জনভোগান্তি

অনলাইনে তথ্য সংশোধন বিড়ম্বনা

অ্যাড. মো. রায়হান আলী
অ্যাড. মো. রায়হান আলী
অনলাইনে তথ্য সংশোধন বিড়ম্বনা
জন্মসনদ নতুন করে সংশোধনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জন্মনিবন্ধন উত্তোলন ও সংশোধনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে দালালচক্র, যা মোটেই শুভ সংবাদ নয়

জাতীয় জন্মনিবন্ধনের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে নাগরিক অধিকার সুরক্ষায় ৪৫ দিনের মধ্যে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন। সারাদেশেই সাধারণ মানুষ জন্মনিবন্ধন সনদ পেতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, জন্মনিবন্ধন সনদের জন্য আবেদন করার শর্তে জটিলতা রয়েছে। রয়েছে সনদ প্রদানে দীর্ঘসূত্রতা। সরকারি ফি’র বাইরেও নেয়া হচ্ছে অর্থ। ১৭টি সেবার ক্ষেত্রে জন্মসনদ বাধ্যতামূলক হওয়ায় মানুষ বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জন্মনিবন্ধন করছেন। এরপরও বাধ্যতামূলক ও জরুরি এই সনদ পেতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সারাদেশের মানুষকে। সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মকর্তাদের দাবি জনবল সঙ্কট, ইন্টারনেটের ধীরগতি ও কেন্দ্রীয় সার্ভারে নানা জটিলতার কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। পাসপোর্ট তৈরি, বিয়ে নিবন্ধন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, চাকরিতে নিয়োগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ভোটার তালিকা তৈরি, জমি রেজিস্ট্রেশন, ব্যাংক হিসাব খোলা, আমদানি ও রফতানি লাইসেন্স, গ্যাস, পানি, টেলিফোন এবং বিদ্যুৎ সংযোগের অনুমতি, করদাতা শনাক্তকরণের নম্বর, ঠিকাদারি বা চুক্তির লাইসেন্স, ভবন নকশার অনুমোদন, ট্রেড লাইসেন্সপ্রাপ্তি এবং মোটরযানের নিবন্ধন পেতে জন্মনিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক। ঢাকা সিটিতে বসবাসরত নাগরিকদের স্থানীয় কমিশনারের প্রত্যায়নপত্র লাগে। এক সময় সন্তানের বাবা ও মায়ের জন্মনিবন্ধন লাগত না। এখন সকলের জন্মনিবন্ধনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বয়স্ক কেউ জন্মসনদ নিতে গেলে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। একই সঙ্গে হয়রানি দিন দিন বাড়ছে। অনেক ইউনিয়নের তথ্য সেবাকেন্দ্র থেকে নোটিশ জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে সার্ভার আপডেট করার জন্য সমস্যা হচ্ছে এ কারণে জন্মবিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে।

সনদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অভিভাবকরা ঘাটে ঘাটে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকাও। আবার অনেকের জন্মসনদ নতুন করে সংশোধনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জন্মনিবন্ধন উত্তোলন ও সংশোধনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে দালালচক্র, যা মোটেই শুভ সংবাদ নয়

সবচেয়ে বড় ও উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো আজ থেকে কয়েক বছর আগে সন্তানের জন্মনিবন্ধন করতে মা বাবার নিবন্ধন বাধ্যতামূলক ছিল না, এমন কি মা বাবার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম অনুযায়ী সন্তানের জন্মনিবন্ধনে মা বাবার নাম ও বানান হতে হবে এমনটাও বাধ্যতামূলক ছিল না। যার কারনে ঐ সময় ছেলেমেয়েদের মা বাবারা তাদের সন্তানের জন্মনিবন্ধন করতে গিয়ে সন্তানের জন্মনিবন্ধন সনদে মা বাবার নাম তাদের বা উদ্যোক্তাদের ইচ্ছামতো বানান করে লিখছেন। এই সনদ অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৮ম শ্রেণীতে অনলাইনে তাদের নাম রেজিষ্ট্রেশন করেছেন। এই নাম অনুযায়ী ছাত্র/ছাত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ বের হয়। পরবর্তীতে ঘোষণা দেওয়া হয়, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাগত সনদে মা বাবার নাম ও বানান তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রে থাকা নাম ও বানান অনুযায়ী হতে হবে। এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। তবে সুরাহা মেলে নি এখনও। এ সমস্যা সংশোধন করতে গেলে এখন শিক্ষাবোর্ড, নির্বাচন কমিশন যেতে হবে। সেখানে কি সাধারণ মানুষ যেতে পারবে। এটা ঘুষের আরেকটা পদ্ধতি। ঘুষ দিবে কাকে, কোথায় দিবে দেশের সাধারণ মানুষতো এসব জায়গাই চিনে না। যদিও কেউ চিনে গেলে সেখানকার লোকজন তাদের কে পাত্তাই দিবে না। শিক্ষাবার্ড ও নির্বাচন কমিশন হতে একটা সনদ ও জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করে আনতে বছরের পর বছর ঘুরতে হয় তাদের বারান্দায় আবার অনেক সময় তাদের পালিত দালালদের নিকট হতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত। গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। যা এদেশের মানুষের পক্ষে সম্ভব না। এই ভুলের মাশুল গুনতে হচ্ছে দেশের সাধারণ জনগণকে। যেমনটা হয়েছিল ছাত্রছাত্রীদের ইউনিক আইডির ক্ষেত্রে। ছাত্রছাত্রীদের জন্মসনদে মা বাবার নাম সঠিক না থাকার কারনে ইউনিক আইডির কার্যক্রম ব্যাহত হতে চলছিল। শেষ পর্যন্ত সরকার সিদ্ধান্ত দিয়েছে, জন্মসনদে ছাত্রছাত্রীর নাম ঠিক থাকলেই হবে, মা বাবার নাম যাহাই হউক। তবে এই একই ভুলের কারণে আগামী মে মাসের ২০/২২ তারিখের ভোটার হালনাগাদের কাজ ব্যাহত হতে পারে বলে বাজারে গুঞ্জন ছড়াচ্ছে। যদি ছাত্রছাত্রীদের ইউনিক আইডির মতো সিদ্ধান্ত আসে তাহলে সুষ্ঠুভাবে ভোটার হালনাগাদের কাজ চলবে। সরকারের উচিত দেশের জনগণের স্বার্থে ধরনের একটা আইন জারি করা। যে, অনলাইন সনদের ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের নাম শিক্ষাসনদ ও জন্মনিবন্ধন সনদ ঠিক থাকলেই হবে, এক্ষেত্রে মা বাবার নাম সঠিক হতে হবে এমনটা বাধ্যতামূলক নয়। তাহলে দেশের মানুষ একটা স্বস্থির নিশ্বাস ফেলবে।

সম্প্রতি দেশে ১২ থেকে ১৮ বছরের শিশুদের করোনার টিকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের ইউনিক আইডি কার্যক্রম শুরু হওয়ার ফলে জন্মনিবন্ধনের সনদ উত্তোলনের হার বেড়ে গেছে। কিন্তু এই সনদ সংগ্রহ করতে গিয়ে অভিভাবকরা ঘাটে ঘাটে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকাও। আবার অনেকের জন্মসনদ নতুন করে সংশোধনের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জন্মনিবন্ধন উত্তোলন ও সংশোধনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে দালালচক্র, যা মোটেই শুভ সংবাদ নয়।

লেখক: কলাম লেখক

মন্তব্য