তামান্নাকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন: জনগণের আস্থার মুকুটে নতুন পালক

খালেদ ফারুকী
খালেদ ফারুকী
তামান্নাকে প্রধানমন্ত্রীর ফোন: জনগণের আস্থার মুকুটে নতুন পালক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

আবারও দেশবাসীকে আশ্বস্ত করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপাতদৃষ্টিতে ছোট মনে হলেও ব্যাপারটি ছোট নয়। বেশ বড়ই। পা দিয়ে লিখে এইচএসসিতে জিপিএ ফাইভ পাওয়া মেধাবী ছাত্রী তামান্নাকে প্রধানমন্ত্রী ফোন করেছেন, পাশে থাকার নিশ্চয়তা দিয়েছেন। আবারও প্রমাণ করেছেন, তিনি মানবতার জননী, দায়িত্বশীল অভিভাবক, জনগণের অনেক কাছের বন্ধু। শুধু তিনিই নন, তামান্নাকে ফোন দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অপর কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা। নানা দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ফোনটি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার। ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিট। পড়াশোনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন প্রতিবন্ধী তামান্না আক্তার নূরা। হঠাৎ তামান্নার ফোন সেটে ফোন। রিসিভ করতেই ওপাশের কণ্ঠস্বর ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছিলাম। আমি কি তামান্নার সঙ্গে কথা বলছি?’

ফোনের ওপাশের কণ্ঠস্বর শুনে ঘাবড়ে যান তামান্না। চেনা ও আকাঙ্ক্ষিত কণ্ঠ শুনে বিস্ময়ের ঘোর কাটে না তার।

ক্ষণিকের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন, তারপর কাঁদতে থাকেন অঝোরে।

স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ফোন করেছেন তাকে, এ যেন স্বপ্ন, কল্পনার অতীত।

অভিনন্দন জানিয়ে তামান্নাকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তুমি কাঁদছো কেন? কান্না থামাও।’

কান্না থামিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সালাম দেন তামান্না।

এরপর তাদের সংক্ষিপ্ত কথোপকথন।

অ্যান্ড্রয়েড ফোন সেটে চার মিনিটের ওই কথোপকথনে তামান্নাকে একাধিকবার সাহস হারাতে নিষেধ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘সাহস হারাবে না। সাহস আর মনোবল থাকলে তুমি অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে।’

এ সময় তামান্না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা এবং তার স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীকে পাশে চান বলে জানান। প্রধানমন্ত্রী তার স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকার আশ্বাস দেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থী তামান্নাকে ‘বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে’ আবেদন করতে বলেন। এই ট্রাস্টের মাধ্যমে তামান্নাকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করা তামান্নার এইচএসসিতে সাফল্য মিরাকলের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সব বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে তিনি উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করে ডিসিকে চিঠি দিয়েছেন। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই আগ্রহের প্রতি সাড়া দিয়ে দ্রুত তাকে ফোন করে যথেষ্ট প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন। প্রথমত, তিনি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন, তিনি সত্যিকারের জনগণের নেত্রী। জনগণ চাইলেই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। যে কোনো দেশে প্রধানমন্ত্রীর এ আচরণ গণতন্ত্র চর্চাকে মহিমান্বিত করে। দুই হাত ও এক পা ছাড়া জন্ম নিয়ে তামান্না পাবলিক পরীক্ষায় যে সাফল্য দেখিয়েছেন, তা মূল্যায়নের দাবি রাখে জাতীয়ভাবে। আর প্রধানমন্ত্রীর এই ফোনে পূরণ হয়েছে যথাযথভাবেই।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার প্রধান হিসেবে এই দায়িত্ব পালন করে জনগণের আস্থা ও অহংকারে নিশ্চয় নতুন পালক যোগ করেছেন। আর বিশ্বব্যাপী তিনি তো মানবতার জননী। দেশবাসী আরো আশস্ত হবে, শুধু রোহিঙ্গা ইস্যুতে নয়, জনগণের জন্যও সমানভাবে প্রয়োজ্য তার এই বিশেষভাবে বিশেষায়িত এই বিশেষণটি।

তামান্না আক্তার নূরা

 

প্রধানমন্ত্রী মানবতার জননী, তাই ২০১৭ সালে মিয়ানমারে গণহত্যার সময়ে তিনি লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে এদেশে আশ্রয় দেন। দেশবাসীকে করোনার হাত থেকে রক্ষা করতে সবার আগে নিয়েছেন ভ্যাকসিন পাওয়ার ব্যবস্থা যে কারণে উন্নত বিশ্বের প্রায় কাছাকাছি সময়েই ভ্যাকসিন পাওয়া শুরু করে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এজন্য তাকে উপাধি দিয়েছে ‘ভ্যাকসিন হিরো’। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশে অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়নমন্ত্রী মেরি ক্লড বিবেউ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ডেকেছেন ‘নারী অধিকারের স্তম্ভ’ হিসেবে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস স্টাডিস বিভাগের তিন শিক্ষক ডেকেছেন সম্বোধন করেছেন ‘বিশ্ব শান্তির দূত’ হিসেবে। নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যর্থী প্রধানমন্ত্রীকে দেখেন ‘বিশ্ব মানবতার আলোকবর্তিকা’ হিসেবে। এ সবই এদেশের জনগণকে গৌরবান্বিত করে।

দেশের জনগণ স্বপ্ন বোনে, তার বাস্তবায়ন করে সরকার। তামান্না তো আর জনগণের বাইরে কেউ নন। আর সরকার প্রধান হিসেবে জনগণের স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীর এই অঙ্গীকার আবারও জনগণের আস্থাকে মজবুত করলো। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও তার পরিচয় তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। বাংলাদেশ ও এই জাতির প্রতি এই পরিবারের দায়বদ্ধতা একেবারেই অন্য রকম। দায়িত্বশীল পদে কাজ করার সময় ব্যক্তি জীবনে পারিবারিক আচরণের শিক্ষা-দীক্ষাও বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। তা আবারও প্রমাণ হলো বঙ্গবন্ধুর এই দুই তনয়ার দায়িত্বশীল আচরণে। তাই যে কোনো বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার ফোন দেওয়া সাধারণ কোনো ব্যাপার নয়। জাতিকে আস্থায় রাখার ক্ষেত্রে অনেক বড় মাইলফলক।

মন্তব্য