-->
শিরোনাম

অস্ত্রোপচারে চিকিৎসকদের সফলতা

ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
অস্ত্রোপচারে চিকিৎসকদের সফলতা
দৈনিক ভোরের আকশ-সবার কথা বলে

সাম্প্রতিক সময়ে জটিল রোগের অস্ত্রোপচারে নতুন নতুন সফলতা বয়ে আনছেন দেশের চিকিৎসকরা। বিশেষ করে জোড়া লাগা শিশু অস্ত্রোপচারে সফলতা পাচ্ছেন দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসকরা। সবার মনে থাকার কথা, মণি-মুক্তার হাতের টিউমার কেটে বাদ দেওয়া সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল সিঙ্গাপুরের নামকরা একটি হাসপাতাল। কিন্তু চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা। সফল অস্ত্রোপচারের পর এখন দিব্যি বেঁচে আছে মণি-মুক্তা। শুধু মণি-মুক্তাই নয়, চিকিৎসকদের সফল অস্ত্রোপচারে নতুন জীবন পেয়েছেন আরো অনেকে। গত সোমবার রাতে সফল অস্ত্রোপচার করা হয় জোড়া শিশু লাবিবা-লামিসার। সর্বশেষ খবর মতে, তাদের জ্ঞান ফিরেছে, সুস্থ আছে। জোড়া লাগা শিশুর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার এ সংবাদ চরম আনন্দের। চিকিৎসকদের এ সফলতা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। জোড়া লাগা জমজ শিশু লাবিবা-লামিসাকে আলাদা করার ঘটনায় চিকিৎসকদের সাফল্যের মুকুটে যুক্ত হলো নতুন পালক।

লাবিবা-লামিসার মতো সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথক হওয়ার পর সুস্থ শরীর নিয়ে বেঁচে আছে জোড়া শিশু তোফা-তহুরা। ২০১৭ সালের ১ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের ২০-২২ জন অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক চিকিৎসক ৯ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে তাদের আলাদা করেন।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে সফল অস্ত্রোপচারের পর বেঁচে আছে আরেক জোড়া শিশু মণি-মুক্তা। ২০০৯ সালের ২২ আগস্ট পার্বতীপুর ল্যাম্ব হাসপাতালে সিজারিয়ান সেকশনে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মণি ও মুক্তা জোড়া লাগা অবস্থায় জন্ম নেয়। ২০১০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা শিশু হাসাপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এ আর খানের সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মণি-মুক্তা ভিন্ন সত্তা লাভ করে। বাংলাদেশের চিকিৎসাবিজ্ঞানে সৃষ্টি হয় এক নতুন ইতিহাস।

২০১৬ সালের ১৬ জুলাই পাবনার চাটমোহরের আটলংকা গ্রামে জোড়া মাথা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে যমজ শিশু রাবেয়া-রোকাইয়া। ২০১৯ সালের ১ আগস্ট রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ৩৩ ঘণ্টা ধরে একটি বিরল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাথা জোড়া লাগানো এই যমজ শিশুর অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।

জমজ শিশুর অস্ত্রোপচার ছাড়াও বৃক্ষমানব হিসেবে পরিচিতি পাওয়া খুলনার পাইকগাছার আবুল বাজানদারের অস্ত্রোপচারও সারাদেশে আলোচিত হয়েছিল। তার হাত ও পায়ে মোট ৬ বার অস্ত্রোপচার করে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়। বাংলাদেশের চিকিৎসকরা তখন জানান, এর আগে পুরো পৃথিবীতে আর মাত্র দুইজন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে তাদের জানা আছে। এসব বিরল রোগের চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচার দেশের চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা তৈরি করছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। তবে চিকিৎসার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে আরো অনেক জটিল রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা দেয়া সম্ভব হবে বলে তারা মনে করেন।

জটিল অস্ত্রোপচারসহ বিভিন্ন বিরল রোগের চিকিৎসায় দেশের চিকিৎসকরা একের পর এক সফলতা বয়ে আনছেন। এসব সম্ভব হচ্ছে চিকিৎসকদের অক্লান্ত পরিশ্রম, আন্তরিকতা আর দক্ষতার উন্নয়নের কারণে। দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এগিয়ে গেছে অনেকটাই। দেশে আজ প্রশিক্ষিত চিকিৎসক দল তৈরি হয়েছে; ফলে জটিল সব রোগের সুচিকিৎসা সম্ভবপর হচ্ছে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকরা জটিল অস্ত্রোপচারে সফল হচ্ছেন। ফলে রোগী সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারছে। চিকিৎসকদের এ সফলতা আমাদেরকে আশাবাদী করে। এ ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।

“এসব বিরল রোগের চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচার দেশের চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের প্রতি আস্থা তৈরি করছে বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। তবে চিকিৎসার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে আরো অনেক জটিল রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসা সহায়তা দেয়া সম্ভব হবে বলে তারা মনে করেন”

 

মন্তব্য

Beta version