‘অন্নের সংস্থান’; যার জন্য আমাদের প্রতিদিনকার ছুটে চলা। জীবন ধারণের তাগিদে জীব মাত্রেরই শক্তির প্রয়োজন, যার উৎস হলো ‘খাদ্যগ্রহণ’। অর্থাৎ, কালান্তরে চলে আসা বিশ্বব্যাপী এতসব আয়োজনযজ্ঞের মূলে রয়েছে ‘খাদ্য’। ধূলিধরায় সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে টিকে থাকতে খাদ্যের সংস্থানে ছুটে চলা মানুষের খাদ্যভাণ্ডারের ‘যোগান-যোগাড়’ যদি প্রতিকূল-কঠিনতর হয়ে ওঠে, তবে তা মনুষ্যকূলকে ভাবনায় ফেলবে- চিরাচারিত নিয়ম এটাই।
বিগত দুই বছরের অধিক সময় ধরে সারা বিশ্বের মানুষকে নাস্তানাবুদ করে চলেছে অদৃশ্য করোনাভাইরাস। কোভিড মহামারি পুরোপুরি কাটেনি এখনো। ধাক্কা সামলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রাণান্তকর চেষ্টাই প্রতিটি মানুষের এখন মূল লক্ষ্য। তবে এ বিষয়ে বাধ সাধছে ‘খাদ্যনিরাপত্তা’।
বিশ্ব অর্থনীতির নাজুক ধাক্কায় বিশ্ববাজারে টালমাটাল অবস্থা। রপ্তানীকারক দেশগুলো পণ্য রপ্তানী সীমিত করে ফেলছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটা চরম শঙ্কার বিষয়। এমতাবস্থায়, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে সর্বাগ্রে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত-ই যে আগামীর বিশ্বে ‘মূল চ্যালেঞ্জ’ হয়ে উঠছে- এ সত্যকে উপেক্ষা করলে বড় মাসুল গুনতে হতে পারে
কোভিড-১৯, চলমান রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ, ভূ-রাজনৈতিক কূটকৌশল, মূল্যস্ফীতি, বাণিজ্য ঘাটতি, উৎপাদনব্যবস্থায় বিঘ্নতা প্রভৃতি চরমভাবে ভোগাচ্ছে বিশ্বের মানুষকে। এরূপ ভোগান্তির বাইরে নেই বাংলাদেশের মানুষজন। করোনাভাইরাসের তা-ব দেশের মানুষকে খুব একটা বেকায়দায় ফেলতে না পারলেও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিকূল পরিস্থিতি চোখ রাঙাচ্ছে অবিরত। দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্য প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বাক নিচ্ছে। ভোজ্য তেল নিয়ে বাড়াবাড়ি মাত্রা ছাড়িয়েছে, ঝাঁজ ছড়িয়েছে নতুন ‘ইস্যু’ পিঁয়াজ। দেশে যা পিঁয়াজের মজুদ আছে তা দিয়ে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভালোভাবে চলার কথা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভীন্ন চিত্র দেখতে পাওয়া গেল। ভোজ্যতেল, পিঁয়াজসহ যেসব পণ্যের মূল্য রাতারাতি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে তার পেছনে কাজ করছে ‘অদৃশ্য-অস্পৃশ্য’ শক্তি! অনেকটা বাধাহীনভাবে দুষ্কর্ম করছে তারা, লাগামহীন দৌরাত্মে নাকাল করে চলেছে সাধারণ ভোক্তাকে।
দেশে কৃষি জমির পরিমান কমেছে; বিবেচনাপ্রসূত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদয় কৃষি জমি অকৃষিখাতের দখলে যাবে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এ চরম আশঙ্কার বিষয় অনুধাবন করে দেশের ‘প্রতি ইঞ্চি’ ভূমির ব্যবহার নিশ্চিতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের মাটিতে প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যই কমবেশি উৎপাদন হলেও প্রয়োজনীয় বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যের জন্য আমারা বৈদেশিক আমদানীর ওপর নির্ভরশীল। নিষ্ঠুরভাবে বন-জঙ্গল উজাড় কিংবা যথেচ্ছা ব্যবহারের ফলে আবাদীজমির সংকোচন ঘটানো হলে অতিমাত্রায় আমদানী নির্ভরতা দেশের অর্থনৈতিক চালচিত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতি ডেকে আনবে। সীমাহীন সে দুর্ভোগ-দুর্দশার কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের পাশাপাশি জনগণকেও সম্পৃক্ত হতে হবে এখনই।
দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে বলে খবর শোনা গেছে। উৎপাদন ব্যবস্থায় কাক্সিক্ষত সফলতার গল্পও শোনা যায়নি। রিজার্ভ ঘাটিতির আশু বিপদের কথাও বলা হচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে নড়েচড়ে বসায় কালবিলম্বের খেসারত গুণতে হতে পারে। শ্রীলঙ্কার মতো বিশ্বের অনেকগুলো দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ‘চরম’ সীমানায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। সেসব দেশের বিষয়কে আমলে নিয়ে অবিলম্বে নিত্যপণ্যের দামবৃদ্ধির কারসাজিতে যুক্ত অসাধু সি-িকেটকে রুখতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি ঘোষণা করেছেন বহু আগেই। কাজেই, লাগামহীনভাবে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেশের খাদ্যনিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলা এসব দুষ্কৃতিকারীদের বিরুদ্ধে ‘একচোটিয়া’ অভিযানে পূর্ব-ভাবনা কেন?
বিশ্ব অর্থনীতির নাজুক ধাক্কায় বিশ্ববাজারে টালমাটাল অবস্থা। রপ্তানীকারক দেশগুলো পণ্য রপ্তানী সীমিত করে ফেলছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এটা চরম শঙ্কার বিষয়। এমতাবস্থায়, খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে সর্বাগ্রে। খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত-ই যে আগামীর বিশ্বে ‘মূল চ্যালেঞ্জ’ হয়ে উঠছে- এ সত্যকে উপেক্ষা করলে বড় মাসুল গুনতে হতে পারে।
মন্তব্য