-->
শিরোনাম
দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজার

নেগেটিভ সনদ হয়ে যায় পজিটিভ

* কোরিয়ায় যাওয়ার আগে করতে হয় তিনবার পরীক্ষা * বাতিল করা হয় ২ মার্চের ফ্লাইট * ১১৩ জনের মধ্যে পজিটিভ ৩ জন * এখন পর্যন্ত গেছেন ৪৫১ জন

তরিকুল ইসলাম
নেগেটিভ সনদ হয়ে যায় পজিটিভ
বোয়েসেলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, পর্যায়ক্রমে তিনবার করোনা টেস্টে নেগেটিভ হয়েও গত ৯ ফেব্রুয়ারি ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে বেশকিছু কর্মী কোরিয়ায় প্রবেশের পর করোনা টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন।

চলতি বছরে এখন পর্যন্ত দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজারে প্রবেশ করেছেন ৪৫১ জন দক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিক। বাংলাদেশ থেকে করোনা পরীক্ষার নেগেটিভ সনদ নিয়ে গেলেও কোরিয়ার বিমানবন্দরে পুনর্পরীক্ষায় হয়ে যায় করোনা পজিটিভ। বাতিল করা হয় ২ মার্চের ফ্লাইট। একই কারণে এর আগে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়া বন্ধ করে দেয় দেশটি। দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে আবারো তৈরি হয়েছে শঙ্কা।

চলতি বছরে পাঁচ দফায় ৪৫১ জন কর্মী দেশটিতে প্রবেশ করেছেন। এর মধ্যে প্রথম দফায় ৫ জানুয়ারি ৯২ জন, দ্বিতীয় দফায় ১৯ জানুয়ারি ৩৮ জন, তৃতীয় দফায় ৯ ফেব্রুয়ারি ৯৮ জন, চতুর্থ দফায় ১৬ ফেব্রুয়ারি ১১০ জন এবং পঞ্চম দফায় সর্বশেষ ৯ মার্চ ১১৩ জন দেশটিতে গেছেন। গতকাল রোববার দৈনিক ভোরের আকাশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল), সিউলস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাস।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোয়েসেলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, পর্যায়ক্রমে তিনবার করোনা টেস্টে নেগেটিভ হয়েও গত ৯ ফেব্রুয়ারি ও ১৬ ফেব্রুয়ারিতে বেশকিছু কর্মী কোরিয়ায় প্রবেশের পর করোনা টেস্টে পজিটিভ হয়েছেন। এর মধ্যে সর্বশেষ ৯ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে যাওয়া ১১৩ জনের মধ্যে ৩ জন করোনা পজিটিভ হন। ফলে চলমান ফ্লাইট বন্ধের আশঙ্কা হয়েছিল।

দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, করোনা মহামারির শুরুতে বাংলাদেশের ওপর প্রথম দফায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দেশটি। সে সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের বহু চেষ্টার পর একবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে কর্মীদের সঠিকভাবে করোনা পরীক্ষার কথা জানিয়েছিল দূতাবাস এবং তারপরও ঝুঁঁকি এড়ানো সম্ভব হয়নি।

গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত প্রবেশ করা ৩৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর ১৬ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশ থেকে ইপিএস কর্মীদের প্রবেশ আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। কর্মীদের ওপর দক্ষিণ কোরিয়া সরকার কর্তৃক আরোপিত ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য সর্বশেষ গত বছরের ২৩ আগস্ট কোরিয়ার হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট অব কোরিয়ার (এইচআরডি কোরিয়া) প্রেসিডেন্ট ও মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠক করেন তৎকালীন রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম। এর পর গত ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় দেশটি।

বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল) সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ১১১ জন দক্ষ কর্মী পাঠানোর মাধ্যমে কোরিয়ার শ্রমবাজারে নতুন করে প্রবেশ করেছিল বাংলাদেশ। এরপর কয়েক দফায় দেশটিতে ফিরে গেছেন নতুন ও পুনর্প্রবেশ মিলিয়ে ৯৫২ জন এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) কর্মী। ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার দূতাবাস বলছে, যদিও এই হিসাবের বাইরে দেশটিতে উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষার্থী, নিজস্ব ব্যবসা পরিচলনাকারী ও অন্যরাও কিছু সংখ্যায় ফিরে গেছেন।

বোয়েসেল সূত্র বলছে, বিশেষ করে করোনার আগে ও পড়ে দেশটি থেকে যেসব এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) কর্মীরা ছুটিতে দেশে এসেছিলেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে গত দুই বছরে ফিরতে পারেননি তারা। আটকেপড়া এমন দক্ষ কর্মীদের সংখ্যাটা হাজারের কাছাকাছি এবং নতুন করে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় দুই হাজার ইপিএস কর্মী।

ঢাকায় দাক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং কিউন এর আগে ভোরের আকাশকে বলেন, ‘মহামারির শুরু থেকেই আমরা বেশ সতর্ক ছিলাম এবং এখনো সেটি বজায় রেখেছে দক্ষিণ কোরিয়া। ভিসা নিষেধাজ্ঞা ছিল বাড়তি সতর্কতার অংশ। এটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই যে হয়েছে, এমন নয়। আমরা আশা করছি বাংলাদেশ এখন তার কর্মী পাঠাতে আরো সতর্কতা অবলম্বন করবে। যাতে করে এটি উভয় দেশের জন্যই বেশ সক্রিয়তা বজায় থাকে।’

এমপ্লয়মেন্ট পারমিট সিস্টেম (ইপিএস) কর্মীরা উভয় দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের ওপর নির্ভর করছে কোরিয়ার শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো, যেখানে তারা সবাই দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাস জানায়, দেশটিতে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। উল্লেখযোগ্য অংশ যাদের সবাই উচ্চ শিক্ষিত, প্রশিক্ষিত ও ভালো বেতনে চাকরি করছেন। এর মধ্যে কোরিয়ায় উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য কিছু শিক্ষার্থীও রয়েছেন।

মন্তব্য

Beta version