-->
শিরোনাম

চট্টগ্রামে এখন আর পানির হাহাকার নেই

এ কে এম ফজলুল্লাহ
এ কে এম ফজলুল্লাহ
চট্টগ্রামে এখন আর পানির হাহাকার নেই

ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ গত এক যুগ ধরে চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালনকালে তিনি সরকার ও নগরবাসীর আস্থা অর্জন করেছেন। পানি সংকটের সমাধান, চট্টগ্রাম ওয়াসার গুরুত্বপূর্ণ অর্জন, বিভিন্ন সমালোচনা ও তার জবাব ইত্যাদি প্রসঙ্গে ভোরের আকাশকে তিনি একান্ত সাক্ষাৎকার প্রদান করেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি রুবেল খান

ভোরের আকাশ : দীর্ঘ ১২ বছর বা এক যুগ দায়িত্ব পালনকালে চট্টগ্রামের পানি সংকট আপনি কতটা দূর করতে পেরেছেন?

ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ: ১২ বছর আগে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন পুরো চট্টগ্রাম নগরীতে ছিল পানির হাহাকার। পানি না পেয়ে অনেকবার ওয়াসা ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছেন বিক্ষুব্ধ নগরবাসী। এমনকি ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর চড়াও হয়েছেন তারা। এ কারণে ওয়াসা ভবনে নিরাপত্তা জোরদার করতে হয়েছে। তবে এখন আর পানির হাহাকার নেই চট্টগ্রামে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় বিগত ১২ বছরে চারটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি আমরা। এ কারণে চট্টগ্রামবাসীর পানির সংকট দূর হয়েছে।

ভোরের আকাশ : আপনার আমলে পানি সংকটের সমাধানে প্রকল্পগুলোর কাজ কীভাবে শুরু হলো?

ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ : চট্টগ্রাম ওয়াসাতে আমি এমডি হিসেবে যোগ দেই ২০০৯ সালের জুলাই মাসে। তবে দায়িত্ব পালন শুরু হয় আগস্ট মাস থেকে। আমি যখন দায়িত্বভার গ্রহণ করি, তখন চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎপাদন ছিল দৈনিক ১২ থেকে ১৪ কোটি লিটার। তখন নগরবাসীর পানির চাহিদা ছিল প্রায় ৪০ কোটি লিটার। তাই নগরীতে পানির সংকট প্রকট ছিল। প্রতিদিনই চট্টগ্রাম ওয়াসা ভবনে নগরবাসী কখনো লাঠি মিছিল, ঝাড়ু মিছিল, আবার কখনো জুতা মিছিল নিয়ে আসতেন। পানি সংকট এতটাই তীব্র ছিল যে, তখন মানুষ ওয়াসার পানি ধরার জন্য সারারাত জেগে থাকতেন। কোনো এলাকায় সপ্তাহে দু’দিন, কোনো কোনো জায়গায় সপ্তাহে তিন দিন পানি মিলত। ওই সময় বিদ্যুতের বেহাল দশা ছিল। তখন দিনরাত মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১২ ঘণ্টাই লোডশেডিং হতো। এর মধ্যে আমাদের কোনো ডিপ টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে গেলে কোনো কোনো এলাকায় ১৪ দিনে দু’বার এমনকি ২০ দিনে দু’বার পানি পাওয়া যেত। ফলে মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ ছিল। এ সময় বিক্ষুব্ধ মানুষজন যাতে ওয়াসা ভবনে এসে হামলা করতে না পারে সেজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সেনাবাহিনী পর্যন্ত নিয়োজিত করতে হয়েছিল। যার কারণে বছরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওয়াসাকে বাড়তি ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা খরচ করতে হতো।

এমন এক পরিস্থিতিতে আমি দায়িত্বভার গ্রহণ করি, যখন দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম ওয়াসার বড় কোনো প্রকল্পের কাজ স্থগিত ছিল। একটি বড় প্রকল্প হওয়ার কথা ছিল রাঙ্গুনিয়ায়। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সেই প্রকল্পটির কাজও বন্ধ ছিল। আমি দায়িত্ব নিয়ে পানি না পাওয়া নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলা শুরু করলাম। তাদেরকে বললাম, আমি নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। আমাকে একটু সময় দেন আমি আপনাদের পানি সমস্যার নিরসন করব। এ পরিপ্রেক্ষিতে মানুষজন পানি নিয়ে তাদের আন্দোলন বন্ধ করে দেন। এরপর আমি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ৫৬টি ডিপ টিউবওয়েল বসালাম। এই ডিপ টিউবওয়েল বসানোর পর নগরবাসী অল্প অল্প পানি পেতে শুরু করল। তখন মানুষজন বুঝতে পারল, আমি কিছু কিছু কাজ করছি। এই সময় ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিল। দেখা যেত দিনরাত মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ থাকত না। এ কারণে নগরীর কোনো কোনো এলাকার মানুষ পানি পেলেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে কোনো কোনো এলাকার মানুষ পানি পাচ্ছে না। এ অবস্থায় আমি ২০টি জেনারেটর কিনলাম। এরপর সেগুলো নগরীর যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সমস্যা বেশি, সেইসব এলাকায় বসালাম। এই ডিপ টিউবওয়েল ও জেনারেটর বসানোর পর নগরবাসীর পানি পাওয়ার সম্ভাবনা আরো বেড়ে গেল। ছয় মাসের মধ্যেই নগরবাসী আশ্বস্ত হলো যে, আমরা কাজ করছি এবং পানির সমস্যার সমাধান শিগগিরই হবে।

ভোরের আকাশ : রাঙ্গুনিয়া প্রকল্পে অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। তার সমাধান কীভাবে হলো?

ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ : এরপর আমি প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলাম। রাঙ্গুনিয়ার প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে এলাকাবাসীর যেসব দাবি ছিল তা মেনে নিয়ে আমি প্রকল্পটির কাজ দ্রুত শুরু করলাম। ২০০৫ সালে এই প্রকল্পটির অনুমোদিত বাজেট ছিল এক হাজার কোটি টাকা। ২০১০ সালে আমি যখন ভূমি সমস্যার সমাধান করে প্রকল্পটির কাজ শুরু করতে গেলাম, তখন সবকিছুরই দাম অনেক বাড়তি। তাই প্রকল্পটির খরচও বেড়ে গেল। এক হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি ১৮শ’ কোটি টাকায় গিয়ে দাঁড়াল। অনুমোদন পাওয়ার পর আমি টেন্ডার আহ্বান করলাম। ২০১১ সাল থেকে পুরোদমে প্রকল্পটির কাজ শুরু হলো। ২০১৬ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটির কাজ শেষ হলো। আমি এরপর পরীক্ষামূলকভাবে প্রকল্পটি চালু করলাম। এই প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালের মার্চ মাসে। ফলে আমরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদীর পানি পরিশোধন করে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করতে সক্ষম হলাম। এই পানির কোয়ালিটিও অনেক ভালো। নগরবাসী এই পানি পেয়ে স্বস্তিবোধ করল।

ভোরের আকাশ : বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রজেক্টের ব্যাপারে কিছু বলবেন?

ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ : রাঙ্গুনিয়ার প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর আমি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলাম। যারা ১৯৮৮ সালের পর চট্টগ্রাম ওয়াসার কোনো প্রকল্পের সঙ্গে আর জড়িত হয় নাই। আমি বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে তাদের অর্থায়নে চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই ইমপ্রোভমেন্ট অ্যান্ড সেনিটেশন প্রজেক্ট (সিডব্লিউএসআইএসপি) শুরু করলাম। এই প্রজেক্টের আওতায় আমরা জলাবদ্ধতা ও ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান এবং সুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান করেছি। যা চট্টগ্রাম সৃষ্টি হওয়ার পর বিগত ৫০০ বছরেও কেউ করেনি। এছাড়াও এই প্রজেক্টের আওতায় মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প ও নগরীতে নতুন করে পানির পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পও রয়েছে। হালদা নদীর পানি এই মদুনাঘাট প্রকল্পের মাধ্যমে পরিশোধন করে দৈনিক নয় কোটি লিটার পানি উৎপাদন করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এই মদুনাঘাট প্রকল্পটিও ১৮শ’ কোটি টাকার। এটি পরীক্ষামূলকভাবে ২০১৮ সালের নভেম্বরে চালু করা হয়েছে। পরে প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়ার পর চট্টগ্রাম ওয়াসার সবমিলিয়ে দৈনিক পানি উৎপাদন দাঁড়ায় ৩৬ কোটি লিটার। ফলে চট্টগ্রাম নগরীতে পানি সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে গেছে। এখন নগরীর অধিকাংশ এলাকায় সব সময় মানুষজন পানি পায়, আর কিছু কিছু এলাকায় প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পানি পায়।’

ভোরের আকাশ : জাপানি সংস্থা জাইকাকে কীভাবে সম্পৃক্ত করলেন আপনাদের কাজে?

ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ : জাপানি সংস্থা জাইকার অর্থায়নে রাঙ্গুনিয়ায় দ্বিতীয় প্রকল্প গ্রহণ করি আমরা। মদুনাঘাট প্রকল্পটি শেষ হতেই আমরা জাপানি সংস্থা জাইকার সঙ্গে কথা বলে রাঙ্গুনিয়ায় আগের প্রজেক্টের সঙ্গে নতুন আরেকটি প্রকল্প হাতে নিলাম। রাঙ্গুনিয়ার ওই প্রকল্পের আগে থেকেই জায়গা বেশি নেয়া ছিল। নতুন এই প্রকল্পটিও দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি উৎপাদনে সক্ষম। এটি ২০২১ সালের মার্চে পরীক্ষামূলকভাবে চালু আছে। এটিও যে কোনো সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। রাঙ্গুনিয়ার এই দুই প্রকল্পের নামকরণ করা হয়েছে শেখ হাসিনা ওয়ান ও শেখ হাসিনা টু প্রকল্প নামে। এই প্রকল্পের পাশাপাশি জাইকা আমাদেরকে নগরীর পুরনো পানির পাইপলাইন সংস্কারের জন্যও অর্থায়ন করল। চট্টগ্রাম নগরীকে ৫৯টি জোনে ভাগ করে সেখানে মিটার বসানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যাতে ওয়াসার সিস্টেম লস কমে আসে। এই তিনটি প্রকল্প চালু হওয়ায় বর্তমানে চট্টগ্রাম ওয়াসার দৈনিক উৎপাদন গিয়ে দাঁড়াল ৫০ কোটি লিটারে। কিন্তু এখন আমাদের প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন নেই। তাই আমরা এখন প্রতিদিন ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করি না। আমাদের এখন ৩৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করলেই নগরবাসীর পানির চাহিদা মিটে যায়। তাই আমরা এখন ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করতে সক্ষম হলেও পানি উৎপাদন করি দৈনিক ৩৬ কোটি লিটার। তাই এখন চট্টগ্রাম নগরীতে পানির ঘাটতি নেই। আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরবাসীর পানির যে চাহিদা বাড়বে তাতেও আমরা চাহিদা অনুযায়ী পানি দিতে এখনই সক্ষম।’

ভোরের আকাশ : এখন কি কোনো নতুন প্রকল্প হাতে আছে আপনাদের?

ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ : কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম পাড়ে এখনো পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। সেখানে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আছে আবাসিক এলাকাও। তারা পানি পাচ্ছে না এখন। সেখানে মাটির নিচে যে পানি রয়েছে, সেগুলোতে আয়রণ বেশি ও লবণাক্ততাও বেশি। এসব বিবেচনায় নিয়ে আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার ইউডিসিএফের মাধ্যমে একটি পানি সরবরাহ প্রকল্প গ্রহণ করেছি। যার নাম ভাণ্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প। ১৯শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি ২০২৩ সালে বাস্তবায়ন হবে। দৈনিক ছয় কোটি লিটার পানি উৎপাদন হবে এই প্রকল্পে। সেইসঙ্গে ১৩৩ কিলোমিটার পাইপলাইন বসিয়ে ওই এলাকার লোকজনকে পানি সরবরাহ করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় বোয়ালখালী, পটিয়া ও আনোয়ারার লোকজনকেও পানি সরবরাহ করা হবে। ফলে এসব এলাকায় আরো শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এখানে চাইনিজ ইকোনমিক জোন হচ্ছে, বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন হচ্ছে এবং কোরিয়ান ইকোনমিক জোন হচ্ছে। আরো অনেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ও আবাসিক এলাকা হবে। এই প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত করার জন্য সব পরিকল্পনা গ্রহণ করা আছে। যদি ভবিষ্যতে প্রয়োজন পড়ে, তখন প্রতিদিন আরো ছয় কোটি লিটার পানি উৎপাদন করা যাবে ভাণ্ডালজুড়ি দ্বিতীয় প্রকল্প থেকে।’ চট্টগ্রাম নগরী ও চট্টগ্রাম নগরীর বাইরে তিনটি থানা এলাকায় যে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, এটা একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। নিরাপদ পানি না পেলে শিল্প শ্রমিক ও মানুষজন সুস্থ থাকবে না। অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা কাজ করতে পারবে না। তাই আমরা নিরাপদ পানি সরবরাহ করছি। তাছাড়া আমাদের পানি লবণাক্ত না হওয়ায় ইন্ডাস্ট্রিরমেশিনারিগুলোও দীর্ঘদিন ভালো থাকবে। সবমিলিয়ে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামবাসীকে পানি নিয়ে আর দুশ্চিন্তা করতে হবে না। এর মধ্যে আমরা আরো নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করব। যাতে পানির চাহিদা আরো বাড়লেও ঘাটতি না দেখা দেয়।

ভোরের আকাশ : চট্টগ্রামের সুয়ারেজ সমস্যার সমাধান হবে কখন?

ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ : চট্টগ্রামের বড় একটি সমস্যা সুয়ারেজ। যে সেফটি ট্যাংক হচ্ছে ভবনগুলোতে, সেই সেফটি ট্যাংকের লাইন নগরবাসী এখন ড্রেনের সঙ্গে করে। এই ড্রেনের মাধ্যমে মানুষের মলমূত্র চলে যায় খালে। সেখান থেকে যায় কর্ণফুলী নদীতে। এভাবে মানুষের মলমূত্রে কর্ণফুলী নদী দূষিত হচ্ছে। এমনকি সাগরের পানিকেও তা দূষিত করে ফেলছে। এভাবে আর চলতে পারে না। তাই আমরা সুয়ারেজ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সুয়ারেজ নিয়ে আমাদের যে মাস্টার প্ল্যান রয়েছে, সেই প্ল্যান অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগরীকে আমরা ছয়টি জোনে ভাগ করেছি। এরমধ্যে একটি জোনের কাজ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অফেরতযোগ্য ৮০৮ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। এই জোনের কাজের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ। এক মাসের মধ্যে এই জোনের বাস্তবায়ন কাজ শুরু হচ্ছে। বাকি পাঁচটি জোনের কাজও প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম নগরী সুয়ারেজের আওতায় চলে আসছে আমরা বলতে পারি। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম হবে দেশের প্রথম পানির হাহাকারমুক্ত স্বাস্থ্যকর নগর।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা এখন নদী থেকে ৯২ ভাগ পানি দিচ্ছি। বাকিটা ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে মাটির নিচ থেকে তুলে দেয়া হচ্ছে। আমাদের মোট উৎপাদন ৫০ কোটি লিটারের মধ্যে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানিই ৪৬ কোটি লিটার। বাকি চার লিটার পানি ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে তোলা। এখন যেহেতু ৩৬ লিটার পানিতেই নগরবাসীর চাহিদা মিটে যাচ্ছে, তাই ডিপ টিউবওয়েলের মাধ্যমে পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এটা একটা বিরাট ব্রেকথ্রো চট্টগ্রামের জন্য। নগরীতে পানি সংকট না থাকায় এখন নগরীর হাজার হাজার ডিপ টিউবওয়েল দিয়ে নগরবাসী ব্যক্তিগতভাবে যে পানি মাটির নিচ থেকে উঠাত তা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আমাদের আন্ডারগ্রাউন্ড পানির লেয়ার যেখানে সাড়ে ৪০০ ফুট, ৫০০ ফুট নিচে ছিল, এখন সেটি আগের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ ফুট উপরে উঠে এসেছে। আশা করছি, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আন্ডারগ্রাউন্ড পানির লেয়ার ২০০ থেকে ৩০০ ফুটের মধ্যে চলে আসবে। ফলে চট্টগ্রামের পরিবেশের অনেক উন্নতি হবে।’

ভোরের আকাশ : সিস্টেম লস নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে।

ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ : ১২ বছরে নগরবাসীর চাহিদা অনুযায়ী সুপেয় নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে পেরেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্চ সুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। আবার ওয়াসার সিস্টেম লস কমিয়ে আনার জন্য ডিস্ট্রিক্ট মিটারিং এরিয়া প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক আমাদেরকে চার হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে। এই ১২ বছরে যুগান্তকারী উন্নয়ন করেছি, আমরা যারা চট্টগ্রাম ওয়াসায় কর্মরত রয়েছি তারা সবাই মিলে চেষ্টা করেছি। আমি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করি তখন সিস্টেম লস ছিল ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। তখন পানির উৎপাদনও কম ছিল। আমরা তখন সেই সিস্টেম লস কমিয়ে ২০ শতাংশের নিচে নামিয়ে এনেছিলাম। এখন পানির উৎপাদন অনেক বেড়ে গেছে। ফলে সিস্টেম লস আবার বেড়ে ৩০ শতাংশে চলে গিয়েছিল। আমরা ক্রমান্বয়ে তা কমিয়ে এখন ২৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। আমরা আরো কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’

ভোরের আকাশ : পরিশেষে আপনার বেতন বাড়ানো নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে, সেটিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ : গত ছয় মাস আগে আমি আমাদের বোর্ড সভায় আমার বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলাম। সেখানে আমি বলেছি, ১০ বছর আগে আমার বেতন নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। এখনো সেই বেতনই রয়ে গেছে। আমি যদি প্রতি বছর পাঁচ শতাংশও আমার বেতন বাড়াতাম তাহলেও এখন সেটি ৫০ শতাংশ বেড়ে যেত। কিন্তু আমি আমার বেতনের দিকে মনোযোগ না দিয়ে কাজের দিকে মনোযোগ দিয়েছিলাম। আমি চিন্তাও করতাম না, আমি বেতন কত পাই। যেহেতু আমি গত ১২ বছরে নগরবাসীর পানির চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি, অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, তাই আমি আমাদের বোর্ডের কাছে আমার বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব করেছি। বোর্ড যদি মনে করে আমার বেতন বাড়ানো উচিত, তাহলে তারা বাড়াবে। আর যদি মনে করে আমার বেতন এক টাকাও বাড়াবে না, তাহলে বাড়াবে না। বোর্ড আমার বেতন বাড়াক কিংবা না বাড়াক এখানে আমার কিছু করার নেই। এটা আমি আমার পক্ষ থেকে দাবি দিয়েছি।’

ভোরের আকাশ : আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ : ধন্যবাদ ভোরের আকাশ পরিবারকেও।

মন্তব্য

Beta version