চলতি মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে রোজা শুরু হবে। রোজাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে দ্রব্যমূল্য মজুত ও পণ্যের দাম বাড়িয়ে অতি মুনাফা লুটতে তৎপর হয়ে উঠেছে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী। তাই রোজায় ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ ও দাম স্বাভাবিক রাখতে আগে থেকেই নানামুখী উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে সরকার। অসৎ ব্যবসায়ীরা যাতে অতি মুনাফা করতে না পারে, সে জন্য দেশজুড়ে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, তারা যেন বাজার নজরদারিটা ঠিকভাবে করেন। গত সোমবার নিজের কার্যালয়ে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এই নির্দেশ দেন সরকারপ্রধান। আমরাও চাই সরকারপ্রধানের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হোক। তাহলে সাধারণ মানুষ এর সুফল ভোগ করবে। রোজা আসার আগ থেকেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
রোজা শুরু হতে আরো প্রায় ২০-২২ দিন বাকি থাকলেও নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার খবর গণমাধ্যমে আসছে। রোজায় বাজার তদারকি শুরুর আগেই দ্রব্যমূল্য কয়েক দফা বাড়িয়ে দেয়ার এই কৌশল বিগত বছরগুলোতেও দেখা গেছে। রোজা শুরুর আগে বাজারের এই হালচাল উদ্বেগের। রমজানের সময় ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, মসলা ইত্যাদি পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীরা মওকা বুঝে এ সময়টাতেই চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন।
বড় থেকে ছোট ব্যবসায়ী সবার প্রবণতা এ সময় বেশি লাভ তুলে নেয়ার। এবারো সেই আলামত লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চিনি, তেল, আদা, পেঁয়াজ ইত্যাদি নিত্যপণ্যের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়েছে। তরিতরকারির দামও ঊর্ধ্বমুখী। জানা গেছে, বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট নেই। পাশাপাশি খোলা তেলেরও সরবরাহ পর্যপ্ত। এরপরও বিক্রেতারা প্রতি সপ্তাহে বাড়তি দরে তেল বিক্রি করছেন। বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে।
ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যাতে বাজারকে অস্থিতিশীল করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখার কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অবশ্য এসব তৎপরতা প্রতি বছরই দেখা যায়। রমজানে বেশি চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত থাকার এবং যেকোনো মূল্যে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার ঘোষণা দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
সরকারের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকে ভোগ্যপণ্যের উৎপাদক ও বিপণনকারীরা আশ্বাস দেন রমজানে কোনো পণ্যের দাম বাড়বে না। কিন্তু এরপরও রমজানের আগে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। মানতেই হবে, অতীতের তুলনায় গত কয়েক বছরে রোজার সময় ভোগ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার মোটামুটি সফলতার পরিচয় দিয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি রোধ করতে না পারলেও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে সক্ষম হয়েছে।
এবার সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারকে আগের তুলনায় বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কাজেই রোজা শুরুর আগেই যাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর কৌশল বাস্তবায়ন করতে না পারে, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে এখন থেকেই। রোজায় বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা থাকে সেগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্নে রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য