সাওয়াল: রোজা অবস্থায় নখ কাটা, চুল কাটা বা ক্ষৌরকর্ম করা যাবে কি না?
জওয়াব: রোজা অবস্থায় হাতের পায়ের নখ কাটলে, চুল কাটলে বা কাটালে; ক্ষৌরকর্ম করলে বা করালে রোজার ক্ষতি হবে না। এর সাথে রোজা ভঙ্গের কোনো সম্পর্ক নেই। রোজা নষ্ট হয় মূলত পানাহার ও রতিক্রিয়া দ্বারা। তাই রমজানে রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় হাত পায়ের নখ কাটা, চুল কাটা বা অবাঞ্ছিত পশম মুড়ানো বা কামানো, ছাঁটা বা কাটা অথবা উপড়ানো জায়েজ আছে; এতে রোজার কোনো প্রকার ক্ষতি হবে না। তবে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতের খেলাফ কোনো কাজ সবসময়ই নিষেধ; বরং তা রমজানের ইবাদাতের মাসে আরো বেশি ক্ষতির কারণ। তাই রমজানে রোজা অবস্থায় কোনো প্রকার ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাতের বরখেলাফ কোনো কাজ অবশ্যই কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ও অধিক নিন্দনীয়। অনেককে দেখা যায় রমজানে দিনের বেলায় যে গুনাহের কাজটি করছেন না, রাতের বেলায় অবলীলায় তা করছেন; এটি মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়। (ইমদাদুল আহকাম; ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম)।
সাওয়াল: ফরজ গোসল না করে সাহরি খাওয়া যাবে কি না?
জওয়াব: রমজান মাসে রোজা পালনের উদ্দেশ্যে সাহরি খাওয়া সুন্নাত। যদি কেউ এমন অবস্থায় পতিত হন যে, ফরজ গোসল করে সাহরি খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই; তখন অজু করে বা হাত মুখ ধুয়ে আগে সাহরি খেয়ে নিবেন। পরে গোসল করে ফজরের নামাজ আদায় করবেন। কারণ সাহরি খাওয়ার জন্য পবিত্রতা ফরজ নয় বরং সুন্নাত; আর নামাজ আদায় করার জন্য পবিত্রতা ফরজ। গোসল ফরজ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা করে নিতে হবে, বিনা উজরে বেশি সময় অপবিত্র অবস্থায় থাকা সমীচীন নয়; আর রমজানে রোজা অবস্থায় অধিকক্ষণ অপবিত্র অবস্থায় থাকা মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়। এতে রহমতের ফেরেশতাদের কষ্ট হয়; তাই দ্রুত পবিত্রতা অর্জন করা জরুরি। (আল কুদূরী; ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)।
সাওয়াল: রোজা অবস্থায় মহিলাদের মাসিক হলে বা ঋতুস্রাব দেখা দিলে করণীয় কি?
জওয়াব: রোজা অবস্থায় মহিলাদের মাসিক আরম্ভ হলে বা ঋতুস্রাব (হায়েজ) ও প্রসবোত্তর স্রাব (নিফাস) দেখা দিলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে ওইদিন রোজার সম্মানার্থে ইফতার পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা ভালো। পরে এ রোজা কাযা আদায় করে নিবে। যারা উপযুক্ত উজরের কারণে রোজা রাখতে পারবেন না, তারা রমজানের সম্মানার্থে অন্যদের সামনে পানাহার করবেন না। এটা তাকওয়ার পরিচায়ক। (সূরা হজ্জ, আয়াত: ৩২)। অনুরূপভাবে রমজানে দিনের বেলায় মহিলাদের মাসিক বা ঋতুস্রাব বন্ধ হলে; সেই দিনের অবশিষ্ট সময় পানাহার থেকে বিরত থাকবে; এটি রোজার সম্মানে, রোজা হিসেবে নয়। এ দিনের রোজা কাযা আদায় করতে হবে। পরদিন থেকে রোজা পালন করবে। এ অবস্থায় মহিলাগণ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকবেন, সবার সাথে স্বাভাবিকভাবেই চলাফেরা করতে পারবেন। রান্না বান্না করা, দোয়া দুরূদ পড়া, তাসবীহ তাহলীল এ সবই স্বাভাবিকভাবে করবেন এবং সাহরি ও ইফতারেও শরিক হতে পারবেন। (ফাতাওয়া আযীযী)।
লেখক: বাংলাদেশ ইসলামিক স্কলার্স ফোরামের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম-মহাসচিব এবং আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সূফীজমের সহকারী অধ্যাপক
মন্তব্য