-->
শিরোনাম

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত কবি সোফিয়া

শিপংকর শীল
বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত কবি সোফিয়া

শিপংকর শীল: মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন রাজাকার, আলবদর ও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অজান্তে অতি গোপনে প্রতিদিন রাত ১০টার পর মুক্তিযোদ্ধাদের খাবারের ব্যবস্থা করতেন স্বনামধন্য কবি সোফিয়া হোসেন। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বাড়িতে রাতযাপন করে ভোর হওয়ার আগে গন্তব্যে চলে যেতেন। মা ফাতেমা আক্তারের সঙ্গে থেকে সারারাত জেগে সোফিয়া হোসেন মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করতেন । প্রকৃত অর্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত লেখিকা সোফিয়া হোসেন সাহিত্য রচনাতেই বিশেষ আনন্দ অনুভব করেন।

 

সোফিয়া হোসেন ১৯৫৭ সালে ২ আগস্ট গৌরীপুর উপজেলায় মাওহা ইউনিয়ন নয়ানগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা আব্দুস সামাদ তালুকদার ও মাতা ফাতেমা আক্তার-এর জ্যেষ্ঠ কন্যা তিনি। তাঁরা ছয় বোন ও এক ভাই। সকলেই উচ্চশিক্ষিত। সোফিয়া হোসেন বারো বছর বয়সে প্রাইমারি স্কুল পাস করলেও পড়াশুনায় ছেদ পড়ে। কিন্তু পড়াশুনার প্রতি অদম্য আগ্রহ থাকার কারণে দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর পর ৩৫ বছর বয়সে তিনি এস.এস.সি. পরীক্ষা দিয়ে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হন। এর তিন বছর পরে তিনি এইচ.এস.সি. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে তিনি খুলনা মজিদ মেমোরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে রেগুলার পরীক্ষা দিয়ে বি.এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ইতোমধ্যে সোফিয়ার বিয়ে হয় মীর মকসুদ হোসেনের সঙ্গে, তিনি তখন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরই মাঝে সোফিয়া ঢাকাস্থ ওয়াইজ ঘাটের বুলবুল একাডেমিতে সংগীত শেখার জন্য ভর্তি হন। পরবর্তীকালে স্বামী কুমিল্লা জেলে বদলী হলে সোফিয়া সেখানে ওস্তাদ সুধীন দাশ ও অলকা দাশের কাছে সংগীতের তালিম নেন। কিন্তু চাকুরি সূত্রে স্বামী খুলনায় বদলী হলে সোফিয়া সেখানে চলে যান, ফলে সঙ্গীত সাধনাও বন্ধ হয়ে যায় ।

 

খুলনায় তিনি নাটক ও আবৃত্তির উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। খুলনা বেতার কেন্দ্রে তিনি অভিনয় শিল্পী হিসেবে 'বি' গ্রেডে উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে পুনরায় অডিশন দিয়ে তিনি 'ক' গ্রেডের অন্তর্ভুক্ত হন। স্বামী এরপর যশোর কারাগারে বদলী হলে সোফিয়ার নাট্যচর্চাও বন্ধ হয়ে যায়। তিনি লেখালেখির কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ইতোমধ্যে তিনি একটি পাক্ষিক পত্রিকা সম্পাদনার কাজ শুরু করেন। থ্রিফিঙ্গার হ্যান্ড রাইটিং একাডেমিতে তিনি কিছুদিন হাতের লেখা প্রশিক্ষকের কাজও করেন। এরপর তিনি পুরোপুরি লেখালেখির দিকে মনোযোগ দেন।

 

সোফিয়া হোসেনের ১৮টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি গ্রন্থ শিশুতোষ। সামাজিক উপন্যাস লেখা দিয়ে লেখালেখির কাজ শুরু করলেও, সোফিয়ার প্রিয় বিষয় মুক্তিযুদ্ধ। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর অতর্কিত আক্রমণ, বাড়িঘর আগুন দিয়ে পোড়ানো, মা-বোনদের উপর পাশবিক নির্যাতন খুব কাছে থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। পিতা আব্দুস সামাদ তালুকদার তার এলাকায় একজন দয়ালু ও সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতেও তিনি বিশেষ আগ্রহ বোধ করেন। সোফিয়া হোসেন দুই পুত্র সন্তানের গর্বিত মাতা।

 

ভোরের আকাশ/আসা

মন্তব্য

Beta version