রাজধানীতে অগ্নিকান্ডের ঘটনা নতুন কিছু নয়। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। কোটি কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। প্রাণ হারাচ্ছে মানুষ। তারপরও যেন টনক নড়ছে না।মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবাজারের ৯টি মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর আবারো দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
অগ্নিকান্ডের ঘটনা রোধে কমিটি দেয় নানা সুপারিশ। কিন্তু সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না। জানা গেছে, বঙ্গবাজার মার্কেটকে ২০১৯ সালে ফায়ার সার্ভিস ঝুঁঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে মার্কেটের বিভিন্ন স্থানে ব্যানার টাঙিয়ে দিয়েছিল।
অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের বিভিন্ন সময়ে নোটিশ দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালে বঙ্গবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যদের নিয়েও ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরে বঙ্গবাজারের নিরাপত্তা বিষয়ে করণীয় নিয়ে সভাও হয়। এ সময় তাদের বিভিন্ন রকম পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু এসব পরামর্শ বাস্তবায়ন হয়নি। বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কঠোর হওয়া দরকার ছিল।
গত বছর সারা দেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৩০৩ জন নর-নারী আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। যার মধ্যে পুরুষ ২২৯ জন আর নারী ৭৪ জন। এ ছাড়া সম্পদের ক্ষতি হয়েছে ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৯ টাকার। যা গত বছর ছিল ৩৩০ কোটি ১৫ লাখ ৩৩ হাজার ১৯০ টাকা। সর্বশেষ ৫ মার্চ রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকার শিরিন ম্যানশনে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই ৭ মার্চ গুলিস্তানের সিদ্দিকবাজারে ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ।
এর আগে ২০২১ সালের ২৭ জুন রাজধানীর ঢাকার মগবাজারের ওয়্যারলেস গেট এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ১২ জন নিহত হন। আহত হন শতাধিক। গত বছরের সব থেকে ভয়ংকর অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ছিল চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের সোনাইছড়িতে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকান্ড। ওই ঘটনায় আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া প্রত্যক্ষভাবে ছড়িয়ে যায় আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে।
আগুনে প্রাণ হারায় ৫১ জন, যার মধ্যে ১৩ জনই ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী। আহত হয় অসংখ্য মানুষ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলোর জবাবদিহিতার অভাবেই তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হয় না।
তাদের মতে সিটি করপোরেশন এবং ফায়ার সার্ভিসসহ জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশ্বের অগ্নিদুর্ঘটনাগুলোতে নজর দিলে দেখা যায়, নিজস্ব অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা যেখানে ভালো সেখানে ক্ষতির পরিমাণ কম। আমাদের দেশে অগ্নিকান্ড ঘটলে তুলনামূলক ক্ষতি বেশি হয়। মানুষের জীবনও যায় বেশি।
অতীতে অগ্নিকান্ডের ঘটনাগুলোতে তদন্ত কমিটি যেসব সুপারিশ দিয়েছে সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। অগ্নিকান্ড প্রতিরোধে নাগরিকেরও ভূমিকা রয়েছে। কেবল সচেতন হলেই অনেক অগ্নিকান্ড প্রতিরোধ করা সম্ভব। ফায়ার সার্ভিসের কর্তাব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় বলেছেন, সচেতনতার অভাব এবং অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহার কারণে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, বিড়ি-সিগারেট বা মশার কয়েলের আগুন সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করতে হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য