-->
শিরোনাম
প্রয়াত সাহাবুদ্দীন আহমদ

স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার অনন্য প্রতীক

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার অনন্য প্রতীক
দৈনিক ভোরের আকাশ-সবার কথা বলে

শনিবার (১৯ মার্চ) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সাবেক রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও গণতান্ত্রিক ইতিহাসে এক আলোচিত নাম বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। বাংলাদেশের প্রখ্যাত আইনবিদ ও ষষ্ঠ প্রধান বিচারপতি এবং দু’বার দায়িত্ব পালনকারী রাষ্ট্রপতি তিনি। দেশের রাজনীতি ও গণতন্ত্রে মূলধারা আনয়নে তার অবদান সর্বজনস্বীকৃত। বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবেও তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনে সফল ছিলেন। বিচারক হিসেবে বিচার বিভাগে বহু যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছেন। ভয়-ভীতির কাছে মাথানত করেননি কখনো। যদিও সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খুবই সীমিত, এই সীমিত ক্ষমতার মধ্যে থেকেই তিনি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার সততা এবং প্রজ্ঞা দ্বারা বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসা ও সম্মান জয় করেন।

নব্বইয়ের আন্দোলনে এরশাদ সরকারের পতনের নাটকীয়তার মধ্যে অনেকটা আকস্মিকভাবে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে আসেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। এরশাদ পদত্যাগ করার পর রাষ্ট্রপতির পদে কে আসবেন, নির্বাচন পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কে থাকবেন- সেই প্রশ্নে আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলগুলো একমত হতে পারছিল না। পরে প্রধান বিচারপতিকে সেই দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়। পুনরায় সুপ্রিম কোর্টে ফেরার শর্ত দিয়ে সাহাবুদ্দীন আহমদ তাতে রাজি হন।

মওদুদ আহমদ উপ-রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দিলে সেই দায়িত্বে আসেন সাহাবুদ্দীন। এরশাদ ক্ষমতা ছাড়লে সাহাবুদ্দীন আহমদ হন রাষ্ট্রপতি। পরে তার নেতৃত্বাধীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রশংসা পায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এই দলের প্রার্থী হিসেবে সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সাহাবুদ্দীন আহমদ। ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি সেই দায়িত্বে ছিলেন।

সাহাবুদ্দীন আহমদের ছিল বর্ণাঢ্য কর্মজীবন। প্রথমে যোগ দেন পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে। ম্যাজিস্ট্রেট, মহকুমা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা এবং বরিশালে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন। বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

১৯৮০ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি সাহাবুদ্দীন আহমদকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক নিয়োগ করা হয়। বিচারপতি হিসেবে তার প্রদত্ত বহুসংখ্যক রায় প্রশংসিত। বাংলাদেশ সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীর ওপর তার প্রদত্ত রায় দেশের শাসনতান্ত্রিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক অনন্য ঘটনা হিসেবে স্বীকৃত। ১৯৯০ সালের ১৪ জানুয়ারি তাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করা হয়।

সাহাবুদ্দীন আহমদ দুই দফায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে এবং দীর্ঘ সময় প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে শতভাগ ন্যায়নিষ্ঠ থেকেছেন। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তার ছিল সাহসী উচ্চারণ। নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার পেমই গ্রামে ১৯৩০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করা সাহাবুদ্দীন আহমদ বাংলার আপামর জনতার কাছে নিরপেক্ষতা, সততা ও আস্থার প্রতীক হয়ে থাকবেন।

মন্তব্য

Beta version