করোনাভাইরাসের প্রকোপে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা হেতু সাম্প্রতিক সময়ে দেশে কতিপয় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে। কোভিড মহামারিতে স্থবির হয়ে পড়া বিশ্ববাণিজ্যের নাজুক পরিস্থিতি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বভাবসুলভ প্রভাব ফেলবে- এটাই স্বাভাবিক। বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোও যেখানে পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থা অপেক্ষাকৃত ভালোই বলতে হবে। বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিতিশীলতা দেখা দেওয়ায় দেশের বাজারেও কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি নেই। বুধবার (১৩ এপ্রিল) বাংলা নতুন বছরে পদার্পণ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এরূপ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণে বলেন, ‘বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিতিশীলতা দেখা দেওয়ায় দেশেও কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে দৃঢ়ভাবে জানাতে চাই যে, দেশে চালসহ কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই।’
নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি রমজান মাসজুড়ে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যমতে, চলতি পবিত্র রমজান মাসব্যাপী টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দিয়ে প্রায় এক কোটি পরিবারকে বেশ কয়েকটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সাশ্রয়ী দামে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। রাজধানী ঢাকায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিদিন ১৫টি ফ্রিজার ভ্যানে করে সাশ্রয়ী দামে মাংস, ডিম এবং দুধ বিক্রির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগ গ্রহণের ফলে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ইতোমধ্যে কমে স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে বলে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। এ ছাড়া, সরকার আসন্ন ঈদ উপলক্ষে এক কোটি ৩৩ হাজার ৫৪টি ভিজিএফ কার্ডের বিপরীতে এক লাখ ৩৩০ মেট্রিক টনের বেশি চালের বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসের মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এই যুদ্ধের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে, জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর এ দাবি ও যুক্তিকে প্রকৃতপক্ষে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কেননা আমরা দেখছি, চলমান ইউক্রেন সংকট বিশ্ববাজারে টানাপড়েন সৃষ্টি করেছে। ফলে স্বভাবতই আন্তর্জাতিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পণ্য পরিবহণেও ভাড়া ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোর মতো আমাদের দেশেও বেশকিছু পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমাদের অর্থনীতির মূলশক্তি কৃষি খাত। উপেক্ষা করার সুযোগ কম, বর্তমান সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির ফলে চাল, শাকসবজি, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ উৎপাদনে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। তা ছাড়া বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি বোরো মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন আশা করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী মহামারির কালে এসব সংবাদ দেশবাসীর মধ্যে যে আশার সঞ্চার করে তা বলাই বাহুল্য। বঙ্গবন্ধুকন্যার কণ্ঠেও উচ্চারিত হয়েছে সাহসজাগানিয়া বাণী। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়চিত্তে ঘোষণা করেছেন, তার সরকার চুপচাপ বসে নেই, সাধ্যমতো সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনার। এ বলিষ্ঠ উচ্চারণ দেশের সর্বস্তরের জনগণের জন্য নিঃসন্দেহে স্বস্তির সংবাদ, বহুল কাঙ্ক্ষিত।
সরকারের সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অর্থনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে দেশের গণতান্ত্রিক ধারা সমুন্নত রেখে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতাসহ চলমান প্রতিটি সমস্যা দূরীভূত হোক। বাজারকে অস্থির করে তোলা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের অপচেষ্টাকে ধূলিসাৎ করে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক; জাতির উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি উচ্চারণ বাস্তব হয়ে প্রতিভাত হোক। নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধি মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ সফলতা পাক।
মন্তব্য