-->

নতুন বছরে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রত্যাশা

ড. আলাউদ্দিন
ড. আলাউদ্দিন
নতুন বছরে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রত্যাশা
ড. আলাউদ্দিন

ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা! সবার মনে জাগুক আশা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রত্যাশা! সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও বিজয়ের অর্ধশতক তথা সুবর্ণজয়ন্তী আনন্দ ও অর্জনের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন করেছে। একইসাথে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষও যথাযথ মর্যাদার সাথে পালিত হয়েছে। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে একযোগে শপথ পরিচালনা করেছেন। দেশের সবাই প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে নতুন বাংলাদেশ সৃজনের-যে বাংলাদেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক। অর্থাৎ ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে জাতির জনকের নীতি ও আদর্শের আলোকে-তাঁর ‘সোনার বাংলা’র অভিমুখে।

গত অর্ধশতকে মানবতা ও অর্থনীতিসহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ আর ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’নয়, বরং মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার। বহিরাঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান ও নেতৃত্বও এখন সম্মানজনক। এখন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত যখন বিশ্বব্যাপী বিদ্যমান ধর্মীয় সংঘাত বিমোচনে ধর্মীয় স্বাধীনতা বা ধর্মীয় বহুত্ববাদের কথা অনেক বেশি আলোচিত এবং এশিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যখন কি না বঙ্গবন্ধু প্রণীত সেক্যুলারিমের প্রাসঙ্গিকতা অনেক বেশি উচ্চারিত হচ্ছে, তখন বাংলাদেশে এখনো বিরাজমান অসঙ্গতিগুলো দূরীকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক। উল্লেখ্য, বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে (২০২০) বিশ্ব এবং বিশেষ করে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার বাস্তবতায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং নির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশি সেক্যুলারিম অনুসরণের ওপর সমধিক গুরুত্ব প্রদান করেছেন। এ অবস্থায় ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্গত রাষ্ট্রীয় নীতিমালাগুলো যথাযথ বাস্তবায়নের দিকে আন্তরিক গুরুত্বারোপ আবশ্যক। রাষ্ট্রীয় চারটি নীতিমালার বিশেষত্ব সেগুলোর কোনো একটিকে বাদ দিয়ে বা কম গুরুত্ব দিয়ে বাকি নীতিমালার বাস্তবায়ন সম্ভব নয় এবং সে পদক্ষেপ সফল হবে না। তাই গণতন্ত্র বাস্তবায়ন করতে হলে যেমনি সেক্যুলারিম ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ প্রয়োজন, যেমনি সামাজিক ন্যায্যতার জন্য প্রয়োজন সমাজতন্ত্র। সুতরাং চার রাষ্ট্রীয় নীতির যথাযথ বাস্তবায়ন ছাড়া বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্যও তেমনই গণতন্ত্র অপরিহার্য। অথচ কোনোটির বাস্তবায়নই বাংলাদেশের সমাজ, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বাস্তবতায় কঠিন বা অসম্ভব নয়। কারণ বঙ্গবন্ধু চার মূলনীতির কোনোটিই বস্তুত অন্য কোনো দেশের আদলে নির্মাণ করেননি; তিনি এই বাংলার গ্রাম-শহর, শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র, হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান তথা সবার প্রাত্যহিক জীবন থেকে নিয়েছেন চার মূলনীতি-এগুলো বাংলার ‘জীবন থেকে নেওয়া’। বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম (প্রায় ৯০ শতাংশ); বাকিরা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, এবং অন্যান্য। কিন্তু সব ধর্মের মানুষ প্রাচীনকাল থেকে, সারা বছর ধরে অনেক ধর্মনিরপেক্ষ উৎসব উদযাপন করে আসছে, যেমন পহেলা বৈশাখ ও একুশে ফেব্রুয়ারি। ঐতিহাসিকভাবে, ধর্মীয় সহনশীলতা এবং ধর্মীয় বহুত্ববাদ এই অঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্য। বঙ্গবন্ধু এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন এবং ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানের ২৫ বছরের শাসনামলে ধর্মের অপপ্রয়োগ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। তাই তিনি গণমানুষের জীবনাভিজ্ঞতা থেকে উপলব্ধি করেছিলেন যে, শুধু ধর্মীয় সম্প্রীতিই পারে বাঙালিকে একটি নতুন অসাম্প্রদায়িক দেশের ঠিকানায় মুক্তি ও শান্তির পথ খুঁজে দিতে। আর তাই তিনি ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনার লক্ষ্যে ধর্মনিরপেক্ষতাকে (সেক্যুলারিজম) চারটি প্রধান রাষ্ট্রীয়নীতির অন্যতম নীতি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। ধর্মনিরপেক্ষতা চারটি মৌলিক নীতির একটি, যা অপরাপর নীতিগুলোর সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কযুক্ত। ধর্মনিরপেক্ষতা একটি অনুভূতি, যা এই অঞ্চলের মানুষের চিরায়ত রূপ এবং ঐতিহ্যগত জীবনবোধ।

ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ বহুবিধ। আক্ষরিক অর্থে সেক্যুলারিজম বা পার্থিবতা বলতে রাষ্ট্রের সাথে ধর্মের বিযুক্ততাকে নির্দেশ করে। পশ্চিমা সমাজ সেক্যুলারিজমকে শিল্পায়ন, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও আধুনিকতার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে বিবেচনা করলেও, সব সমাজের জন্য তা প্রযোজ্য নয়। কারণ এটি ইতিহাস বিরুদ্ধ থিসিস। প্রাচীনকাল থেকে অনেক অঞ্চলে ধর্মীয় বহুত্ববাদ, সহনশীলতা, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। বাংলা অঞ্চলও অনুরূপ, যা বঙ্গবন্ধু তাঁর সারা জীবনের আন্দোলন-সংগ্রাম ও দেশব্যাপী রাজনৈতিক ভ্রমণের মাধ্যমে উপলব্ধি করেছেন।

তাই বাংলাদেশে সেক্যুলারিজম পশ্চিমা মডেল অনুকরণে করা হয়নি। দেশীয় সমাজ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের আদলে প্রণীত সেক্যুলারিজম-এর বাংলা করা হয়েছে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’-যা পশ্চিমা সংস্করণ থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে স্বতন্ত্র। সব ধর্মের প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ মূলত সমান; কোনো পছন্দ বা বঞ্চনা এক্ষেত্রে কার্যকর নয়। সুতরাং, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা পশ্চিমা সেক্যুলারিজম থেকে আক্ষরিক ও প্রায়োগিক দিক থেকে ভিন্নতর এবং তা বাংলাদেশ সমাজ-ঘনিষ্ঠ। ধর্মের দোহাই দিয়ে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর শেখ মুজিব প্রত্যক্ষ করেছেন পাকিস্তানিদের ধর্মীয় ভণ্ডামি। এ কারণে তিনি ধর্মের অপব্যবহার রোধে ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করে রাখার ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ ছিলেন। তবে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি অত্যন্ত উদার ও বাস্তববাদী ছিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনি ইশতেহার ও নির্বাচনি জনসভায়ও তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সম্প্রীতির রাষ্ট্র গড়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। বাঙালির হাজার বছরের সম্প্রীতির বন্ধনকে ধর্মের অপব্যবহারের মাধ্যমে কেউ যেন বিনষ্ট করতে না পারে, সব ধর্মের লোক যেন মিলেমিশে একটা অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ে তোলে, সেটিই ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন।

বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার অন্তর্ভুক্তি প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সেক্যুলারিজমের ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে: সবার আগে আমি বিশ্বাস করি গণতন্ত্র, গণতন্ত্রে বিশ্বাসের সাথে সাথে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, শুধু শোষণমুক্ত সমাজেই গণতন্ত্রের বিকাশ সম্ভব। ঠিক এ জন্যই আমি গণতন্ত্রের সাথে সমাজতন্ত্রের কথা বলি। আমি আরও বিশ্বাস করি যে, বাংলাদেশে যত ধর্ম আছে, তার সবটির সমঅধিকার থাকবে। এর অর্থ আমি বুঝি ধর্মনিরপেক্ষতা, ধর্মপালনের স্বাধীনতা। শেষে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা, তা হলো বাঙালি সংস্কৃতি, ভাষা, কৃষ্টি এবং সমগ্র বাঙালি পরিবেশে অনুপ্রেরণা জোগানোর প্রয়োজনীয়তা। যাকে আমি জাতীয়তাবাদ বলে আখ্যায়িত করি। (সূত্র: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, প্রস্তাবনা)।বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্মনিরপেক্ষতা মানে জনজীবনে ধর্মীয় স্বাধীনতা-যার যার ধর্ম তার তার, বাংলাদেশ সবার। সুতরাং, বাংলাদেশি সেক্যুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা মূলত ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর গুরুত্বারোপ করে। যেমনটা বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে জাতীয় সংসদে এর সংজ্ঞায় উল্লেখ করেছিলেন: সেক্যুলারিজম (ধর্ম নিরপেক্ষতা) মানে ধর্মের অনুপস্থিতি নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে এবং এই রাষ্ট্রের কারোরই তা রোধ করার ক্ষমতা নেই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে এবং তা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কারো নেই। বৌদ্ধ এবং খ্রিস্টানরা তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে এবং কেউই তা রোধ করতে পারবে না। আমাদের একমাত্র আপত্তি হলো ধর্মকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না” (ধর্ম নিরপেক্ষতা,মনিরুজ্জামান, ১৯৯৪ থেকে উদ্ধৃত)। ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রশ্নে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান সবসময় একই রকম ছিল। ১৯৭৫ সালে ধর্ম নিরপেক্ষতার স্বরূপ বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি সংসদে যেমনটা বলেছিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ধর্ম-কর্ম করার অধিকার থাকবে। আমরা আইন করে ধর্মকে বন্ধ করতে চাই না এবং করব না। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, খিস্টানরা তাদের ধর্ম করবে, তাদের কেউ বাধা দিতে পারবে না। কিন্তু ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারবে না। ২৫ বছর আমরা দেখেছি- ধর্মের নামে জুয়াচুরি, শোষণ, অত্যাচার, খুন-এসব চলেছে। ধর্ম অতি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা চলবে না।’

একজন ধর্মনিরপেক্ষ বাঙালি হিসেবে বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন যে ইসলামের ধর্মীয় আদর্শকে ধর্মনিরপেক্ষতার চেতনার মধ্যে বজায় রাখা সম্ভব। তাই তিনি বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানকে জাতীয় সংগীত (‘আমার সোনার বাংলা’) হিসেবে গ্রহণ করেছেন। কাছাকাছি সময়ে তিনি অসুস্থ কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে তাঁর থাকা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। অনেকের ধারণা, বঙ্গবন্ধুর জীবনধারা কাজী নজরুলের কবিতা ও গান দ্বারা প্রভাবিত। বিশেষ করে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনের মূল স্লোগান, জয় বাংলা; নজরুলের কবিতা থেকে উদ্ভূত বলে ধারণা করা হয়। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সকল ধর্মের স্বাধীনতা তথা সমান মর্যাদা নিশ্চিতকল্পে জনসমাজে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে বিভিন্ন ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ থেকে ধর্মীয় বাণী পাঠা করা শুরু হয় তাঁর সময়ে। ফলে, ১৯৭০ এর শুরুর দিকে বাংলাদেশে জাতীয় চেতনাতেও ধর্মীয় বহুত্ববাদ প্রবল ছিল। তাই তো সে সময়কার অন্যতম জনপ্রিয় স্লোগান ছিল: বাংলার হিন্দু বাংলার খ্রিস্টান বাংলার বৌদ্ধ বাংলার মুসলমান, আমরা সবাই বাঙালি।

ধর্মনিরপেক্ষতা সরিয়ে দেয়ার প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর পর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংবিধানে পুনঃস্থাপিত হয়। তবে সময়ান্তরে তা পূর্বের ন্যায় নির্বিঘ্ন নয়, কারণ সমাজে ইতোমধ্যে ধর্মীয় বিভাজন প্রকট রূপ ধারণ করেছে, ‘৭৫ পরবর্তী পটপরিবর্তনের কারণে। তাই এর প্রয়োগ ও অনুশীলনের ক্ষেত্রে ২০১১-২০২১ এর ধর্মনিরপেক্ষতায় ১৯৭০-৭৫ এর ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। ফলে দীর্ঘদিন পর এটিকে পুনরুজ্জীবিত করতে কিছু সমন্বয় ও সংযোজন করতে হয়েছে। ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে অক্ষুণ্ন রাখতে হয়েছে। তবে সকল ধর্মের অধিকার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ধর্মচর্চা সম্পর্কে, বর্তমান সরকার বিশ্বাস করে যে সহনশীলতা ও সহাবস্থান ধর্মীয় দ্বন্দ্ব থেকে দূরে থাকার সর্বোত্তম উপায়। আর তাই, সরকারের মনোভাবে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও বহুত্ববাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ পরিলক্ষিত।

বঙ্গবন্ধুর সেক্যুলার উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র বিরাজ করছে। তাই প্রতিটি ধর্মেরই স্বাধীন ও ন্যায্যভাবে ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। কিন্তু কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা ঠিক নয়। কেউ ধর্ম অবমাননার চেষ্টা করলে তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য বিদ্যমান আইনই যথেষ্ট। এভাবে বর্তমান সময়ে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও আদর্শের উত্তরাধিকার বিরাজমান।

তারপরও বাংলাদেশে এখনো বিক্ষিপ্তভাবে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সংঘটিত হয়। কারণ, কেবল আইন দিয়ে ধর্মীয় বিদ্বেষ বা সংঘাত দূর করা যায় না। সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা ধর্মীয় বিদ্বেষ দূর করতে হলে, সমাজে ইতোমধ্যে গ্রোথিত ধর্মীয় বিভাজন ও ধর্মের অপপ্রয়োগ বা রাজনৈতিক ব্যবহার দূর করার জন্য সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সকল স্তরে-শিক্ষা, কর্মস্থল, সর্বত্র। এজন্য বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমতাভিত্তিক সোনার বাংলা গড়ার জন্য সেক্যুলারিজম ও গণতন্ত্রসহ চার রাষ্ট্রীয় নীতির যথাযথ প্রয়োগ অপরিহার্য।

বাংলাদেশ তার স্বাধীনতা ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী অতিক্রম করে এক শতকের দ্বিতীয়ার্ধে পা দিয়ে আর পেছনের দিকে ফিরে যেতে পারে না। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে সাম্প্রতিক সম্প্রীতির প্রাগ্রসর বাংলাদেশই এখন একমাত্র লক্ষ্য। লেখক : অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য

Beta version