কোনো ধরনের দৃশ্যমান কারণ ছাড়াই নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। লক্ষ করা যাচ্ছে অহেতুক দামবৃদ্ধি। কিছুদিন আগে হঠাৎ করে সয়াবিন তেলের দামবৃদ্ধি নিয়ে সারা দেশে হুলস্থুল পড়ে গেল। চাল-ডাল থেকে মুরু কওে প্রায় সব ধরনের সবজিতেও বর্তমানে একই অবস্থা। দোকানিরা বলছেন, শীতের সবজি বিদায়ের সময়ের কারণে সরবরাহ কম এবং গ্রীষ্মের সবজি এখনও ভালোভাবে বাজারে না আসায় দাম বেশি। আসলে আমাদের দেশে কোনো কিছুর দাম বাড়ানো-কমানোর পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ থাকে না, ব্যবসায়ীদের মর্জিই এক্ষেত্রে চূড়ান্ত হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হন ভোক্তা। বর্তমান বাজারে অস্থিরতার পেছনেও যেন সেই মানসিকতাই কাজ করছে!
পবিত্র রমজান মাস চলছে। প্রতি বছরই রমজান মাসকে সামনে রেখে আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে নেওয়ার অঘোষিত একটি চেষ্টা চালিয়ে থাকেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। বর্তমান অস্থির বাজারের পেছনেও তেমনটি কাজ করছে কি-না, খতিয়ে দেখে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ ছাড়া নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং বাজারকে অস্থির করে তোলা কোনো সভ্য সমাজের কাজ নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা তেমনটিই দেখে আসছি। শুধু তাই নয়, ইচ্ছেমত বাড়িয়ে দেওয়া নিত্যপণ্যের দাম পরে সরকার অভিযান চালিয়ে কমাতে হিমশিম খায়। পূর্বে চাল কিংবা সয়াবিন তেলের বেপরোয়া দামবৃদ্ধির সময় তেমনটিই দেখা গেছে। এ অবস্থায় সার্বক্ষণিক বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের দাম যৌক্তিক রাখার বিকল্প নেই।
বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে চরম সংকটে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা। দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতিকে কেউ কেউ দাবানলের সঙ্গে তুলনা করছেন। সর্বত্রই বলা হচ্ছে- ‘নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন’। চাল-ডাল-তেল থেকে শুরু করে অতি প্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দামের একই অবস্থা। নিত্যপণ্যের দামের এমন ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার জন্য করোনা মহামারিতে উৎপাদন কমে যাওয়া, বিশ্ববাজারে অস্থিরতা, অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতা, সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীদের কারসাজিকে দায়ী করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। আবার কেউ কেউ অভ্যন্তরীণ বাজারের সুশাসনের অভাবকেও দায়ী করছেন।
আন্তর্জাতিক বাজারে যখন দাম বাড়ে তখন সাথে সাথে দেশের অভ্যন্তরে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে, যখন দাম কমে, তখন পণ্যের দাম কমার প্রবণতা দেখা যায় না। এ বিষয়টি ব্যবসায়ীদের মানসিকতায় নেই! বাজার সি-িকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের খামখেয়ালীপনায় জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠছে।নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী- এটি সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। অতিমারির সময় মানুষের আয় কমে গেছে, কর্মসংস্থান নেই অনেকের। তার ওপরে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থায় সুশাসনের অভাব থাকে, যে কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাস্তবতার আলোকে মূল্যস্ফীতি ও খাদ্য মূল্যস্ফীতির বিরাট ফারাক রয়েছে। এসব নিয়ে ভাবনা-চিন্তার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির হওয়ার জন্য যে অসাধু ব্যবসায়ীরা দায়ী- এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। অসাধু ব্যবসায়ীর অস্বাভাবিক পণ্য মজুদ বস্তুত বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। কাজেই, সর্বাগ্রে এসব অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্তদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। সঠিকভাবে আইন প্রয়োগ করে বাজারে চলমান অস্থিরতা দূর করতে হবে। বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তদারকির সঙ্গে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে হবে। অসাধুদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। মোটকথা, অহেতুক দামবৃদ্ধি কাম্য নয়।
মন্তব্য