-->
শিরোনাম
সমকালীন

ফেসবুক-সেলফি তামাশা বন্ধ হোক

অ্যাড. মো. রায়হান আলী
অ্যাড. মো. রায়হান আলী
ফেসবুক-সেলফি তামাশা বন্ধ হোক
স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের পরিমিত ব্যবহারবোধের অভাব অনেককে মানসিক রোগীতে পরিণত করেছে

আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার হলো ইন্টারনেট সেবা। এই ইন্টারনেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পরিচিত গণমাধ্যম হলো ফেসবুক। বর্তমান যুগে একে অপরের সাথে খুব দ্রুত ও সহজলভ্য যোগাযোগের জন্য অন্ততপক্ষে একটা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকে। তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ২৭ লাখ, যাদের মধ্যে ১০ কোটি ৩২ লাখ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত। এই বিশাল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩৫ শতাংশ। একটা সময় ছিল এই মোবাইল ফোন অ্যানালগ সিস্টেম অর্থাৎ বাটন প্রেস করে কাউকে কল আদান-প্রদান করা যেত। কালের বিবর্তনে সেই বাটন প্রেস করার দিনও প্রায় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। নতুন সংরক্ষণ এলো অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেট। এই মোবাইলে কল আদান-প্রদানের পাশাপাশি ইন্টারনেট সেবার সুযোগ ব্যবহার চলছে। বিশেষ করে অ্যান্ড্রয়েড সেটে চটকদার কিছু অ্যাপ সহজেই ব্যবহার করা যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ও সুবিধা হলো এই মোবাইলে আমরা জনপ্রিয় অ্যাপ ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, ক্যামেরাসহ অনেক ধরনের অ্যাপ সহজেই ব্যবহার করছি। জনপ্রিয় ফেসবুক অ্যাপ প্রতিটা অ্যান্ড্রয়েড সেটে চাই। বর্তমানে ফেসবুক অ্যাপ ব্যবহার করে না এমন লোকের সংখ্যা অনেক কম। কম-বেশি হলেও ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যাটা অনেক। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে প্রায় সব বয়সিরাই এই ফেসবুক ব্যবহার করছে। অনেক সুবিধা আমরা এই ফেসবুক অ্যাপ ব্যবহার থেকে পাচ্ছি। তাৎক্ষণিক হাতের কাছেই যেন পৃথিবী। মোবাইল হাতে নিলেই কিংবা ফেসবুক অন করলেই নিমিশেই পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের খবর আমরা পাচ্ছি। এছাড়াও রেডিও, টিভি, ক্যামেরাসহ বিনোদনের অনেক সুুবিধা আমরা পাচ্ছি। একটা সময় ছবি তুলতে একমাত্র ভরসাই ছিল স্টুডিও। সেখানে গিয়ে নিজের ছবি কিংবা পারিবারিক ছবি তোলা হতো। খুব বেশি প্রয়োজন হলে স্টুডিও থেকে ক্যামেরাম্যান ডেকে অন্য জায়গায় ছবি তুলতাম। কালের পরিবর্তনে তাও প্রায় শেষ! এখন অ্যান্ড্রয়েট সেটেই উচ্চ রেজুলেশন সম্পন্ন ডিএসএলআর ক্যামেরার সুব্যবস্থা। আহা, কি সুবিধা হাতের কাছেই!

 

আমরা অনেকে ফেসবুকে অযাচিত পোস্ট করি কিংবা কারো প্রকাশিত পোস্টে বিরূপ মন্তব্য করে থাকি; ফেসবুকে সেলফি অপসংস্কৃতির চর্চা করি। প্রতিনিয়তই ফেসবুকে দেখা যায় অনেকে মৃত ব্যক্তির পাশে বসে সেলফি তুলছেন, মৃত ব্যক্তিকে কবরে শায়িত করার সময় ছবি কিংবা সেলফি তুলছেন, মুমূর্ষু রোগীর পাশে বসে সেলফি তুলছেন, কোরবানির পশুকে জবেহ করার সময় সেলফি তুলছে। এছাড়াও সামান্য দান করে দান গ্রহীতার ছবি কিংবা সেলফি পোস্ট হচ্ছে ফেসবুকে

জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোকে স্মরণীয় করে রাখতে আমরা সবাই কমবেশি ছবি তুলে রাখি। স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা আর সেলফির কল্যাণে ছবি তোলা এখন আরো সহজ। তবে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের পরিমিত ব্যবহারবোধের অভাব অনেককে মানসিক রোগীতে পরিণত করেছে। ফলে তারা পরিবেশ পরিস্থিতি না বুঝে সেলফি তোলা নিয়ে মেতে উঠছেন। প্রতিটা অতি সুবিধারই রয়েছে বিপত্তি। তেমনি ফেসবুক ব্যবহারে সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও বিদ্যমান আছে। আমরা প্রতিনিয়তই খুব সহজেই এখন দেখতে পাই, ফেসবুক খুললেই বন্ধুদের কাব্যিক ক্যাপশনযুক্ত সেলফি। কত রংঢং করে যে তোলা, কত প্রকারের এডিট করা তা বলাই বাহুল্য। ফেসবুকে বন্ধুদের ছবি দেখে আমরাও আনন্দে লাইক, কমেন্ট করে থাকি। ফেসবুকে সবচেয়ে সহজেই নিজের সেলফি তুলে পোস্ট করে বন্ধুদের দেখানো যায়। সেলফি সংস্কৃতি আমাদের অতি সহজ হয়ে গেছে।

নিজস্বী বা সেলফি (সেল্ফি) হলো আত্ম-প্রতিকৃতি আলোকচিত্র বা দল আলোকচিত্র, যা সাধারণত হাতে-ধরা ডিজিটাল ক্যামেরা বা ক্যামেরা ফোন ব্যবহার করে নেয়া হয়। সেলফি প্রায়ই ফেসবুক, গুগল, ইন্সটাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, টাম্বলার এবং টুইটার ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে শেয়ার করা হয়ে থাকে। সেলফি শব্দটি প্রথম এসেছে ইংরেজি সেলফিশ থেকে। সেলফি অর্থ প্রতিকৃতি। অক্সফোর্ড অভিধানের মতে, সেলফি হলো একটি ছবি (আলোকচিত্র) যা নিজের তোলা নিজের প্রতিকৃতি, যা সাধারণত স্মার্টফোন বা ওয়েবক্যামে ধারণকৃত এবং যে কোনো সামাজিক মাধ্যমে আপলোড (তুলে দেয়া) করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ সেলফি হাত সামনে তুলে বা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে, কখনো-কখনো সেল্ফ টাইমার ব্যবহার করেও নেয়া হয়। আমরা সেই সেলফিটাকে দিনে দিনে অনেকে অপসংস্কৃতিতে পরিণত করছি। ভালো কিছু কাজের প্রকাশ জনগণকে ভালো কিছু করতে শেখায়; উদ্যোগী হতে শেখায়। সেটার প্রচার-প্রসার জরুরি। আমরা অনেকে ফেসবুকে অযাচিত পোস্ট করি কিংবা কারো প্রকাশিত পোস্টে বিরূপ মন্তব্য করে থাকি; ফেসবুকে সেলফি অপসংস্কৃতির চর্চা করি। প্রতিনিয়তই ফেসবুকে দেখা যায়, অনেকে মৃত ব্যক্তির পাশে বসে সেলফি তুলছেন, মৃত ব্যক্তিকে কবরে শায়িত করার সময় ছবি কিংবা সেলফি তুলছেন, মুমূর্ষু রোগীর পাশে বসে সেলফি তুলছেন, কোরবানির পশুকে জবেহ করার সময় সেলফি তুলছেন। এছাড়াও সামান্য দান করে দান গ্রহীতার ছবি কিংবা সেলফি পোস্ট হচ্ছে ফেসবুকে। হয়তোবা অনেকে বলতে পারে দান করার ছবি, সেলফি প্রকাশ করলে অনেকে দানের হাত বাড়িয়ে দেবে; কিন্তু এটা সবারই জানা- ইসলাম গোপনে দানকে সমর্থন করে। ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে কারো ক্ষতি, মানহানি, অসত্য সংবাদ প্রকাশসহ নানা ধরনের ইন্টারনেট ভিত্তিক অপরাধে জড়াচ্ছে অনেকে। অপরাধী হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। যোগাযোগ মাধ্যমটা হলো পাবলিক প্লেস। এখানে নিজের নোংরামির ছবি প্রকাশ করে নিজেকে অন্যের কাছে একজন নোংরা সংস্কৃতি চর্চাকারী হিসেবে কেন প্রকাশ করছেন? আজকাল তো কেউ ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠালে সেটা রিসিভ করার আগে আইডিয়াটা চেক করে নেয়। চেক করে যদি তার পোস্টগুলো সভ্য সামাজিক হয় তাহলে ধরে নেয় রিকুয়েস্ট প্রদানকারী আপাতঃদৃষ্টে সামাজিক আর যদি অসামাজিক সেলফি কিংবা পোস্ট পাওয়া যায় তাহলে তার রিকুয়েস্ট গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। আসুন, আমরা সবাই যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সচেতন হই, ফেসবুকে নিজের সস্তা মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ না ঘটিয়ে উন্নত মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাই।

লেখক: আইনজীবী

মন্তব্য

Beta version