বিতর্ক যেন কিছুতেই পিছু ছাড়তে চায় না রেলের! বিরামহীনভাবে নিত্যনতুন ‘ইস্যু’ নিয়ে হাজির হয় রেলওয়ে সেক্টর। এবারের ইস্যু আরো ‘মহাকাব্যিক’। ঈদ মৌসুমে বিনা টিকেটে খোদ রেলমন্ত্রীর স্বজনদের রেলভ্রমণ, জবাবদিহির তোয়াক্কা না করে ‘অন ডিউটি’ ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষককে (টিটিই) চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া, ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে মাঝরাতে রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর ফোন, সংশ্লিষ্ট টিটিইকে তাৎক্ষণিক বহিস্কার, ঘটনা জানাজানির পর রেলমন্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনকে অস্বীকার করা, তিরস্কারের পর টিটিইকে মন্ত্রণালয়ের পুরস্কারের চিন্তা- মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে এতসব ঘটনা গলধকরণ করলো দেশবাসী। সভ্য সমাজে এসব নিতান্তই অকল্পনীয়।
আইন অমান্যকারীদের পক্ষে স্বয়ং মন্ত্রীপত্নী অযাচিত হস্তক্ষেপ করছেন। আর দায়িত্বরত উর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা মন্ত্রীর নির্দেশ ব্যতিরেকেই মন্ত্রীপত্নী হুকুম ‘জি হুজুর রবে’ তামিল করে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীকেই ‘ত্বরিত বহিষ্কার’ করছেন; শিক্ষিত-সভ্য সমাজে এসব দৃশ্য ভাবতে গেলেও শিহরিত হতে হয়। দেশে আইন আছে, আইনের শাসন আছে, আছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও। এসমস্ত রাষ্ট্রযন্ত্রকে উপেক্ষা করে ক্ষমতার দৌরাতেœ অপকর্মে লিপ্ত হওয়া এবং তৎপরবর্তী অপতৎপরতার পুনরাবৃত্তি দেশ ও দশের জন্য কোনোভাবেই সুখকর হতে পারে না। কিরূপ সমাজে আামাদের বাস যেখানে স্বীয় মন্ত্রণালয়ে এহেন লম্বা ঘটনা ঘটার শেষদৃশ্যে এসে মন্ত্রী জানতে পারছেন; অথচ তার পরিচিতিতেই এ ‘ট্র্যাজেডি’ ঘটানো হয়েছে। কালান্তরে একটা প্রবাদ চলে আসছে- ‘মানুষের থেকে মানুষের ছায়া যখন বড় হয়ে যায় তখন বুঝতে হবে সূর্য অস্ত যাচ্ছে’।
এদেশে রেলে এটাই প্রথম বা শেষ ‘ঘটনা’ নয়। যাতায়াত সেক্টরে বরাবরই বছরব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বছরের পর বছর লোকসান গুনতে থাকা দেশের এ বৃহত্তম খাত সর্বজনস্বীকৃত ‘অঘটনঘটনপটীয়সী’।
দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে যেখানে প্রতিনিয়ত তিনি যুদ্ধ করছেন, সেখানে এ জাতীয় ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর ‘বিবেচানা’ এড়াবে না বলেই বিশ্বাস করি। আর যুগ যুগ ধরে ‘রেলে সওয়ার’ এতদসংক্রান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ইতি টানতে অবিলম্বে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও সতত প্রত্যাশা
বলা বাহুল্য হবে, এ ঘটনায় এখনো দেশজুড়ে রীতিমতো তোলপাড় চলছে। ক্ষণে ক্ষণে ঘটনা নতুন নতুন রূপ পাচ্ছে। একই প্রসঙ্গে বারবার ভোল পাল্টাচ্ছেন রেলমন্ত্রী। এমনকি ঘটনা ভীন্নখাতে প্রবাহের মানসে টিটিইকে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত বলেও দাবি তোলেন রেল কর্তারা। আমাদের বক্তব্য হলো- কে কতটুকু বিকারগ্রস্ত এটা বিবেচনায় নিয়ে তড়িঘড়ি বহিস্কারের পরিবর্তে টিটিই শফিকুল দায়িত্বপালনে গাফিলতি করেছেন কিনা কর্তাবাবুরা সেটার ওপর গুরুত্বারোপ করলেই ব্যাপারটা সমীচীন হতো বৈকি। কারো বুঝতে বাকি নেই যে, টিটিই শফিকুলের মূল দোষটা হলো- মন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় পাবার পরও নিজ দায়িত্বে অবিচল থেকে মন্ত্রীর স্বজনদের আইন মানতে বাধ্য করা।
শেষপর্যন্ত পরিস্থিতি বদলে যাবার ঘটনা শোনা গেছে। রাতারাতি সমালোচনার মুখে মন্ত্রী নিজের অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। টিকিট না কাটা ব্যক্তিদের নিজের আত্মীয় বলে স্বীকার করেছেন। স্ত্রীর নির্দেশেই টিটিইকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে একমত হয়েছেন। টিটিইকে পদোন্নতি দেওয়াসহ পুরস্কৃত করার চিন্তাও নাকি করছে মন্ত্রণালয়!এ ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় হওয়ায় সরকারও বেশ বিব্রত। যেমন- তথ্যমন্ত্রী মত রেখেছেন, রেলমন্ত্রীর স্ত্রীর কথায় ট্রেনের কর্মচারীকে বরখাস্ত করা ঠিক হয়নি। এটা সমীচীন নয়।
দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে যেখানে প্রতিনিয়ত তিনি যুদ্ধ করছেন, সেখানে এ জাতীয় ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর ‘বিবেচানা’ এড়াবে না বলেই বিশ্বাস করি। আর যুগ যুগ ধরে ‘রেলে সওয়ার’ এতদসংক্রান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার ইতি টানতে অবিলম্বে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলেও সতত প্রত্যাশা।
মন্তব্য