-->

ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি ও প্রতিকার

এস ডি সুব্রত
এস ডি সুব্রত
ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি ও প্রতিকার
ঈদযাত্রায় প্রতিদিন বাড়ি যাবে গড়ে ৩০ লাখ মানুষ

ঈদে যাত্রায় যানবাহনে ভোগান্তি ঈদ আনন্দ বিঘ্নিত হয় অনেকখানি। এ থেকে রেহাই মিলছে না কিছুতেই। যানবাহন চলাচলে এবার বিধিনিষেধ না থাকায় গতবারের তুলনায় আসন্ন ঈদে প্রায় দ্বিগুণসংখ্যক মানুষ ঢাকা ছাড়তে পারেন। পথে পথে তাদের ভোগান্তিতে পড়ারও আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। যানজট, ভাঙা রাস্তার দুর্ভোগ রয়েছে। রয়েছে মহাসড়কে রাস্তার কাজ। এর সঙ্গে যোগ হতে পারে তীব্র গরম। ঈদযাত্রায় টিকিটের বাড়তি দাম, যানবাহন সংকট, ভাঙাচোরা রাস্তার পাশাপশি সড়ক-মহাসড়কে যানজটের সঙ্গে যুদ্ধ করে এবারও যেতে হবে স্বজনদের কাছে এমন সংকেত পাওয়া যাচ্ছে। কোন কোন বিশেষজ্ঞদের মতে ঈদযাত্রায় প্রতিদিন বাড়ি যাবে গড়ে ৩০ লাখ মানুষ। যাত্রীদের বড় অংশ যানবাহন সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর সাথে যানবাহনের ভোগান্তি। রয়েছে দুর্ঘটনার শঙ্কা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক মত রেখেছেন, প্রতিবারই ঈদের আগে বলা হয়, যাত্রা নির্বিঘ্ন হবে। এর পরও ভোগান্তি হয়। সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) তথ্য বলছে, বাস, ট্রেন, লঞ্চ, ব্যক্তিগত গাড়ি ও মোটরসাইকেলে করে ঈদের সময়ে প্রতিদিন ১৭ থেকে ১৮ লাখ মানুষের ঢাকা ছাড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি ১২ থেকে ১৩ লাখ মানুষকে ঢাকা ছাড়তে হবে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্রেনের ছাদ ও লঞ্চের অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁঁকি বাড়বে। সড়কে গাড়ি ও যাত্রীর চাপ স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে তিন-চারগুণ বেশি হয়ে গেলে বিদ্যমান ব্যবস্থাপনা কাজে লাগবে না বলে মনে করেন অনেকে। ফেরি-সংকট, পুরোনো লঞ্চ ও ফিটনেসহীন যানবাহনে যাত্রীর ভোগান্তির বিষয়টিও সামনে আসছে। গত দুই বছরের করোনা মহামারির পর এবার অনেকটা স্বাভাবিক পরিবেশে ঈদ অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিধায় মানুষের গ্রামমুখী হওয়ার প্রবণতা স্পষ্টতই বেশি হবে ।

সড়কে সংস্কার ও নির্মাণকাজ চলায় যানবাহনের গতি কমে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। ২৭ এপ্রিল থেকে ১০ মে পর্যন্ত সব ধরনের সংস্কার ও নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার পাশাপাশি মহাসড়কের যেসব অংশে বেশি যানজট হয়, সেসব স্থানে সার্বক্ষণিক হাইওয়ে পুলিশ মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছে এফবিসিসিআই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ২০ রমজানের পর বন্ধ হয়ে যাবে। পরিবারের সদস্যদের যাদের কাজ নেই, তাদের ২০ রমজান থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার পরামর্শ তার। তাহলে ঈদযাত্রায় যানবাহনের সংকট ও ভোগান্তি হওয়ার যে আশঙ্কা রয়েছে, তা থেকে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে । যানজট নিয়ন্ত্রণে রাস্তার মোড় পরিস্কার রাখা ও ছোট যানবাহন, বিশেষ করে বৈধ-অবৈধ রিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক প্রধান সড়কে চলাচল বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। আমরা জানি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি এবং বিভিন্ন স্থানে টোল আদায়ের কারণে জাতীয় মহাসড়কে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। ঈদযাত্রায় স্বস্তি আনতে সড়কে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি যানবাহনে শৃঙ্খলা ফেরানো জরুরি। ঈদের সময় অধিক চাহিদা থাকায় সড়কে ফিটনেসহীন যানবাহনে যাত্রী পরিবহনের প্রবণতা যেমন দেখা যায়; তেমনি নৌপথে পুরোনো লক্কড়ঝক্কড় লঞ্চে রং মাখিয়ে ‘নতুন’ করে চালানো হয়। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আবার অদক্ষ চালক দিয়ে যানবাহন চালানোর কারণেও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। সড়কে মৃত্যুঝুঁকি কমাতে এসব দিকে নজর দিতেই হবে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণমতে, গত ঈদুল ফিতরে তিন শতাধিক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত তিনশ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এসব প্রাণহানি ঠেকাতে এবার সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করতেই হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, এমনিতেই দেশের অনেক সড়ক ত্রুটিপূর্ণ থাকায় অথবা মেরামতের অভাবে দুর্ঘটনাপ্রবণ। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনায় নিরীহ প্রাণ ঝরছে। ঈদের সময় নানা কারণে সড়ক আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে বিধায় যাত্রীর নিরাপত্তায় এ সময়ে প্রশাসনের বিশেষ তৎপরতা কাম্য। ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ প্রতিবছরই ওঠে। এ বছর কেউ যাতে যাত্রীর চাপ, পরিবহন সংকট এবং করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে, সে জন্য আগাম সতর্কতা প্রত্যাশিত। ফেরিঘাটে ফেরির সংখ্যা বাড়ানোসহ বিদ্যমান ফেরিগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা চাই। তা ছাড়া যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় রাখা দরকার। কিছু অসাধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পরিবহন নেতাদের চাঁদাবাজি এবং বিভিন্ন টোল পয়েন্টের কারণে জাতীয় মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যানজট হয় দাবি করে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, অতিরিক্ত যাত্রী ও বেশি ভাড়া আদায়ের লোভে প্রতিবছর সড়ক ও নৌপথে ফিটনেসবিহীন যানবাহনে যাত্রী বহন, পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রীবহন, নৌপথে পর্যাপ্ত বয়া-বাতি ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম না থাকায় দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়ে যায়।

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে সবাই গ্রামে ফিরে থাকে। ঈদে বাড়ি ফেরা আনন্দের উপলক্ষ হলেও প্রতিবছর পথের নানা ভোগান্তি এবং প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার কারণে তা কোনো কোনো পরিবারের জন্য যেভাবে নিরানন্দ বয়ে আনে। ঈদে যাতে সবাই নির্বিঘেœ বাড়ি ফিরতে পারে এবং উৎসব শেষে কর্মস্থলে যেতে পারে, সে জন্য দীর্ঘমেয়াদি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। বস্তুত সুষ্ঠু যানবাহন ব্যবস্থাপনা, সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং বাড়তি আয়োজন গ্রহণের মাধ্যমে উৎসবকে আনন্দময় করে তুলতে হবে ।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক

মন্তব্য

Beta version