে গিয়ে এখন পর্যন্ত ২৯ বাংলাদেশি মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের মধ্যে ২৫ জন পুরুষ ও ৪ জন নারী।রোববার (১৫ জুন) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টালের মৃত্যু সংবাদে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে, শনিবার (১৪ জুন) মক্কায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রোকেয়া বেগমের মৃত্যু হয়। তার বাড়ি বড়গুনা জেলার সদর উপজেলায়। চলতি বছর বাংলাদেশি হাজিদের মধ্যে মক্কায় ১৯ জনের, মদিনায় ৯ ও আরাফায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টাল সূত্রে জানা যায়, এ বছর হজে গিয়ে গত ২৯ এপ্রিল প্রথম মারা যান রাজবাড়ীর পাংশার মো. খলিলুর রহমান (৭০)। এরপর ২ মে মারা যান কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের মো. ফরিদুজ্জামান (৫৭), ৫ মে মারা যান পঞ্চগড় সদরের আল হামিদা বানু (৫৮), ৭ মে মারা যান ঢাকার মোহাম্মদপুরের মো. শাহজাহান কবির (৬০) এবং ৯ মে মারা যান জামালপুরের বকশিগঞ্জের হাফেজ উদ্দিন (৭৩), ১০ মে মারা যান নীলফামারী সদরের বয়েজ উদ্দিন (৭২), ১৪ মে মারা যান চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মো. অহিদুর রহমান (৭২), ১৭ মে মারা যান গাজীপুর সদরের মো. জয়নাল হোসেন (৬১), ১৯ মে মারা যান চাঁদপুরের মতলবের আ. হান্নান মোল্লা (৬৩) ও ২৪ মে রংপুরের পীরগঞ্জের মো. সাহেব উদ্দিন।এ ছাড়া ২৫ মে মারা গেছেন চাঁদপুরের কচুয়ার বশির হোসাইন (৭৪), ২৭ মে মারা যান চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের শাহাদাত হোসেন, ২৯ মে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মো. মোস্তাফিজুর রহমান(৫৩), একই দিন মাদারীপুর সদরের মোজলেম হাওলাদার (৬৩), গাজীপুরের টঙ্গীর পূর্ব থানার আবুল কালাম আজাদ (৬২), গত ১ জুন মারা যান, গাজীপুরের পুবাইলের মো. মফিজ উদ্দিন দেওয়ান (৬০) ও নীলফামারীর সৈয়দপুরের মো. জাহিদুল ইসলাম (৫৯), ৫ জুন মারা যান ঢাকার কেরানীগঞ্জের মনোয়ারা বেগম মুনিয়া, ৬ জুন খুলনার বটিয়াঘাটা এলাকার শেখ মো. ইমারুল ইসলাম, ৭ জুন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ির মো. মুজিব উল্যা, ৯ জুন মারা যান গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরের এ টি এম খায়রুল বাসার মন্ডল, ১০ জুন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার গোলাম মোস্তফা, ১২ জুন লালমনিরহাট পাটগ্রামের আমির হামজা, ময়মনসিংহের কোতয়ালি এলাকার মো. মনিরুজ্জামান (৬৬), নোয়াখালীর চাটখিল এলাকার খাতিজা বেগম (৪১) ও ঢাকার আদাবর এলাকার এ এস এম হায়দারুজ্জামান (৬০)।ভোরের আকাশ/জাআ
ওমরাহ ভিসা প্রক্রিয়া, হোটেল বুকিং ও যাতায়াত সংক্রান্ত নীতিমালায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। ১৪৪৭ হিজরি ওমরাহ মৌসুম থেকে এই নতুন বিধিনিষেধ কার্যকর হতে যাচ্ছে। নতুন নিয়ম না মানলে সংশ্লিষ্ট ওমরাহ এজেন্সি বা কোম্পানির লাইসেন্স স্থায়ীভাবে বাতিল হওয়ার পাশাপাশি আরোপ হতে পারে মোটা অঙ্কের জরিমানা।মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, ভিসা ইস্যুর পূর্বেই অনুমোদিত হোটেল ও যাতায়াতের ব্যবস্থা মন্ত্রণালয়ের ইলেকট্রনিক পোর্টালের মাধ্যমে বাধ্যতামূলকভাবে বুক করতে হবে। হাজিদের চলাচল ও আবাসন-সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য নির্ভুলভাবে সিস্টেমে রেকর্ড করতে হবে এবং তা বাস্তবের সঙ্গে মিল থাকতে হবে।হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হাজিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হোটেল পরিদর্শন করা হবে। একইসঙ্গে শহরের মধ্যে যাত্রীদের যাতায়াতও নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকবে।এই নতুন ব্যবস্থার ফলে ভিসা পেতে খরচ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। কেননা এখন থেকে শুধু অনুমোদিত হোটেলেই বুকিং ও অবস্থান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তদুপরি, যেসব কোম্পানির অনুমোদিত হোটেলের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে, কেবল তারাই ওমরাহ ভিসা ইস্যু করতে পারবে। এতে ছোট এজেন্সিগুলোর ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।মন্ত্রণালয় কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছে, নির্দেশনা লঙ্ঘন করলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করা হতে পারে। সেই সঙ্গে গুণতে হতে পারে বিপুল অঙ্কের আর্থিক জরিমানা এবং ভবিষ্যতে ওমরাহ ভিসা ইস্যুর অনুমতিও বাতিল হতে পারে।ভোরের আকাশ।।হ.র