-->
রমাদানের মাসআলা মাসাইল

ফিকহে রমাদান: সওয়াল-জওয়াব

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
ফিকহে রমাদান: সওয়াল-জওয়াব
পবিত্র মাহে রমজান-রহমত ও নাজাতপ্রাপ্তির মাস

সওয়াল: রোজা ফরজ হওয়ার বয়স কত ও শর্ত কি?

জওয়াব: রোজা ও নামাজ ফরজ হওয়ার জন্য বয়স মুখ্য নয়, বালিগ হওয়া বা সাবালকত্ব অর্জন করাই রোজা ও নামাজ ফরজ হওয়ার বয়স। বিজ্ঞজনদের মতে, বাংলাদেশের আবহাওয়া ও পারিপার্শি^কতায় এটি সাধারণত ছেলেদের ক্ষেত্রে তেরো থেকে পনেরো বছর। মেয়েদের ক্ষেত্রে এগারো থেকে তেরো বছরে হয়ে থাকে; যদিও ক্ষেত্রবিশেষ নয় বছরেও হতে পারে। মূলত শরীর-স্বাস্থ্যের বৃদ্ধি, বংশধারা ও খাদ্যাভ্যাসসহ নানা প্রভাবক ও কিছু উদ্দীপক এক্ষেত্রে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। এ সময় ছেলেমেয়েদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটে; কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হয়, আচরণে পার্থক্য ও নতুনত্ব তৈরি হয়; নারী বা পুরুষ সত্তার স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টি হয়। এ সময় থেকে রোজা পালন ও নামাজ আদায় করা বাধ্যতামূলক ফরজ হয়। না পালন করলে কাজা আদায় করতে হয়, রোজা রেখে ভাঙলে কাফফারা দিতে হয়। এ সময় থেকে এদের সওয়াব ও গুনাহ লেখা শুরু হয়। অবহেলা করে রোজা না রাখা অনেক বড় গুনাহ। পিতামাতা বা অভিভাবক যদি এদের রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করেন; তবে তারাও গুনাহগার হবেন। তবে কেউ অসুস্থ বা অক্ষম হলে তার জন্য কাজা বা ফিদইয়ার বিধান রয়েছে। (ফাতওয়া শামী)।

সওয়াল : সাহরির শেষ সময় ও ফজরের আজান কি একই সময়?

জওয়াব: সাহরির সময় হলো তাহাজ্জুদ নামাজের সময়। মধ্যরাতের পর থেকে ফজর ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। ফজর ওয়াক্ত শুরু হয় সূর্যোদয়ের প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে। রমজান মাস ছাড়া বাকি এগারো মাস সাধারণ ফজরের আজান হয় সূর্য ওঠার এক ঘণ্টা আগে; অর্থাৎ সময় হওয়ার আধা ঘণ্টা পরে। আর ফজরের জামাত আরম্ভ করা হয় বেলা ওঠার আধাঘণ্টা আগে, তথা সময় হওয়ার এক ঘণ্টা পরে। রমজান মাসে এর ব্যতিক্রম করা হয়, ফজরের সময় হওয়ার পাঁচ-দশ মিনিট পরই আজান দেওয়া হয়। সুতরাং সাহরি আজান পর্যন্ত খাওয়া যাবে না; বরং সময়সূচি জেনে সাহরির সময়ের মধ্যেই সাহরি খাওয়া শেষ করতে হবে। ফজরের আজান পর্যন্ত বিলম্ব করা যাবে না। (আল উলুমুশ শরইয়্যা)।

সওয়াল: সাহরির খাওয়া অবস্থায় ফজরের আজান হলে করণীয় কি?

জওয়াব: সাহরির খাওয়া অবস্থায় ফজরের আজান হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করতে হবে। যথারীতি রোজা পালন করবেন; তবে শেষে সময়ের পর ভুলক্রমে পানাহার করায় রোজা ভঙ্গ হয়েছে বিধায় এই রোজাটি পুনরায় কাজা আদায় করতে হবে। কিন্তু আজান শোনার পরও যদি পানাহার বন্ধ না করেন, তা হলে কাজার সঙ্গে কাফফারাও আদায় করতে হবে। যেহেতু প্রথমে ভুলবশত খাওয়া হলেও পরে ইচ্ছাকৃত খাওয়ার দ্বারা রোজা ভঙ্গ করা হয়েছে। স্মর্তব্য যে, আজান কখনো সাহরির সময়ের মধ্যে দেওয়া হয় না; বরঞ্চ আজান ফজরের ওয়াক্ত হওয়ারও একটু পরে দেওয়া হয়। কারণ সাহরির সময় বাকি থাকলে ফজরের ওয়াক্ত হয় না, আর ওয়াক্ত হওয়ার আগে আজান দিলে আজান আদায় হবে না। মনে রাখতে হবে আজান হলো ফজরের নামাজের জন্য সাহরি খাওয়া বন্ধ করার জন্য নয়। তাই সাহরি তার আগেই বন্ধ করতে হবে। উল্লেখ্য, হাদিস শরিফে যে আজানের পরেও খাওয়ার কথা আছে, তা হলো তাহাজ্জুদের আজান, ফজরের আজান নয়। যা এখনো মক্কা ও মদিনায় প্রচলিত আছে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী)।

লেখক: বাংলাদেশ ইসলামিক স্কলার্স ফোরামের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম-মহাসচিব এবং আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সূফীজমের সহকারী অধ্যাপক

মন্তব্য

Beta version