-->

নকল কোর্ট ফি

এ প্রবণতা বন্ধ করতে হবে

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
নকল কোর্ট ফি
দৈনিক ভোরের আকাশ-সবার কথা বলে

‘প্রদত্ত কোর্ট ফি সঠিক’- বিচারিক রায়ের সর্বশেষ অংশে এই বাক্যটি মোটাদাগে বড় করে লেখা থাকে। অথচ এই প্রদেয় কোর্ট ফি জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসলো এবার। দৈনিক ভোরের আকাশের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র। গেল বৃহস্পতিবার একটি মামলায় হাইকোর্টে দাখিল করা মামলার নথিতে লাগানো কোর্ট ফির সবগুলোই নকল হিসেবে ধরা পড়ে। কোর্ট ফি আসল নাকি নকল, তা পরীক্ষার পরই নথিটি জব্দ করে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। শুধু এ একটি নথি নয়, আরো ২১টি মামলার নথি পরীক্ষা করে তার ২০টিতেই নকল কোর্ট ফি পেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। ফলে সেগুলোও জব্দ করা হয়। এ ঘটনা ধরা পড়ার পর পুরোনো মামলার নথি পরীক্ষা করা শুরু হয়েছে।

এই নকল কোর্ট ফির কারণে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন মতে, বছরে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

শুধু মোশন মামলাই নয়, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে দাখিল করা পুরোনো মামলায়ও নকল কোর্ট ফির অস্তিত্ব পেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। আর এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। নকল কোর্ট ফি সরবরাহকারীদের ধরতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আপিল বিভাগের অপরাপর বিচারপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এই নকল কোর্ট ফির কারণে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন মতে, বছরে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

নকল কোর্ট ফি বিক্রি ও সরবরাহকারীদের ধরতে তিন বছর আগে সুপ্রিম কোর্ট উদ্যোগ নিলেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সাড়া না পাওয়ায় তা এতদিন আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ গত এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের বৈঠকের পরই এ অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মামলার নথিতে নকল কোর্ট ফি মিলছে না, দেশের সব অধস্তন আদালতের নথিতেও নকল কোর্ট লাগানোর অভিযোগ বেশ পুরোনো। এ কারণে নকল কোর্ট ফিমুক্ত মামলার নথি প্রস্তুতের জন্য দেশের সব আদালতে ২ হাজার মেশিন সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

দেশের কোনো আদালতে নতুন কোনো মামলা বা কিংবা মামলা সংক্রান্ত আবেদন দাখিল করতে হলে তাতে কোর্ট ফি লাগাতে হয়। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ৩৪ ধরনের মামলায় কোর্ট ফির প্রয়োজন পড়ে। এই কোর্ট ফি ছাড়া মামলা বা আবেদন দাখিল করার সুযোগ নেই। ১৫০ টাকার কোর্ট ফি থেকে মামলাভেদে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকার কোর্ট ফির প্রয়োজন পড়ে প্রতিটি মামলায়। দেশের বিভিন্ন সরকারি নথিতে কোর্ট ফি লাগানোর প্রয়োজন পড়ে। ২ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা মূল্যমানের কোর্ট ফি চালু আছে। এই কোর্ট ফি বিক্রি করে সরকারের প্রতি বছর কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। এ সুযোগে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি নকল কোর্ট ফি ছাপিয়ে অল্প টাকায় বিক্রি করে। মাঝে মাঝে এ চক্রের সদস্যরা ধরাও পড়ে। কিন্তু তাতে থামছে না তাদের এই নকল কোর্ট ফি ছাপানো।

নকল কোর্ট ফির বিস্তার নিম্ন আদালত থেকে সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ প্রবণতা বন্ধ করতে হবে।

মন্তব্য

Beta version