-->
শিরোনাম

দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা

সুযোগের সদ্ব্যবহারে সুফল মিলবে

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিরতা
দৈনিক ভোরের আকাশ-সবার কথা বলে

চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে আন্তর্জাতিক বাজার বেশ খানিকটা অস্থির। আমদানি বেড়ে যাওয়ায় প্রায় প্রতিটি দেশে দাপট বাড়াচ্ছে বিশ্ব লেনদেনের প্রধান মুদ্রা মার্কিন ডলার। সাম্প্রতিক সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নেতৃত্বের প্রশ্নে চমক জাগানো ‘সুপারস্টার’ চীন করোনার লকডাউনে পড়েছে নতুন করে। শ্রীলঙ্কার দেউলিয়াপনা কিংবা পাকিস্তানের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় টালমাটাল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। এসব ঘটনার ফলে স্বভাবতই পণ্যের কাঁচামাল, তৈরি পোশাকসহ রপ্তানি পণ্যের নিরাপদ বাণিজ্যস্থল এখন বাংলাদেশ। এতে করে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রশ্নে অপার সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিযোগী দেশগুলোতে চলতি সমস্যার কারণে একদিকে যেমন আমাদের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তেমনি ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তাছাড়া আমদানিনির্ভর হওয়ায় শুল্ক ব্যবস্থাপনায় আমাদের জটিলতা রয়েছে। কাজেই নতুন ক্রেতাদের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আমদানি জটিলতা নিরসনের বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। এক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের সমস্যার মধ্যে ক্রেতা আকৃষ্ট করতে বা নতুন ক্রেতাদের চাহিদার ভিত্তিতে পণ্য সরবরাহ করাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা। তবে ডলারের দাম বৃদ্ধি, কাঁচামাল আমদানি জটিলতা এবং শিল্পখাতে গ্যাস সরবরাহ সমস্যা তৈরি হওয়ায় রপ্তানি পণ্যের উৎপাদনে জটিলতা দেখা দিতে পারে। ফলে এই পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে একযোগে সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ী, অর্থনীতি বিশ্লেষকরা।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আমাদের রপ্তানি গ্রোথ ইতিবাচক। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রপ্তানি শিল্পের আকার ৩৫ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে পরিণত হয়েছে। জিডিপিতে এ শিল্পের অবদান প্রায় ১১ শতাংশ। পোশাকশিল্পকে কেন্দ্র করে আজ সমগ্র অর্থনীতি আবর্তিত হচ্ছে ব্যাংক, বীমা, বন্দর, হোটেল, পর্যটন, ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ ও আনুষঙ্গিক শিল্পসহ বিভিন্ন শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। অন্যদিকে সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র পাশের দেশগুলোতে। চীন, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং মিয়ানমারসহ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো বেশ খানিকটা অসুবিধার মধ্যে আছে। চীনে এখন লকডাউন চলছে। এ কারণে চীনের ওপর নির্ভরশীল ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়ার মতো দেশগুলো এখন সমস্যার মধ্যে আছে। ফলে ক্রেতারা তাদের কাছ থেকে পণ্য নিতে পারছে না। শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি নতুন করে বলার কিছু নেই- অব্যাহত নাজুক পরিস্থিতি। পাকিস্তানের পরিস্থিতি এখন ঘোলাটে অবস্থা। এসব কারণে ক্রেতারা ঝুঁকছেন বাংলাদেশের প্রতি। বিশ্ব পরিস্থিতিতে বর্তমানে ক্রেতাদের জন্য নিরাপদ বাণিজ্য কেন্দ্র হচ্ছে এখন বাংলাদেশ। ঠিক এই সময়ে যদি আমরা তাদের চাহিদা পূরণ করতে না পারি, পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে রপ্তানি চুক্তি রক্ষা করতে না পারি, তাহলে যেসব নতুন ক্রয়াদেশ নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে, তা আমাদের হাতছাড়া হবে।

দেশের রপ্তানি খাতের সাম্প্রতিক চিত্র বেশ ইতিবাচক। রাশিয়া নিয়ে আপাতত চিন্তার কোনো কারণ নেই; যদিও চলমান যুদ্ধ দীর্ঘমেয়াদি হলে তা ইউরোপের দেশগুলোতে প্রভাব ফেলবে। আর এর সামগ্রিক প্রভাব পড়বে প্রতিটি দেশের অর্থনীতিতে। এ বিষয়টি আমাদের নজর রাখতে হবে। চীনসহ প্রতিযোগী অন্যান্য দেশ সমস্যার মধ্যে থাকায় তা আমাদের জন্য সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে। এ অবস্থায় আত্মতুষ্টিতে না ভুগে এসব সুযোগ কিভাবে কাজে লাগানো যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে। শতভাগ সুযোগের সদ্ব্যবহারের জন্য চাই যথাযথ পরিকল্পনা, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়ন এবং ব্যাপক উদ্যমী কর্মতৎপরতা।

মন্তব্য

Beta version