-->
শিরোনাম
নববর্ষ-১৪২৯

প্রাণ ফিরে পাক উৎসবের অর্থনীতি

এস এম মুকুল
এস এম মুকুল
প্রাণ ফিরে পাক উৎসবের অর্থনীতি
বৈশাখে দেশীয় কুটির শিল্প, দেশীয় পোশাক, দেশীয় খাবার, হস্তশিল্পজাত গয়নাগাটি, ফুল, মুদ্রণশিল্প ইত্যাদির একটি বড় বাজার তৈরি হয়

জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বাঙালি প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখ। এ দিনটিকে কেন্দ্র করে চাঙা হয়ে ওঠে বাংলাদেশের অর্থনীতি। পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষের উৎসব কেবল আমাদের ঐতিহ্যের ধারক নয়, এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। বৈশাখী অর্থনীতির বড় বৈশিষ্ট্য হলো গ্রামীণ অর্থনীতির সম্প্রসারণ। বৈশাখকে ঘিরে যে ধরনের পণ্যের কেনাবেচা হয় তার সবই আমাদের দেশীয় পণ্য। ফলে বৈশাখের উৎসব পরিসরে যত বড় হচ্ছে, আমাদের দেশের অর্থনীতিও ততটাই শক্তিশালী হচ্ছে। এ সময়ে বিভিন্ন গ্রামীণ মেলায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পণ্য যত বেশি বিক্রি হয় গ্রামীণ অর্থনীতি ততই চাঙ্গা হয়। বৈশাখে দেশীয় কুটির শিল্প, দেশীয় পোশাক, দেশীয় খাবার, হস্তশিল্পজাত গয়নাগাটি, ফুল, মুদ্রণশিল্প ইত্যাদির একটি বড় বাজার তৈরি হয়। করোনার কারণে দুই বছরে বৈশাখী ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রত্যক্ষভাবে ৩০ হাজার পরোক্ষভাবে ৬০ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। দোকান মালিক সমিতির সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় পণ্যের ব্যবসায়ীদের সর্বস্ব বিনিয়োগ হয়ে থাকে পহেলা বৈশাখে। কিন্তু প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে বর্ষবরণ উৎসব বন্ধসহ মার্কেট-দোকানপাট বন্ধ থাকায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। কারণ পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে যে মাল তৈরি হয় সেটা অন্য সময় বিক্রি হয় না। এক বছর পরে আর এ পণ্যের চাহিদা থাকে না।

বৈশাখী উৎসব ঘিরে আর্থিক লেনদেন স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি হয়। এ সময় বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো তাদের এটিএম, ক্রেডিট কার্ড ও ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবস্থায় অর্থের পর্যাপ্ত জোগান রাখে। মোবাইল ব্যাংকিং ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমেও লেনদেন বাড়ে। জানা গেছে, ২০১৮-১৯ দুই বছর ধরে পহেলা বৈশাখকে ঘিরে সারাদেশে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা-বাণিজ্য হয়েছে। কিন্তু ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনা ভাইরাসের কারণে সব বন্ধ হয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে পহেলা বৈশাখের পর ঈদ বাণিজ্যেও বিপর্যয়ের মুখে পড়বেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ দোকান মালিক সূত্র জানায়, বৈশাখের বাজারে দেশীয় বাঁশ, বেত, কাঠের তৈরি জিনিস, মাটির তৈজসপত্র, খেলনা, প্লাস্টিকের খেলনা, বিভিন্ন ধরনের মুড়িমুড়কি, নাড়ু বাজারেই বিক্রি হয় প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার। এর বাইরে আরো প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অন্য পোশাক বিক্রি হয় বৈশাখী বাজারে। এছাড়া ইলিশের বিকিকিনি হয় প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার। একইভাবে মিষ্টির দোকানগুলোয় বৈশাখে বিক্রি হয় ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকার মিষ্টি। সবমিলে বৈশাখে কেবল পোশাক বিক্রি হয় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২০১৭ সালের গবেষণা তথ্য অনুযায়ী, আয়-ব্যয়ের হিসেবে এবার বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে বাংলাদেশে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্যের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করা হয়। শুধু ফ্যাশন হাউসগুলোতে বেচা-কেনার পরিমাণ ধরা হয় ১৭৫০ কোটি থেকে ১৭৬০ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে ফুটপাত ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য পণ্য ক্রয়-বিক্রয় সম্ভাবনা ১২০০ কোটি টাকা। অর্র্থনীতির নানা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি দশকে বৈশাখী বাজার ফুলে-ফেঁপে উঠছে। তার উপর নববর্ষের বোনাস এই বাজারকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পয়লা বৈশাখকে ঘিরে দৈশের অর্থনীতির গতি চাঙা হয়, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে দেশের ব্যাংকগুলোর প্রায় সব কার্ড ও মোবাইল পেমেন্ট সার্ভিসে কেনাকাটা ও খানাপিনায় ছাড়ের হিড়িক চলছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়েও ক্রেতাদের জন্য বিশেষ বিশেষ ছাড় ও টাকা ফেরতের (ক্যাশব্যাক) সুবিধা রয়েছে। পহেলা এপ্রিল থেকে অধিকাংশ ব্যাংকই ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড কেনাকাটায় ১০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে। পাশাপাশি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ব্যাংকের লেনদেন-সেবা বা পেমেন্ট সার্ভিসগুলোও ২০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার দিচ্ছে। কিছু ব্যাংক পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে চলতি সপ্তাহে বিভিন্ন ছাড়ের ঘোষণা দেবে। বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে বিভিন্ন ধরনের ছাড় ও আকর্ষণীয় অফার দিয়ে দেশি ও বিদেশি ফ্যাশন হাউসগুলো হুলস্থূল ফেলে দিয়েছে। অভিজাত শপিংমল থেকে শুরু করে ছোট-বড় বিপণিবিতান, অনলাইন কেনাকাটা, মোবাইল অপারেটর, বিউটি পার্লার, সর্বত্রই ছাড় দিচ্ছে বিক্রেতারা। অনেক ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকছে ক্যাশব্যাক অফার। আর এসব অফার ও ছাড়ের খবর ফেসবুক ও পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে।

বিলাসবহুল শপিং মল থেকে শুরু করে ফুটপাথ ছেয়ে গেছে বৈশাখী সামগ্রী ও রকমারি পোশাকে। বৈশাখ উপলক্ষে দেওয়া হচ্ছে আকর্ষণীয় অফার। বৈশাখী অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে নববর্ষের বোনাস। মার্চের বেতনের সঙ্গে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার উৎসব-ভাতা পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। এটি অর্থনীতিকে আরো গতিশীল করবে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। বৈশাখী অর্থনীতির বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া হিসাবে এবারের পহেলা বৈশাখ ঘিরে ১২ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। বৈশাখী পোশাক, ইলিশ, মিষ্টি, ফুল, চুড়ি, মালা, দুল, মাটির তৈরি পণ্য, কুটিরশিল্পসহ নানা ধরনের পণ্য বিক্রি থেকে এই বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক লেনদেন হয়। শুধু পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে গ্রামে-গঞ্জে-শহরে যে মৌসুমি বাণিজ্য হয়, তাতে যে পরিমাণ মানুষের কর্মসংস্থান হয় তা হিসাবে আনলে এই অর্থনৈতিক কর্মকা-ের পরিমাণ আরো বেড়ে যাওয়ারই কথা। একাধিক ফ্যাশন হাউসের উদ্যোক্তাদের তথ্যানুযায়ী, সারা বছর ফ্যাশন হাউসে যে ব্যবসা হয়, তার ২৫ শতাংশ হয় পহেলা বৈশাখে আর ৫০ শতাংশ হয় রোজার ঈদে। বাকি ২৫ শতাংশ সারা বছর। তবে আধুনিক সমাজে বৈশাখী চেতনা ও আনন্দ দ্রুত বিকশিত হওয়ায় বৈশাখী পণ্যের বেচাকেনা অচিরেই ৩৫ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নববর্ষে পান্তা খাওয়ার বিষয়টি জনপ্রিয় হলেও এটিকে অনেকে বাংলার কৃষকের অর্থনৈতিক দুরবস্থার সঙ্গে মশকরা হিসেবে তুলনা করেন। গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষ পহেলা বৈশাখে সকালে পান্তা ভাত, পেঁয়াজ আর কাঁচামরিচ বা শুকনো মরিচপোড়া দিয়ে তৃপ্তি করে খান। বলা বাহুল্য, এটি কৃষক পরিবারের হামেশা ব্যাপার মাত্র। কৃষকের পক্ষে পান্তা দিয়ে ইলিশ খাওয়া দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কীইবা হতে পারে! তাই এ নিয়ে সংস্কৃতির নামে মশকরা আমাদের বাঙালিয়ানার পরিচয় হতে পারে না। কাজেই পান্তা-ইলিশ খাওয়া আমাদের ঐতিহ্য নয়। মিডিয়ায় পান্তা-ইলিশের বিষয়টিকে অধিক গুরুত্বারোপের কারণে হুজুগে বাঙালি এখন পান্তা-ইলিশকেই তাদের সংস্কৃতি মনে করছে। এই অপসংস্কৃতির প্রবণতা বন্ধ করার ক্ষেত্রে সরকার, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও মিডিয়াকে ভূমিকা নিতে হবে এখনই। তারপরও সত্যি, বাংলা বর্ষবরণকে উপলক্ষ করে নতুন পোশাকের সঙ্গে খাবার তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ইলিশ। জানা গেছে, একদিনের এ উৎসবে কয়েকশ’ কোটি টাকার ইলিশ বেচাকেনা হয়।

বৈশাখে নতুন পোশাক পরা এখন ফ্যাশন। আর এই সুযোগে বড় বাণিজ্য হয় দেশীয় ফ্যাশন হাউসগুলোর। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো বৈশাখী ডিজাইনে নানা পোশাক বাজারজাত করে। রাজধানীর আজিজ মার্কেট, বসুন্ধরা সিটির দেশী দশ, বেইলি রোডসহ দেশীয় বুটিকশিল্পের উদ্যোক্তাদের ব্যস্ততম সময় কাটে বৈশাখী উৎসবের পোশাক তৈরির কাজে। ফ্যাশন হাউসগুলোতে এবং সারা দেশের বিভিন্ন মার্কেটে বৈশাখী রং-রূপে টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, পায়জামা, শাড়ি, ছোটদের ও মেয়েদের পোশাকসহ নকশি কাঁথা, পটচিত্র, অলঙ্কারের নকশা, আদিবাসী বয়নশিল্পের অলঙ্করণ, প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর অলঙ্কৃত নকশা, কান্তজি মন্দিরের টেরাকোটা ফলকচিত্র, আল্পনা, লোকজ ঘরানার শিল্পীর শিল্পকর্ম, নকশি পিঠার অলঙ্করণ, টেরাকোটা পুতুল, দেশজ বাদ্যযন্ত্রসহ নানা লোকজ উপাদান ব্যাপক বিক্রি হয়। জেনে রাখা দরকার, সারা দেশে ব্যবহƒত অর্ধেক বৈশাখী পোশাক তৈরি হয় কেরানীগঞ্জে। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটসহ জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাইকাররা এখান থেকে বিভিন্ন ডিজাইনের বৈশাখী পোশাক নিয়ে যান। মালিক সমিতির বিবৃতি অনুযায়ী, প্রতিদিন একেকটি দোকানে সর্বনি¤œ ২ থেকে ৫-৭ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। কেরানীগঞ্জ, ইসলামপুর, নবাবপুরসহ পুরান ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি মার্কেটে এক মাস আগে থেকেই বৈশাখের পোশাক কেনাকাটা শুরু হয়। এছাড়া রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেট, নিউমার্কেট, গাউছিয়া, কাঁটাবন, এলিফ্যান্ট রোড, গুলশান, মিরপুর, উত্তরাসহ বিভিন্ন মার্কেটে ও শপিং মলে ব্যাপক কেনাবেচা হচ্ছে বৈশাখের পোশাক।

ঐতিহ্যগতভাবে বৈশাখী মেলার সূতিকাগার হলো বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের হাটবাজার। সেই গ্রাম্য মেলাই শহরে এসে নতুন রূপের পসরা সাজিয়েছে। পহেলা বৈশাখ উদযাপনে শহরের তুলনায় কোনো অংশে কম যায় না মফস্বল শহর কিংবা গ্রাম। সেখানে প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলে বিভিন্ন মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের খেলনাসামগ্রী, মিষ্টিজাতীয় পণ্য, কাঠের আসবাবপত্রসহ নানা ধরনের পণ্যের সমারোহ ঘটে। আর এই বিপুল বিক্রির টাকার প্রবাহ বাড়ে গ্রামীণ অর্থনীতিতে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) উদ্যোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গ্রামীণ মেলার আয়োজন করা হয়। শহরে পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে পুরোদমে চলছে কেনাকাটা। বিলাসবহুল শপিং মল থেকে শুরু করে ফুটপাথ ছেয়ে গেছে বৈশাখী সামগ্রীতে। বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে বৈশাখী তাঁত শিল্পমেলা। বৈশাখী উৎসবকে ঘিরে কুটির শিল্পোদ্যোক্তারাও বাহারি পণ্যসামগ্রীর সমাহার নিয়ে আসবেন। বাঁশ ও মাটির তৈজসপত্র- বাঁশি ও হরেক রকমের খেলনা, চুড়ি, মালা, দুল; খাদ্যপণ্য- খই, মুড়িমুড়কি, শুকনো সন্দেশ, বালুশা, তিলের তৈরি রকমারি ও মুখরোচক খাবারে ভরে উঠবে মেলাপ্রাঙ্গণ। প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তির বাংলাবর্ষ বিদায় এবং বরণ উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি সম্প্রদায় তিন দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করে। উৎসবটি পালিত হয় ২৯ থেকে ৩০ চৈত্র এবং পহেলা বৈশাখ বা ১২, ১৩ ও ১৪ এপ্রিল। পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব বৈসাবি (অন্য নাম- বৈসুক, সাংগ্রাইং, বিজু) ঘিরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক জীবন। বৈসাবি ও বৈশাখী উৎসব ঘিরে রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় ধীরে ধীরে জমে ওঠে কেনাকাটার ধুম। আর এই উৎসবকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা হয়ে উঠছে পাহাড়ের অর্থনীতি।

বাংলা বর্ষবরণের ইতিহাস থেকে জানা যায়, বাংলা সনের প্রথম দিন দোকানপাটের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া হিসেবে পালন করা হতো হালখাতা। ব্যবসায়ীরা এদিন তাদের দেনা-পাওনার হিসাব সমন্বয় করে হিসাবের নতুন খাতা খোলেন। এজন্য ক্রেতাদের আগের বছরের সব পাওনা পরিশোধ করার কথা বিনীতভাবে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। এ উপলক্ষে নববর্ষের দিন তাদের মিষ্টিমুখ করান ব্যবসায়ীরা। আধুনিক হালজমানায় হালখাতার খাবারের আয়োজনে মিষ্টির পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে অন্যান্য খাবার। ক্ষীর, হালিম, কোমল পানীয়, বিরিয়ানি কিংবা তেহারির ব্যবস্থাও থাকে। মূলত হিসাবের খাতা হালনাগাদ করার এ রীতি থেকেই উদ্ভব হয় হালখাতার। কিন্তু তিন দশক আগেও বাংলা নববর্ষের মূল উৎসব ছিল হালখাতা। তবে হালখাতার হাল আগের মতো না থাকলেও চিরায়ত এই আনুষ্ঠানিকতা হারিয়ে যায়নি একেবারে। এখনো স্বর্ণালঙ্কারের দোকানে বিশেষ করে ঢাকার আদি ব্যবসায়ী পরিবারে মহাসমারোহে পালিত হয় এ রীতি। পুরান ঢাকার বাজারগুলোতে লাল মলাটের খাতা খুলে বসেন ছোট ছোট দোকানিরা। নতুন বছরের শুরুতেই ব্যবসায়ীরা টাকা পরিশোধের তাগিদ না দিয়ে হালখাতার দাওয়াত দেন।

লেখক: কৃষি-অর্থনীতি বিশ্লেষক, উন্নয়ন গবেষক এবং কলাম লেখক

মন্তব্য

Beta version