-->
উৎসব উদযাপন

ঈদ আনন্দ : স্বস্তির ঈদযাত্রা

এস ডি সুব্রত
এস ডি সুব্রত
ঈদ আনন্দ : স্বস্তির ঈদযাত্রা
ঈদ উৎসব মানুষের মনে আনন্দের পাশাপাশি মানবিকতারও জন্ম দেয়

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ মানেই শহর থেকে গ্রামে স্বজনদের কাছে ছুটে চলা। জীবিকার তাগিদে শহরমুখো হতে হয় গ্রামের মানুষকে। কিন্তু শহর যেন কখনো আপন হয় না নিজের গ্রামের মতো। এখনও তাই আপন গ্রামে না ফিরলে অনেকেরই ঈদ উৎসবের পরিপূর্ণতা হয় না। তাই ঈদের ছুটিতে শহর ছেড়ে মানুষ দলে দলে পাড়ি জমান নাড়ির টানে, স্বজনদের কাছে। এ বছর প্রায় এক কোটি মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের ফলে এখন সহজেই পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের বরাতে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য বলছে, এবার ঈদে পাঁচ দিনে এক কোটি মোবাইল সিম ঢাকা ছেড়েছে। পাড়ি জমিয়েছে গ্রামে মাটির মায়ায়। কিন্তু সেই পাড়ি জমানোটা কখনোই স্বস্তির হয় না ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য। বছর বছর নতুন ঈদ আসে কিন্তু পত্রিকার পাতায়, টিভির পর্দায় মানুষের ভোগান্তির একই চিত্রের দেখা মেলে। রেলে, লঞ্চে ভয়ানক ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করতে বাধ্য হয় খেটে খাওয়া মানুষজন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাব বলছে, ঈদে অতিরিক্ত আট হাজার কোটি টাকা লুটে নেন পরিবহণ মালিক ও চাঁদাবাজরা। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ৬০ কোটি ট্রিপের মাধ্যমে সড়ক, ট্রেন, বাস ও বিমানে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভাড়া আদায় হয়। তার মধ্যে আট হাজার কোটি টাকা আদায় হচ্ছে অন্যায়ভাবে। তারপরও নির্বিবাদে মানুষ বাড়ি পৌঁছাতে চান সর্বস্ব দিয়ে হলেও। স্বস্তির বিষয় হলো, এবার অন্তত বড় ধরনের যানজট থেকে নিস্তার মিলেছে।

ঈদ উৎসব মানুষের মনে আনন্দের পাশাপাশি মানবিকতারও জন্ম দেয়। যে যেখানেই থাকুক না কেন, ঈদ এলে সবাই ইট পাথরের খাঁচা ছেড়ে ছুটে চলে নাড়ীর টানে। তবে প্রতি বছরই ঈদের আনন্দে অস্বস্তি নিয়ে আসে ঈদ যাত্রার নানা ভোগান্তি। যানজট, বাড়তি ভাড়া, দুর্ঘটনা ঈদ আনন্দে বিষাদের ছায়া ফেলে। তবে এ বছর ঈদযাত্রায় মানুষের ঘরে ফেরার চিত্র একটু অন্যরকম। নেই যানজট, নেই ভীড়, ঠেলাঠেলি। লঞ্চ , ট্রেন ও বাসে এবার অনেকটাই আরামেই মানুষ নিজ এলাকায় ফিরতে পেরেছে। এ স্বস্তির ঈদযাত্রায় সরকারের নানামুখী তৎপরতা, মনিটরিং বেশ কাজে লেগেছে নিঃসন্দেহে বলা যায়। অবশ্য স্বস্তির ঈদ যাত্রায় অন্যান্য বিষয়ও জড়িত। যেমন- এবার ঈদে লম্বা ছুটি হওয়ার কারণে রাস্তাঘাটে যানজট ছিল না বললেই চলে। এক্ষেত্রে পরিবহন বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভূমিকা অবশ্যই স্বীকার করতে হবে। বিশেষজ্ঞগণ ও সাংবাদিকরা পরিবহনে চাপ কমাতে ঈদের ছুটি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া সেগুলো প্রচার করে মানুষকে সচেতন করেছেন যেটা ঈদযাত্রায় স্বস্তি নিয়ে এসেছে এবার। সরকারও এবার যানজট ও ভোগান্তি কমাতে বেশ তৎপর ছিলেন। এসব উদ্যমী উদ্যোগ কাজে এসেছে দারুণভাবে। নৌপরিবহন মন্ত্রী, রেল মন্ত্রী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর তৎপরতাও বেশ লক্ষণীয় ছিল এবারের ঈদযাত্রা আনন্দময় করার ক্ষেত্রে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক দিক নির্দেশনার সফলতা এসব। সর্বোপরি জনগণ ও পরিবহন মালিকরা ধন্যবাদ পাওয়ার দাবীদার। কারণ সবার সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া এত বড় কাজ সফলভাবে সম্পন্ন করা বেশ দুরহ ব্যাপার।

 

শুধু পরিবহণ নয়, রোযা-ঈদ মিলিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী, সুযোগসন্ধানীদের শিকারে পরিণত হন সাধারণ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুরই দামে যেন আগুন লাগে। তারপরও মহামারির শুরুর পর এবারই মানুষ বিধিনিষেধহীন এক ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে পেরেছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে কিছু জিনিসের দাম বাড়লেও জিনিসের দাম মোটামুটি নিয়ন্ত্রণেই ছিল বলা যায়। দেশের অর্থনীতিতেও গত দুই বছরের চেয়ে বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে, গতির সঞ্চার হয়েছে

শুধু পরিবহণ নয়, রোযা-ঈদ মিলিয়ে অসাধু ব্যবসায়ী, সুযোগসন্ধানীদের শিকারে পরিণত হন সাধারণ মানুষ। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে সবকিছুরই দামে যেন আগুন লাগে। তারপরও মহামারির শুরুর পর এবারই মানুষ বিধিনিষেধহীন এক ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে পেরেছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে কিছু জিনিসের দাম বাড়লেও জিনিসের দাম মোটামুটি নিয়ন্ত্রণেই ছিল বলা যায়। দেশের অর্থনীতিতেও গত দুই বছরের চেয়ে বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে, গতির সঞ্চার হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও শহরে কাজ করা মানুষটি পরিবারের জন্য নতুন পোশাক কিনে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরেছেন। অর্থের এই প্রবাহ গ্রামীণ অর্থনীতিকে আবারও চাঙা করে তুলবে।

বাংলাদেশ অধিক জনসংখ্যার দেশ। স্বাভাবিকভাবেই এদেশে সব সমস্যার সমাধান হুট করে সমাধান সম্ভব নয়। ঈদ আনন্দ তাই সবার জন্যই সমান আনন্দ নিয়ে ধরা দেবে এমনটা ভাবা কঠিন। তবে দেশপ্রেম আর সততায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সকলে মিলে কাজ করতে পারলে এদেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে বলেই বিশ্বাস করি। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি প্রতিটি রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের সার্বিক সহযোগিতার একান্ত প্রয়োজন। তবে সবার অংশগ্রহণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে হবে সরকারকেই। দেশের পরিবেশ সুন্দর রাখার প্রথম দায়িত্ব সরকারের। সরকারের মন্দ কাজের সমালোচনা করা করার পাশাপাশি ভালো কাজের প্রশংসা করা উচিত বিরোধী দল ও সাধারণ মানুষের।

এবারের মতো অনাগত প্রতিটি ঈদ সবার মাঝে স্বস্তি বয়ে আনুক, প্রিয়জনের সাথে ঈদযাত্রা হোক কুসুমাস্তীর্ণ- প্রত্যাশা এটাই।

লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক এবং কলাম লেখক

মন্তব্য

Beta version