করোনাভাইরাসের ভয়াবহতার কথা ভুলে যেতে বসেছে দেশের মানুষ। করোনা মহামারির প্রকোপ ভুলে গিয়ে অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে সবাই। সারাদেশে এ রকম অবস্থাই বিরাজ করছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার গতি-প্রকৃতি নিয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় আসেনি এখনো। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে। তা ছাড়া আবারো করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) আসার বিষয়টিও উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। অথচ দেশব্যাপী যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়টি উঠে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। নেই কার্যকর সরকারি নির্দেশনাও। দেশ করোনার আবির্ভাবের পূর্বের চিরচেনা পরিবেশে ফিরে গেছে অনেকাংশে। এমতাবস্থায় দেশের করোনা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে বিশেষ নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
দুই মাস ধরে দেশের করোনা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত রয়েছে। করোনায় দৈনিক রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা এবং শনাক্তের হার অনেকটা সহনীয় ও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। বেশিরভাগ দিনই করোনায় মৃত্যুহীন দিন পার করছে দেশ। দৈনিক শনাক্তের হার এক শতাংশের নিচে এবং আক্রান্ত নতুন রোগীর সংখ্যা থাকছে এক শ’র আশপাশে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে ঘোষণা দেওয়ার পরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে আছে; এটা আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। এ জন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে; সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। ‘করোনা ঝুঁকিমুক্ত বাংলাদেশ’ ঘোষণা দেওয়ার সময় এখনো আসেনি।
রাজধানীজুড়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই, বরং স্বাস্থ্যবিধি ভাঙার প্রতিযোগিতার চিত্রই বেশি ফুটে উঠেছে। পরিস্থিতি এমন যে, হাটবাজারগুলোয় দাঁড়ানোর ফাঁকা জায়গা পর্যন্ত নেই। শারীরিক দূরত্ব দূরের কথা, মাস্ক পরা মানুষের খোঁজ পাওয়াই যেন কঠিন হয়ে পড়ছে। প্রতিষ্ঠান কিংবা গণপরিবহণগুলোয় মানুষের উপচেপড়া ভিড়- যাদের অধিকাংশই পরছেন না মাস্ক, মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। মানুষের ধারণা- ‘করোনার দিন শেষ’। মানুষের মন-মানসিকতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মাস্ক পরার কথা তুলতেই অনেকে ক্ষেপে যাচ্ছেন, রাগান্বিত হচ্ছেন।
করোনা প্রতিরোধের জন্য গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি ইতোমধ্যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। সে মতে, করোনার গতি-প্রকৃতি নিয়ে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় আসেনি। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু অব্যাহত রয়েছে। করোনার নতুন ধরন আসার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।
দুই বছর ধরে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি-অবনতির ঘটনা ঘটছে। করোনার কয়েকটি ধরন ও তাদের গতি-প্রকৃতি প্রত্যক্ষ করেছি আমরা। নতুন ধরনের সংক্রমণ শুরু হলে তা সারাদেশে ছড়াতেও বেশি সময় লাগে না। প্রস্তুতি ও সতর্ক না থাকলে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যায়। কাজেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।
বিশ্বের অনেক দেশে করোনার মহামারি অব্যাহত রয়েছে। সারাবিশ্বে এখনো করোনায় দৈনিক এক হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার লাভ ঘটতে তেমন সময় লাগে না। দেশের করোনা পরিস্থিতি স্বস্তিদায়ক অবস্থায় থাকলেও পুনরায় অবনতি হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারি না। তাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্ক থাকাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
মন্তব্য