দুই বছর ধরে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রকোপ চলছে। সারাবিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে কোভিডের ধকলে। মহামারির ধাক্কা সামলে মহামারি-উত্তর পৃথিবীতে মানুষের সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকাটা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। ঠিক এমন একটা মুহূর্তে দেশের চিকিৎসাসেবা নিয়ে নেকিবাচক প্রশ্ন ওঠা মোটেই স্বস্তিদায়ক নয়। ২৪ এপ্রিল ‘দৈনিক ভোরের আকাশ’- এর একটি প্রতিবেদনে ভুল চিকিৎসা নিয়ে দেশের সাধারণের মানুষের আতঙ্কে থাকার চিত্র সামনে এসেছে।
প্রতিবেদনমতে, দেশে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যু, মৃত্যুর অভিযোগ ও মামলার বিষয়টি স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। অভিযোগ তোলার সুযোগ পান না অনেক অসহায় রোগীর স্বজনরা। অভিযোগকে কেন্দ্র করে প্রায়ই চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের বাদানুবাদ, ভাঙচুর এবং উভয়পক্ষে লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। অর্থাৎ, দেশের চিকিৎসাসেবার ওপর সাধারণের আস্থা নেই বা থাকলেও তা যৎসামান্যা।
দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর সাধারণ মানুষের অনাস্থার বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর- সন্দেহ নেই। কেননা স্বাস্থ্যসেবার মত বৃহৎ ও জনগুরুত্বপূর্ণ খাতে ‘আস্থা’ ধরে রাখতে না পারলে ভবিষ্যতে মারাত্মক সমস্যায় পড়বে দেশের চিকিৎসা সেক্টর। বেড়ে যাবে চিকিৎসার জন্য বিদেশগামী রোগীর সংখ্যা। ভেঙে পড়বে স্বাস্থ্যখাত। চিকিৎসা সেক্টরে অরাজকতা বাড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা থাকে। আমাদের দেশে জটিলতা যেমন আছে, তেমনি উন্নত দেশেও কিছু কিছু জটিলতা হয়। ভুল ডায়াগনসিসও হয়ে থাকে। হয়তো আমাদের এখানে একটু বেশি। তাছাড়া আমাদের চিকিৎসকদের অধিকসংখ্যক রোগীকে সামলাতে হয়। রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমাদের দেশ হয়তো উন্নত দেশের তুলনায় ৫০ বছর পেছনে। বিশ্বে এখন নতুন নতুন পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয় হচ্ছে। আস্তে আস্তে আমরাও উন্নত রোগ নির্ণয় ব্যবস্থার দিকে যাচ্ছি।
সচেতনমহলও ভুল চিকিৎসার শঙ্কা নিয়ে কথা বলছেন; তাদের যুক্তি- চিকিৎসকের কাছ থেকে রোগীর সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার আছে। যদি তারা সঠিক চিকিৎসা না পায়, তাহলে বিএমডিসিতে অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে। অভিযোগগুলো একটি শৃঙ্খলা কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে সমাধান করা হয়। বাংলাদেশে ২০১৬ সালে ‘রোগী এবং স্বাস্থ্যসেবা দানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সুরক্ষা আইন’ নামের একটি আইন প্রস্তাব করে সরকার। কিন্তু এ আইনটি এখনো কার্যকর হয়নি। তবে বিভিন্ন বিক্ষিপ্ত আইনে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে আইনি প্রতিকারের সুযোগ রয়েছে।
চিকিৎসাশাস্ত্র একটি স্পর্শকাতর ক্ষেত্র। চিকিৎসাসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ভুল হতে পারে না- এমন কথা বলবো না। তাছাড়া প্রকৃত চিকিৎসক, নার্স এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ইচ্ছেকৃতভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদানে ভুল করেন না। কিছুসংখ্যক অসাধু চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, স্বাস্থ্যকর্মী আছেন, যারা ব্যবসায়িক স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। তাদের দ্বারা রোগীর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মহামারিকালে কিংবা স্বাভাবিক অবস্থায়- উভয়ক্ষেত্রেই চিকিৎসাখাতের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। অথচ দেশের চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। বিষয়টি ব্যাপক উদ্বেগের, চরম উৎকন্ঠার। এমতাবস্থায়, চিকিৎসক ও চিকিৎসা সেবার প্রতি সাধারণের আস্থা ফেরাতে হবে। অনেক সময় সঠিক চিকিৎসা নিয়েও গুজব রটে; কাজেই ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে। পর্যাপ্ত চিকিৎসাসরঞ্জাম সহজলভ্য করতে বাড়তি বিনিয়োগের বিষয়টি আমলে নিতে হবে। মোটকথা, জনগণের আস্থা ফেরাতে যতদ্রত সম্ভব উদ্যোগী হতে হবে। সাধারণ মানুষের শঙ্কা কাটাতে হবে, ফেরাতে হবে আস্থা।
মন্তব্য