-->
শিরোনাম

ফসল হারিয়ে কৃষকের কান্না

বাঁধ নির্মাণে অপচয় কাম্য নয়

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
ফসল হারিয়ে কৃষকের কান্না
দৈনিক ভোরের আকাশ-সবার কথা বলে

উপযোগিতা এবং কার্যকারিতা যাচাই না করে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অসাধু উদ্দেশ্যের। দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝে মাঝেই সরকারের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের অহেতুক ব্যয় নিয়ে এমন খবর সংবাদপত্রে প্রায়ই প্রকাশ হতে দেখা যায়। প্রকাশিত খবরের তথ্য থেকে জানা যায়, এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন হয় অবহেলা আর অসৎ উদ্দেশ্যে।৯ এপ্রিল ‘দৈনিক ভোরের আকাশ’ এমন একটি অপচয় প্রকল্পের তথ্য নিয়ে প্রধান প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যার শিরোনাম ‘পাঁচ অর্থবছরে ৬২১ কোটি টাকা গচ্চা’।প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সুনামগঞ্জের হাওরে ফসল রক্ষায় প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও এর সুফল পাচ্ছে না কৃষক। কোনো কাজে আসেনি সরকারের এই উদ্যোগ।

প্রতিবেদনে বলা হয়- সুনামগঞ্জে গত পাঁচ অর্থবছরে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামত কাজে সরকারের ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬২১ কোটি টাকা। এ সময়ে কাগজে-কলমে নতুন নির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে ৩ হাজার ২৬৯ কিলোমিটার বাঁধ। অথচ শুষ্ক মৌসুমে একই বাঁধ সংস্কারে বারবার অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে নেওয়া হচ্ছে না কার্যকর ব্যবস্থা। অকাল বন্যায় চোখের সামনে ডুবছে কৃষকের সোনালি ধান। হাওরপাড়ে কান্না আর চাপা ক্ষোভ কৃষকদের মাঝে। রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। যতটুকু ফসল আছে, তা-ও শেষ পর্যন্ত টিকবে কিনা- এ নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।প্রকাশিত খবরে আরো জানা গেছে, প্রতি বছর বাঁধ সংস্কারে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা দুর্নীতির আশ্রয় নেয়। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করে অস্থায়ী বাঁধ সংস্কারে বারবার সরকারি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়Ñ যে ব্যয়ের কোনো সুফল নেই। সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার ৪২টি হাওরে এ বছর ৭২৭টি পিআইসি ১৩৫টি ক্লোজারসহ ৫৩২ কিলোমিটার বাঁধ মেরামত ও সংস্কারের জন্য সরকার এ বছর ১২১ কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়। কিন্ত নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হয়নি। এমনকি বেশিরভাগ বাঁধ বালু মাটি দিয়ে নির্মিত হয়েছে, যার ফলে পাহাড়ি ঢল ও উজানের পানি নেমে চারটি উপজেলার প্রায় ১০টি হাওরের বোরো ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে সময়মতো অর্থ ছাড় করা হয় না; এমনকি মনিটরিংও ঠিকমতো না হওয়ার অভিযোগ কৃষকের। ২০২০-২১ অর্থবছরে সুনামগঞ্জের ১১ উপজেলায় ৫২টি হাওরে এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে। সেই জমির ফসল রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ৬১৯ কিলোমিটার মাটির বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে ১৩৩ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। অথচ সবই ফলশূন্য।জানা গেছে, এসব কারণে এবারের পাহাড়ি ঢলে ওই জেলার ৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। ১৩৭টি হাওরই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।হাওরের মানুষের এমন দুঃসহ পরিস্থিতির জন্য যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া এখন জরুরি। জনবান্ধব সরকার ও সরকারবান্ধব জনতার রাষ্ট্রীয় অধিকার এভাবে নস্যাৎ হতে পারে না। প্রজা প্রতিপালনের দায় থেকে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

মন্তব্য

Beta version