নারী মুক্তি, নারী স্বাধীনতা, নারী জাগরণের কথা উঠলেই যে মহীয়সী নারীর নাম সর্বাগ্রে মনের মধ্যে ভেসে ওঠে তিনি বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি ছিলেন বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত, গভীরভাবে সমাজ সচেতন, মানবতাবাদী, যুক্তিবাদী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন আধুনিক নারী।
তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, সমাজ তথা রাষ্ট্রের সার্বিক উন্নয়নের জন্য পুরুষের পাশাপাশি নারীকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমে উপযুক্ত করে গড়ে তোলা অতীব প্রয়োজন। সমাজ পরিবর্তনের ব্রত তিনি জীবনের পাঠশালা থেকেই নিয়েছিলেন। বাঙালি নারী জাতির মুক্তির একনিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন তিনি। একটি ধর্মান্ধ, কুসংস্কারময়, নানান সঙ্কটের অন্ধকারে নিপতিত সমাজ থেকে নারীদেরকে আলোতে নিয়ে আসতে জীবনভর সংগ্রাম করে গেছেন।
অভাবনীয় প্রতিকূলতাকে পায়ে মাড়িয়ে সমাজ, নারী তথা মানুষের জন্যে অদম্য সাহসিকতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন তাঁর চিন্তা ও কর্মের মধ্য দিয়ে। সুতরাং, বাঙালি নারী জাতির কথা বলতে গেলে তাঁর নাম তো অবধারিতভাবেই আসবে। কালে কালে তিনিই তো নারী মুক্তির আদর্শ, অনুপ্রেরণা ও মুক্তির দিশারী। তিনি সর্বদাই সমাজে সাম্যের কথা বলেছেন; পুরুষতান্ত্রিক কিংবা নারীতান্ত্রিক সমাজ গড়তে চাননি।
তাঁর স্বপ্ন ছিল, সমাজে নারী ও পুরুষ যাতে একসঙ্গে সমান মর্যাদা এবং অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে। নারী মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র সমাজের উন্নতিই তাঁর কাছে মুখ্য ছিল। নারী পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াসেই একটি আদর্শ সমাজ বিনির্মাণের কথা তিনি বলেছেন।
‘আমরা সমাজের অর্ধাঙ্গ, আমরা পড়িয়া থাকিলে সমাজ উঠিবে কীরূপ? কোনো ব্যক্তি এক পা বাঁধিয়া রাখিলে সে খোঁড়াইয়া খোঁড়াইয়া কতদূর চলিবে? পুরুষের স্বার্থ এবং আমাদের ভিন্ন নহে। তাহাদের জীবনের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য যাহা আমাদের লক্ষ্য তাহাই।’
অথচ আমরা যদি আজ থেকে একশ বছর আগের সমাজের দিকে একবার তাকাই তাহলে পরিষ্কারভাবে দেখতে পাবো- বিশেষ করে নারীদের জন্য ভয়ঙ্কর ও অচিন্ত্যনীয় নিষ্ঠুর একটি সমাজচিত্র! আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠবে অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি রক্ষণশীল সমাজ যেখানে একটি মুসলিম পরিবারে নারীর জীবন মানেই পর্দার আড়ালে বন্দি জীবন!
ধর্মের অপব্যাখায় নেই শিক্ষালয়ে যাবার কোনো অধিকার; নিজের জীবনের কোনো সিদ্ধান্তই নিজে নেবার স্বাধীনতা নেই; খাঁচায় বন্দি পাখির মতো পরাধীনতার শিকলবেড়িই তাঁর আমৃত্যু বয়ে বেড়াতে হতো। সেই রকম একটি সমাজে রোকেয়া সাখাওয়াত একজন প্রমিথিউজের ভূমিকায় আলোর মশাল নিয়ে অন্ধকারকে বিদীর্ণ করার সংগ্রামে নিজেকে নিবেদন করেছিলেন। কারণ, তিনি খুব ভালোকরেই বুঝতে পেরেছিলেন, ‘কন্যারা জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত দেশ-মাতৃকার মুক্তি অসম্ভব।’
আশ্চর্যের বিষয় হলো বেগম রোকেয়াও ছিলেন এমনই একটি কঠোর পারিবারিক ও কট্টর ধর্মীয় অনুশাসনের বলয়ে আবদ্ধ একজন নারী। যার নিজেরও পড়ালেখা করার অধিকার তাঁর পরিবারে স্বীকৃত ছিল না। রোকেয়ার পিতা ছিলেন নারী শিক্ষার একজন ঘোর বিরোধী। তিনি তার দুই পুত্রকে কলকাতায় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। কিন্তু, কোনো মেয়েকে শিক্ষার সুযোগ দেননি। শুধু বাড়িতে কুরআন শিক্ষার সুযোগ রেখেছিলেন। কিন্তু তাতে কী যায় আসে!
নারীকে দাসী জ্ঞান করা পুরুষশাসিত সেই সমাজই তাঁর ভেতরে পরাধীনতার শিকল ভাঙার অগ্নি স্ফুলিঙ্গের জন্ম দিয়েছিল। জ্ঞানার্জনের অদম্য অনুরাগ ও মুক্তির বাসনাকে তাঁর পিতা কিংবা সমাজ কেউই রোধ করতে পারেনি। ভারতবর্ষের অন্ধকারবাসিনী ভগিনীদেরকে যিনি মুক্তির স্বাদ দিতে চেয়েছেন; যিনি নারীকে সেই অন্ধকার প্রকোষ্ঠ থেকে বের করে মানুষ হবার পথ বাতলে দিতে চেয়েছেন; তাঁকে কী কোনক্রমে আটকানো সম্ভব! সুতরাং, গভীর রাতে লুকিয়ে লুকিয়ে লেখাপড়া করেছেন। পরিবারের সকলেই যখন ঘুমিয়ে পড়েছেন, তখন ভাইয়ের কাছে লিখতে-পড়তে শিখেছেন। পিতার অজান্তেই তিনি ভাইয়ের কাছে বাংলা, ইংরেজি শিখেছেন। সম্পূর্ণ নিজস্ব প্রচেষ্টায় স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত হয়ে উঠেছিলেন বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত। পরবর্তীতে, নারীশিক্ষা বিস্তারে তাঁর দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু হয়। হাজারো প্রতিকূলতার মধ্যেও গড়ে তোলেন নারীদের জন্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল।
নারীকে শিক্ষিত ও সচেতন করে গড়ে তুলতে গিয়ে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপেই নানা প্রকারের বাঁধা ও প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয়েছে বেগম রোকেয়াকে। সমাজের কট্টরদৃষ্টি তো ছিলই, নিজের পরিবার-আত্মীয়-পরিজনের নিকট থেকেও হজম করতে হয়েছে অপমান আর লাঞ্ছনা। যে পারিবারিক ও ধর্মীয় অনুশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর যুদ্ধ, সেই অনুশাসনকেই তাঁকে মান্য করতে হয়েছে। কেবলমাত্র, তাঁর নারীমুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও বৃহত্তর সমাজ কল্যাণের পথকে ঝঞ্ঝাটমুক্ত করার জন্যেই।
তিনি পর্দা পরিধান করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুসলিম অভিভাবকদের বুঝিয়ে তাদের মেয়েটিকে তাঁর স্কুলে পাঠানোর অনুরোধ করতেন। আর তা করতে গিয়ে ধার্মিকদের কটাক্ষ ও কটুবাক্যের শিকারও হতে হয়েছে; বরণ করতে হয়েছে বহু অপবাদকে। তাঁর নিজেরই বিলাত ফেরত উচ্চশিক্ষিত নাইট উপাধিপ্রাপ্ত ভাগনে তাঁকে শর্ত দিয়েছিলেন, খালা যদি যথোপযুক্ত পর্দা মেনে চলেন, তাহলে তাঁর স্কুলটিকে তিনি সরকারি করে দেবেন!
এত অপমান, অবজ্ঞা, হতাশা আর বৈরিতার মধ্যেও তাঁকে আঁটকে রাখা যায়নি। তমসাচ্ছন্ন সমাজে দীপ জ্বেলে যাওয়ার ব্রত থেকে তিনি পিছু হটেননি। সেই কারণে যেকোনো রকমের চ্যালেঞ্জ তিনি গ্রহণ করেছেন কেবলমাত্র নারীর বন্দিদশা থেকে তাঁকে মুক্ত করার জন্যেই। তিনি ভগিনীদের আহ্বান করেছেন, ‘ভগিনী! চুল রগড়াইয়া জাগিয়া উঠুন, অগ্রসর হউন!...বলো কন্যে আমরা জড়োয়া অলঙ্কাররূপে লোহার সিন্ধুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই; সকলে সমস্বরে বলো আমরা মানুষ।’
পুরুষের দাসত্বমুক্ত একটি স্বাধীন নারী সমাজের স্বপ্ন দেখেছিলেন বেগম রোকেয়া। নারী-পুরুষে বৈষম্যহীন একটি সমাজের স্বপ্ন দেখতেন তিনি যেখানে নারী পুরুষের মতো অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। কিন্ত তাঁর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে তৎকালীন সমাজের ধর্মীয় কট্টরমৌলবাদীতা এবং পুরুষতান্ত্রিকতাই কেবল তাঁর প্রতিবন্ধকতার কারণ ছিল না; বরং নারীর নিস্ক্রিয়তাও তাঁর তীব্র মানসিক যন্ত্রণা এবং আপসোসের কারণ ছিল।
তিনি খুব আপসোস নিয়েই নারী জাতির সমালোচনা করেছেন এবং জেগে ওঠার জন্য কড়া ভাষায় বলেছেন, “বহুকাল হইতে নারী-হৃদয়ের উচ্চবৃত্তিগুলি অঙ্কুরে বিনষ্ট হওয়ায়, নারীর অন্তর, বাহির, মস্তিস্ক, হৃদয় সবই দাসী হইয়া পড়িয়াছে। এখন আর আমাদের স্বাধীনতা, ও নিজস্বতা বলিয়া কিছু নাই- এবং তাহা লাভ করিবার প্রবৃত্তি পর্যন্ত লক্ষিত হয় না। তাই বলিতে চাই, অতএব জাগো, জাগো গো ভগিনি। পুরুষের সমকক্ষতা লাভের জন্য আমাদিগকে যাহা করিতে হয়, তাহাই করিব।”এভাবেই নারীকে মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার একটি অবিরাম প্রয়াস তিনি চালিয়ে গেছেন।
তাহলে এমন প্রশ্ন তো অনিবার্যভাবেই আসে যে আজ একশ বছর পেরিয়ে বাঙালি সমাজ কতদূর এগোতে পারলো? বাঙালি নারীদের জীবনে কি ততোখানি পরিবর্তন এসেছে যাকে শত বৎসর পূর্বে বেগম রোকেয়া স্বপ্ন দেখতেন? তবে, বহু প্রতিকূলতা, নানা রকমের নির্যাতন-হেনস্থা-সহিংসতার শিকার হলেও নারীরা আজ আর যে অন্ধকারবাসিনী বা অবরোধবাসিনী নয়, সেকথা আমরা বলতেই পারি।
আবার একথাও অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে স্বীকার করতেই হবে যে আজ থেকে একশ বছর পূর্বে যেই সমাজে অবস্থান করে বেগম রোকেয়া সমাজের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠাগুলোকে তাঁর প্রশ্নের কাঠগড়ায় দাঁড় করেছেন, তাঁর সংগ্রামের কথা বলেছেন, লিখেছেন, সমাজ পরিবর্তনের কর্মযজ্ঞে নিজেকে নিবেদিত করেছেন, আজকের সমাজে বেঁচে থাকলে তিনি কি তা করতে পারতেন?
তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, ধর্ম অনেকক্ষেত্রেই নারীকে দাবিয়ে রাখার এক অস্ত্র। তাইতো তিনি ধর্মের নামে নারীদের অবদমিত করে রাখার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যখনই কোন ভগ্নী মস্তক উত্তোলনের চেষ্টা করিয়াছেন, অমনি ধর্মের দোহাই বা শাস্ত্রের বচনরূপ অস্ত্রাঘাতে তাঁহার মস্তক চূর্ণ হইয়াছে।......আমাদিগকে অন্ধকারে রাখিবার জন্য পুরুষগণ ওই ধর্মগ্রন্থগুলিকে ঈশ্বরের আদেশপত্র বলিয়া প্রচার করিয়াছেন। এই ধর্মগ্রন্থগুলি পুরুষ রচিত বিধি-ব্যবস্থা ভিন্ন আর কিছুই নহে।’ আজকে একথা বললে তিনি টিকতে পারতেন বলে মনে হয় না।
আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি তাহলে সহজেই বুঝতে পারব সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্যান্য জায়গার মতো আমাদের সমাজেও একটি বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ভালোমন্দ সহকারে বিশ্বায়নের একটি মুক্ত ঢেউ এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ তন্মধ্যে অন্যতম। এ ছাড়াও কিন্তু, একটি ভয়ানক শক্তি আমাদের চোখের সামনেই নতুন করে মাথা গজিয়েছে- তা হলো ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, মৌলবাদী অপশক্তির আস্ফালন, সাম্প্রদায়িক শক্তির আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার অপতৎপরতা। ধর্মের নামে এই একটি শ্রেণি সমাজকে স্তব্ধ করে রাখার ষড়যন্ত্র পূর্বেও করেছে, এখনো করতে চায়। আর দেখা যায়, তাদের প্রধান টার্গেটও কিন্তু, এই নারীই।
অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় আজ যদি বেগম রোকেয়া বেঁচে থাকতেন তাহলে এই মৌলবাদী অশুভ শক্তি কি তাঁর কর্মযজ্ঞ চালাতে দিতেন? নারীমুক্তির কথা, পুরুষ দাসত্বের শৃঙ্খল ভাঙার কথা, ধর্মের দোহাই দিয়ে নারীর বন্দিদশার পেছনে এই কুচক্রীদের চক্রান্তের কথা বলতে দিতেন? আমরা দেখেছি কত নিষ্ঠুরভাবে ‘নাস্তিক’ হত্যার নামে এই অপশক্তির হাতে রক্তের হলি খেলা! আমরা দেখেছি পুরো সমাজটাকে বিশেষ করে নারীকে তারা কতভাবে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখার পাঁঁয়তারা করতে পারে।
তাহলে কি আমরা বলতে পারছি যে আজকের নারী সমাজ একটি নিরাপদ জীবন যাপনের নিশ্চয়তা পেয়েছে? সুতরাং, আজকের দিনে বেগম রোকেয়া বেঁচে থাকলে নিঃসন্দেহে তিনি গৃহীত হতেন না, তাঁকেও নিষিদ্ধ করা হতো।
এতদসত্ত্বেও গত দশকে বাঙালি সমাজের বিভিন্ন স্তরে নারীর অগ্রগতি ও ভূমিকা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। ঘরে ও ঘরের বাইরে নারীর অংশগ্রহণ ও অবদান অনস্বীকার্য। তবু কি নারীর প্রতি সহিংসতা কমেছে? লক্ষ্য করলেই পরিষ্কারভাবে প্রতীয়মান হবে যে, ঘরে-বাইরে, রাস্তায়-কর্মক্ষেত্রে, গাড়িতে-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমস্ত জায়গায়ই তাকে এখনো হরহামেশাই নির্যাতনের শিকার হতে হয়। নারী অগ্রগতি থাকার পরও তাদের ওপর নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।
সুতরাং, নারী তার স্বাধীনতাকে উপভোগ করবে সেই সামাজিক নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি এটা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়। তবে, আশার কথা হলো নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত তাঁর প্রয়াস অব্যাহতভাবে রেখে চলেছে। বাংলাদেশের জন্মের পরে যেটি শুরু করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে নারী শিক্ষার প্রসার ও নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ হাতে নিয়ে। নারী উন্নয়ন নীতিমালাসহ নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও কর্মক্ষেত্রে নিরাপদে কাজের পরিবেশ তৈরি করার উদ্যোগ আমরা লক্ষ্য করছি।
সম্প্রতি নারী-বান্ধব নীতির কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও অর্জিত হয়েছে স্বীকৃতি ও সম্মাননা। সুতরাং, বেগম রোকেয়ার প্রদর্শিত পথেই প্রতিটি ক্ষেত্রে নারীর অন্তর্ভুক্তিতে ইতিবাচক অনেক উদ্যোগ আমরা লক্ষ্য করছি। তবে, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে মানসিকতার পরিবর্তন সর্বাগ্রে প্রয়োজন। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চর্চার ভেতর দিয়ে আমাদেরকে প্রকৃত শিক্ষা ও উন্নত রুচির বিকাশ ঘটাতে হবে।
পরিবার সমাজ ও রাষ্ট্রের উৎকর্ষে নারী-পুরুষের ভূমিকা সমান। প্রাথমিক পর্যায়েই এ সংক্রান্ত শিক্ষা অন্তর্ভূক্ত থাকা জরুরি। নারীর প্রতি সম্মান-অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে সেটা সমাজেরই ব্যর্থতা। সমাজের সকল স্তরে নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম করতে সকলের বিশেষত পুরুষদের সহযোগিতা অনিবার্য।
সুতরাং, নারীমুক্তির প্রসঙ্গ আসলেই বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের নামটি অনিবার্যভাবে আসতেই হবে। কারণ, তিনিই প্রথম বাঙালি নারী যিনি তাঁর ক্ষুরধার লেখার মাধ্যমে নারীর প্রতি সমাজের অন্যায় ও বৈষম্যমূলক আচরণের মূলে আঘাত হানেন।
তবে আজকে আমরা এমন প্রত্যয়ী হতেই পারি যে, যে জাতির একটি মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের ইতিহাস রয়েছে, নারী-পুরুষের সম্মিলিত একটি মহান ত্যাগের ইতিহাস রয়েছে; যে দেশটিকে মুক্ত করার জন্যে দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনার শৃঙ্খল চুরমার করে দেবার নিজস্ব গল্পগাঁথা রচিত হয়েছে, সেই জাতি অবশ্যই একদিন সকলের জন্য কল্যাণকর ও বেগম রোকেয়ার স্বপ্নের নারী-পুরুষের বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করবে। বেগম রোকেয়া লিখেছেন, “দেহের দু’টি চক্ষুস্বরূপ, মানুষের সবরকমের কাজকর্মের প্রয়োজনে দু’টি চক্ষুর গুরুত্ব সমান।”
লেখক: প্রকাশক ও সম্পাদক, দৈনিক জাগরণ।
মন্তব্য