কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে অবৈধভাবে চলছে বিচ বাইক, জিপ ও কার সহ বিভিন্ন যানবাহন। এসব গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রতিদিনই মারা যাচ্ছে লাল কাঁকড়া, সামুদ্রিক কাছিম, শামুক, ঝিনুকসহ উপকূলীয় বিভিন্ন প্রাণী। এতে চরম হুমকির মুখে পড়েছে সৈকতের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ-প্রতিবেশ।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য হুমকি হয়ে ওঠা যানবাহনের অবাধ চলাচল নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘দৈনিক ভোরের আকাশ’। গতকাল বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে- কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে অবৈধভাবে বিচ বাইক, জিপ ও অন্যান্য যানবাহন চালানো হচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, জলচর পাখিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর প্রজনন, আবাসস্থল ও বিচরণ স্থান। যানবাহনের অবাধ চলাচলে বনের গাছপালাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তা ছাড়া, রাতে চলাচল করা গাড়ির তীব্র আলোয় সামুদ্রিক কচ্ছপের ডিম পাড়তে বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) অনুযায়ী, কক্সবাজার-টেকনাফ পেনিনসুলাকে ইকোলজিক্যালি ক্রিটিক্যাল এরিয়া (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই আইন অনুযায়ী, এই এলাকায় সামুদ্রিক প্রাণীর ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ করা (যেমন- যানবাহন পরিবহণ) নিষিদ্ধ। এছাড়া, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন- ২০১২ অনুযায়ী, বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল সংরক্ষণ জরুরি। অথচ, এসব নির্দেশনা অনুসরণে মনোযোগের ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে সৈকত এলাকাজুড়ে।
সৈকত এলাকা সামুদ্রিক কাছিম, কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক, জলচর পাখিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর প্রজনন, আবাসস্থল ও বিচরণ স্থান। কাজেই, এসব এলাকার পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সৈকতের পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব এসব যান চলাচলের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে। বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহল অবশ্য ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। তাছাড়া, সমুদ্রসৈকতে বিচ বাইক ও গাড়ি চলাচল বন্ধ করতে জেলা প্রশাসক, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতে যানবাহন চলাচলসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই ঢিলেঢালা। ১২০ কিলোমিটার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধ স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। সৈকতের ওপর দিয়ে হ্যাচারির বর্জ্য যাচ্ছে সমুদ্রে। দূষণ ছড়াচ্ছে গজিয়ে ওঠা হোটেল-মোটেল ও হ্যাচারি। বিভিন্ন হোটেলের বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে সৈকতে। এর ফলে, ময়লা-আবর্জনার স্তূপ জমছে সৈকতের পরিবেশে, দূষিত হচ্ছে পানি। এসব কর্মকা- আমাদের আশাহত করে। পরিবেশের এহেন বিপর্যয় অব্যাহত থাকলে সুন্দর প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে সামুদ্রিক প্রাণীর আবাসস্থল হুমকির মুখে পড়বে- সন্দেহ নেই।সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়েছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের পরিমাণ। এসব প্রাকৃৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে শ্রীহীন হয়ে পড়ছে কক্সবাজারসহ দেশের সামুদ্রিক এলাকাগুলো। এর ফলে প্রাকৃৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী।
সংকটাপন্ন হয়ে পড়া সৈকত এলাকা এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে এখনই। সরকারি বিধিনিষেধ যেন শুধু গণবিজ্ঞপ্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। তা ছাড়া, সর্বসাধারণের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে সৈকত এলাকায় সব ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক বাহন চলাচলকে নিয়ম-নীতির আওতায় আনতে হবে।
মন্তব্য