-->
সম্পাদকীয়

আগুন নেভানোয় দরকার জলাধার

নিজস্ব প্রতিবেদক
আগুন নেভানোয় দরকার জলাধার

অগ্নিনির্বাপণে পানির সংকট- বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের পর আবারো বিষয়টি সামনে আসছে। জলাধার ভরাটে করে ফেলার কারণে সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে নগরবিদরা অভিযোগ করছেন। বঙ্গবাজারের ঠিক উল্টো দিকেই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদর দপ্তর। তারপরও আগুন নেভাতে সময় লেগেছে ৬ ঘণ্টার বেশি।

 

আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই কেন নিয়ন্ত্রণে আনা গেল না? আশপাশের ভবনগুলোয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে সক্ষমতার প্রশ্নটিও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। নদী-নালা, বিল, হাওড়, বাঁওড়ের মতো বহু জলাভ‚মি রয়েছে বাংলাদেশে। দেশের ৭-৮ লাখ হেক্টর ভূমি কোনো না কোনোভাবে জলাভূমির অন্তর্ভুক্ত।

 

কিন্তু এসব ভরাটের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এতে প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও নগরের ভারসাম্য ব্যাহত হচ্ছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) তথ্য বলছে, সারা দেশে প্রতি বছর ৪২ হাজার একর কৃষিজমি ও জলাশয় ভরাট হচ্ছে। ১৯৯৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ৫ হাজার ৭৫৭ একর জলাভূমি ভরাট হয়েছে।

 

এর ফলে জলাভূমির ওপর নির্ভরশীল মানুষ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নদী, খাল, বিল, পুকুর ইত্যাদি পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করে থাকে। এছাড়া চারপাশের বাতাসকে শীতল রাখা, বর্ষা মৌসুমে বন্যা প্রতিরোধ, শহরে জলাবদ্ধতা নিরসন, পানির চাহিদা পূরণ ও আবর্জনা পরিশোধনে জলাভূমিগুলোর গুরুত্ব অনেক।

 

প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০-এর ধারা ৫ অনুযায়ী খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। এ ছাড়া এ ধরনের জায়গার অন্য কোনোভাবে ব্যবহার, ভাড়া, ইজারা বা হস্তান্তরও করা যাবে না। একই আইনের ধারা ৮(১)-এ বলা হয়েছে, কেউ এই আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক ৫ বছরের কারাদন্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে।

 

এছাড়া উচ্চ দন্ডে দন্ডিত করারও বিধান রয়েছে। ধারা ৮(২) ও ৮(৩)-এ এ ধরনের কারাদন্ডের জন্য শাস্তি এবং নিজ খরচে সেটা আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। ২০১৪ সালের ৬ মে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের সব খাল, খেলার মাঠ ও পার্ক রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

 

এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী প্রতিটি ওয়ার্ডে অন্তত দুটি করে খেলার মাঠ থাকার কথা রয়েছে। সব ধরনের আইনকানুন ও আদালতের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে খেলার মাঠ দখল চলছেই।

 

এছাড়া সারা দেশেই নদী-খাল দখল-দূষণের মহোৎসব চলছে। চর পড়ে এবং দখল-দূষণের কারণে দেশের নদী-খালগুলো এখন মৃতপ্রায়। হারিয়ে যাওয়ার পথে বহু নদী-খাল-জলাশয়। যখন যেভাবে প্রয়োজন তখন সেভাবে নদী-খাল-জলাশয় ব্যবহার করা হচ্ছে। ভরাট করে দখল করার উৎসবে মেতে উঠেছে প্রভাবশালীরা। সারা দেশ যেন এখন নদী-খাল-জলাশয় বৈরী দেশে পরিণত হয়েছে।

 

একের পর এক জলাভূমি হারিয়ে যাওয়া মানে জেনেবুঝে দেশের ক্ষতি ডেকে আনা। তাই জলাভূমি রক্ষায় প্রচলিত আইনের প্রয়োগ ঘটাতে হবে। জলাধার রক্ষা সরকারের দায়িত্ব। স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে জলাভূমিগুলো সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার কথা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version