-->

আদালতে ‘বাংলা’র ব্যবহার

হাইকোর্টের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
আদালতে ‘বাংলা’র ব্যবহার
দৈনিক ভোরের আকাশ- সবার কথা বলে

আদালতের অধিকাংশ রায়, আদেশ এবং আনুষঙ্গিক কার্যাবলিতে ‘বাংলা’র ব্যবহার নিয়ে আলোচনা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সর্বমহলের দাবি, আদালতসংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রমে ‘বাংলা ভাষা’ ব্যবহার করতে হবে। দাবি বাস্তবায়নে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা-বৈঠক হলেও কাঙ্ক্ষিত আশার আলো দেখা যায়নি তাতে। শেষ পর্যন্ত গতকাল সোমবার হাইকোর্ট একটি কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করল।

দেশের সব মৌলিক আইন (দেওয়ানি, ফৌজদারি, দণ্ডবিধি, সাক্ষ্য আইন ও তামাদি আইনসহ) ইংরেজি থেকে বাংলায় রূপান্তর ও পাঠযোগ্য করতে একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। আইন মন্ত্রণালয়, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, বাংলা একাডেমি, আইন কমিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন অনুষদ ও বাংলা বিভাগের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে দেশের সব আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য মৌলিক আইনগুলোর নির্ভরযোগ্য বাংলা পাঠ প্রকাশ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে।

বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আইন সচিব, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, আইন কমিশনের চেয়ারম্যান ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে (ডিজি) চার সপ্তাহের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর করা এক রিট আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেওয়া হয়।দেশের সব মৌলিক আইন ইংরেজি থেকে বাংলায় পাঠযোগ্য করতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রিট আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী। এর আগে তাদের পক্ষে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিশ দেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। নোটিশের জবাব না পেয়ে রিট আবেদন করা হয়।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, আমাদের সংবিধানের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘বাংলা’কে একমাত্র রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আর এই অনুচ্ছেদের বিধানকে পূর্ণরূপে কার্যকর করার উদ্দেশ্যে ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন প্রণয়ন করা হয়। ওই আইনের ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী দেশের সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও আদালতের সব কার্যাবলি অবশ্যই বাংলায় হতে হবে। এই আইনি বিধান সত্ত্বেও দেশের আদালতের অধিকাংশ রায় ও আদেশ এবং অন্য কার্যাবলি ইংরেজিতে দেওয়া হয়।

আবেদনে আরো বলা হয়, আদালতে মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মৌলিক আইনসমূহের গুরুত্ব ও ব্যবহার সর্বাধিক। কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব মৌলিক আইনের কোনো নির্ভরযোগ্য বাংলা পাঠ প্রণয়ন করা হয়নি। আদালতে বাংলা ভাষা প্রচলনের স্বার্থে এসব আইনের বাংলায় অনূদিত নির্ভরযোগ্য পাঠ প্রণয়ন ও প্রকাশ অত্যাবশ্যক।

উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইন প্রবর্তন করা হয়। আইনটি পাস হওয়ার পর থেকেই সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের সব দাপ্তরিক আদেশ ও নির্দেশনা বাংলাতে হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত উচ্চ আদালতের আদেশ ও রায় বাংলায় দেওয়ার ক্ষেত্রে বিচারকদের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।

জার্মানি, জাপান, ফ্রন্স, স্পেন ও নেদারল্যান্ডসসহ উন্নত বিশ্বে বিচারপ্রার্থীদের শুনানি ও রায় বোঝার জন্য উচ্চ আদালতে দাপ্তরিক কাজসহ আদালতের রায় ও আদেশ চলে তাদের নিজস্ব ভাষায়। বলা বাহুল্য, মাতৃভাষা বাংলায় উচ্চ আদালতে রায় দেওয়া হলে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা সহজেই তা বুঝতে পারবেন। কাজেই আদালতে ‘বাংলা’ প্রচলনে হাইকোর্টের এ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এ মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।

“আমাদের সংবিধানের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে ‘বাংলা’কে একমাত্র রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া, ১৯৮৭ সালে বাংলা ভাষা প্রচলন আইনের ৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী আদালতের সকল কার্যাবলী অবশ্যই বাংলায় হতে হবে। এই আইনি বিধান সত্ত্বেও দেশের আদালতের অধিকাংশ রায় ও আদেশ এবং অন্যান্য কার্যাবলী ইংরেজিতে দেওয়া হয়”

মন্তব্য

Beta version