-->
শিরোনাম

দেশব্যাপী ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব

সচেতনতার বিকল্প নেই

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
দেশব্যাপী ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব
দৈনিক ভোরের আকাশ-সবার কথা বলে

বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে সারাদেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দেশে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। ডায়রিয়ার প্রকোপ রাজধানী ঢাকাতেই বেশি। গত মাসের দ্বিতীয়ার্ধের পরের ১৭ দিনের হিসাব মতে, রাজধানীর কলেরা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২০ হাজার ২৭১ রোগী। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ১৯২ জন শুধু মহাখালী কলেরা হাসপতালেই ভর্তি হচ্ছে। সেই হিসাবে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ৫০ রোগী হাসপাতালে আসছে। এদের মধ্যে ২৩ শতাংশই কলেরায় আক্রান্ত, যা অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি।

খবর মতে, গত ৩১ মার্চ আইসিডিডিআরবি’র কলেরা হাসপাতালে ভর্তি হয় ১২৮৫ জন, ১ এবং ২ এপ্রিল ১২৭৪ জন করে ভর্তি হয়। এর আগে কোনো বছর এই হাসপাতালে এতো বেশি রোগী ভর্তি হয়নি। এই হাসপাতালে ৩৫০টি শয্যা রয়েছে। রোগীর চাপ বাড়লে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে সাধারণত তাঁবু করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এবার দুটি তাঁবু খাটিয়ে তাতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে আইসিডিডিআরবির কলেরা হাসপাতালে।

শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয়, বর্তমানে সারা দেশে জেলা শহরগুলোতেও বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, গরম আসলে প্রতিবছরই এমনটি হয়। বৃষ্টি শুরু হলে কমে যায়। তবে অন্য বছরের তুলনায় এবার এই সময়ে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বিগ্ন দেশের স্বাস্থ্যবিভাগ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির পেছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে। প্রথমত, অনিরাপদ পানি পান করার ফলে ডায়রিয়া হচ্ছে। আরেকটা কারণ হচ্ছে বায়ুদূষণ ও পরিবেশ দূষণ। দূষিত বায়ু যখন খোলা খাবারে লাগছে, তা থেকে সেই খাবার অনিরাপদ হয়ে যাচ্ছে। আরেকটা কারণ, এটা সারাবিশ্বেই। যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের অনেকেরই পেটেরপীড়া দেখা দিচ্ছে।

অতি সম্প্রতি আমরা দেখেছি সারাদেশে ডায়রিয়া পরিস্থিতি উদ্বেগ তৈরি করেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, ঢাকা মহানগরের আশপাশে রোগীর সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটেছে। ডায়রিয়া মোকাবিলায় বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি পান করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, ‘সাবান পানি দিয়ে হাত ধোঁয়া, যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ না করা, খোলা অনিরাপদ খাবার না খাওয়া, এই কাজগুলো করা গেলে ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।’ মাছি পড়া খাবার, বাইরের শরবত, নানা ধরনের পানীয়, ভাজা-পোড়া খাবার পরিহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের পরামর্শ- ‘ডায়রিয়ায় শরীরের পানি বের হয়ে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। ডায়রিয়া হলে প্রতিবার টয়লেটে যাওয়ার পর যে পরিমাণ পানি শরীর থেকে বের হয়ে যাবে, সেই পরিমাণ স্যালাইন খেতে হবে। এ ছাড়া ভাইরাস নাকি ব্যাকটেরিয়ার কারণে আক্রান্ত তা বুঝে রোগীকে সেই ওষুধ দিতে হবে। তাছাড়া, যারা বিশুদ্ধ পানি কিনে খেতে পারেন না, তারা আধাঘণ্টা ধরে বলগ তুলে পানি ফুটাবেন, ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে এরপর সেই পানি পান করবেন। বাসার বাইরে যখন যাবেন, তারা যেন বাসা থেকে বোতলে করে এই ফুটানো পানি নিয়ে যান।’

যেভাবে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে এটা উদ্বেগ-উৎকন্ঠার বিষয়। তবে, গরম যতই তীব্র হোক আর রোগের প্রকোপ যতই বাড়ুক, মানুষ সচেতন হলে ডায়রিয়ায় মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যায়। এটুকু সাফল্য আমরা অনায়াসে অর্জন করতে পারি।

“শুধু রাজধানী ঢাকাতেই নয়, বর্তমানে সারা দেশে জেলা শহরগুলোতেও বাড়ছে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের হার। যেভাবে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে এটা উদ্বেগ-উৎকন্ঠার বিষয়। তবে, গরম যতই তীব্র হোক আর রোগের প্রকোপ যতই বাড়ুক, মানুষ সচেতন হলে ডায়রিয়ায় মৃত্যুর আশঙ্কা প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যায়। এটুকু সাফল্য আমরা অনায়াসে অর্জন করতে পারি”

মন্তব্য

Beta version