পটুয়াখালীতে দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। এর মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হলো শতভাগ বিদ্যুতায়ন। অর্থাৎ বিদ্যুৎ নেটওয়ার্কের আওতায় এলো পুরো দেশ। এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আসবে।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বদৌলতে বদলে যাবে দক্ষিাণাঞ্চলের অর্থনৈতিক চালচিত্র। দক্ষিণাঞ্চল পরিণত হবে দেশের তৃতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ইপিজেড প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। তাছাড়া জাহাজ নির্মাণ কারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হলো এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ঘিরে।
হিসাব মতে, দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা পাঁচগুণ বেড়েছে। ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিদ্যুৎসহ দেশে এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াট। আরো ১৩ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। বিদ্যুতায়ন এখন ৯৯ দশমিক ৮৫ ভাগ, একে শতভাগই বলা যায়। সারা দেশে এখন গ্রাহক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ কোটি।
দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে এক দশক আগে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় ২০১৪ সালে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি সই হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। বাংলাদেশের নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান অংশীদারে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। পায়রায় বিসিপিসিএল এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছে। প্রতিটি কেন্দ্রে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি করে ইউনিট রয়েছে। এক হাজার একর জমির ওপর নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ফেজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। কেন্দ্রটি চালু রাখতে প্রতিদিন দরকার হবে ১৩ হাজার টন কয়লা। ১০ বছরের চুক্তির আওতায় ইন্দোনেশিয়া থেকে এই কয়লা আমদানি করা হবে।
সরকার দেশে একশ অর্থনৈতিক অঞ্চল বাস্তবায়নে কাজ করছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদ্যুৎসেবা নিশ্চিত করতে মাস্টারপ্ল্যান রয়েছে সরকারের। যার ধারাবাহিকতায় বেশকিছু বড় বিদ্যুৎ প্রকল্প সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসবে। বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ছাড়াও বেসরকারি মালিকানাধীন আরো ১২-১৩টির মতো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন। সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বলতেই হয়, শতভাগ বিদ্যুতায়নের পথে অনেক বাধা ছিল। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত নিয়োজিত সবাই একটি দল হয়ে কাজ করার ফল হলো এ অর্জন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এখনো শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারেনি। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। দেশের শতভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুতায়ন হয়েছে সব শহর, গ্রাম, চর এমনকি দুর্গম পাহাড়ি এলাকা।
স্বাধীনতার পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশের জনগোষ্ঠীর ৪৭ শতাংশ বিদ্যুতের সুবিধার আওতায় ছিল। গত এক যুগে বাকি ৫৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎসংযোগের আওতায় এসেছে। এ অভাবনীয় সাফল্যের মাধ্যমে স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং মুজিববর্ষ পূর্তিতে দেশের সব নাগরিককে বিদ্যুতের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করল সরকার।
“পার্শ্ববর্তী অনেক দেশই এখনো শতভাগ জনগণকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পারেনি। অথচ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম শতভাগ মানুষকে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। দেশের শতভাগ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বিদ্যুতায়ন হয়েছে সব শহর, গ্রাম, চর এমনকি দুর্গম পাহাড়ি এলাকা”
মন্তব্য