আবহাওয়ার নেতিবাচক পরিবর্তনে চরম হুমকিতে পড়ছে বিশ্ববাসী। আবহাওয়া তথা জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন বিশ্বের মানবজাতির স্বাভাবিক বেঁচে থাকার পথে হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আটটি দেশের উপকূলীয় এলাকায় বিরূপ পরিবেশগত প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হবে বলে ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে। প্রতি বছর আবহাওয়ার বিরূপ আচরণে বাংলাদেশের পরিবেশ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। আবহাওয়ার এ বিরূপ প্রভাবের নেপথ্য অনুঘটক হিসেবে মানুষের কর্মকা-কে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আবহাওয়া ও জলবায়ুর সাম্প্রতিক পরিবর্তন সম্পর্কে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দেশে বছরের প্রথম থেকেই অস্থির আচরণ শুরু করেছে আবহাওয়া। গত বছরও বাংলাদেশসহ এই অঞ্চলের মানুষ ক্ষণে ক্ষণে আবহাওয়ার রূপবদল দেখেছে। মুখোমুখি হয়েছে ঘন ঘন নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি আর বন্যার।বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা, বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস আর আবহাওয়া-সংক্রান্ত একাধিক গবেষণায় জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা ইঙ্গিত দিচ্ছেন- এ বছরও বাংলাদেশকে এসবের জন্য তৈরি থাকতে হবে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অন্তত তা-ই বলছে। এর কারণ বঙ্গোপসাগরের ওপর উষ্ণবায়ু সক্রিয় আছে। শীত, গরম, রোদ-বৃষ্টি, নিম্নচাপ-ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ছাড়িয়ে এটা কৃষি, মৎস্যসহ সার্বিক উৎপাদন ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলছে। পাল্টে দিচ্ছে আমদানি-রপ্তানির হিসাব-নিকাশ। ছায়া ফেলছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডেও।
আবহাওয়া ও জলবায়ু সংক্রান্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশে গত এক যুগে প্রকৃতির অস্বাভাবিক আচরণের পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তির দিকে। যেমন- বৃষ্টি, বন্যা, ঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের কারণে দেশের উপকূল থেকে উত্তরাঞ্চল- সব এলাকার মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে কয়েক গুণ। গত বছরের বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে বৃষ্টি বেশি হয়েছে। বর্ষার শুরুতে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়, আর পুরো বর্ষায় বৃষ্টি বেশি হয়েছে ১১ শতাংশ। ফলে গত বছর বর্ষার শুরুতে ফসলের সমূহ ক্ষতি সাধিত হয়। গত বছর বন্যা হয়েছিল পাঁচ দফায়। বন্যা দীর্ঘায়িত হয়েছিল ৪১ দিন।
বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ পরিচালিত ‘বাংলাদেশে গ্রিন হাউসের প্রভাব এবং আবহাওয়ার পরিবর্তন, শীর্ষক গবেষণা গ্রন্থ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আবহাওয়া ক্রমে উত্তপ্ত হচ্ছে। গবেষণায় আরো জানা যায়, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা পানি বিভাজন এলাকাতে ভবিষ্যতে বৃষ্টিপাতের বৃদ্ধিতে বন্যার ভয়াবহতা বাড়বে। তবে যে তথ্যটি সবচেয়ে আশঙ্কাজনক তা হলো, তাপমাত্রা বৃদ্ধিজনিত কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠে বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কতকগুলো প্রভাব এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে। গত বছর চার মাস ধরে চারটি বড় ধরনের বন্যা হয়েছে। একই বছর ঘূর্ণিঝড় ‘আম্ফান’ হয়েছে। এরপরই আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় ‘নিসর্গ’। এত কম সময়ের ব্যবধানে একাধিক ঘূর্ণিঝড় আগে হয়নি কখনো। আগে প্রতি ১০ বছরে একটি বড় ঘূর্ণিঝড় হতো। এখন প্রতি দু-তিন বছরে বড় ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ছে বাংলাদেশ। এছাড়া তাপমাত্রা ও ঋতুভিত্তিক পরিবর্তনও চোখে পড়ছে। অনিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা তখন হচ্ছে না, যখন হওয়ার কথা না তখন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে সাইক্লোন, বন্যা ও খরার জন্য। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে অন্যত্র বসবাসে বাধ্য হচ্ছে, সহায়-সম্বল হারিয়ে হচ্ছে নিঃস্ব।
যেহেতু বিরূপ আবহাওয়ার জন্য মানুষের কর্মকা-ই মুখ্য দায়ী, সেহেতু আবহাওয়া ও জলবায়ুকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে চাই মানুষের বিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড তথা জনসচেতনতা।
মন্তব্য