প্রতিনিয়ত রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে সবুজ পাহাড়। খুন হচ্ছে একের পর এক। আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুনোখুনি বাড়ছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বান্দরবানে পাহাড়ি সশস্ত্র দুই গ্রুপের গোলাগুলির ঘটনায় আটজন নিহত হয়েছেন।
স্থানীয়রা মনে করছেন, ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) ও কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সদস্যদের মধ্যে গোলাগুলি হয়ে থাকতে পারে। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করা না গেলেও পোশাক দেখে ধারণা করা হচ্ছে, তারা সবাই কেএনএফের সদস্য।
এর আগে গত ২২ মার্চ সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন রোয়াংছড়ির খামতাংপাড়ার কারবারি। আঞ্চলিক দলগুলো তাদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পাহাড়ের মানুষের নাভিশ্বাস তুলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সহিংসতা নতুন নয়। গত চার বছরে আঞ্চলিক দলগুলোর সংঘাতে সেখানে দেড় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত মূলত জনসংহতি সমিতির দুটি অংশ এবং ইউপিডিএফ ও ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক। পাহাড়ি অধিবাসীদের মধ্যেই এ পক্ষগুলোর কম-বেশি সমর্থন রয়েছে।
তারা কেউ পার্বত্য শান্তিচুক্তির পক্ষে, কেউ বিপক্ষে। আদিবাসী ও সেটলারদের মধ্যেও বিবাদ-সংঘাতের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পাহাড়ে সংঘাতের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করে এমন বিভিন্ন সংস্থার রাখা হিসাব এটি।
এ ছাড়া অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, ছোট-বড় হামলার ঘটনাও ঘটছে পাহাড়ে। কিছুদিন পরপরই অশান্ত হয়ে উঠছে পার্বত্যাঞ্চল। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ঘটছে প্রাণহানি। পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের নামে সক্রিয় আঞ্চলিক সংগঠনগুলো নিজেরাই পারস্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকছে সব সময়। আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিনিয়ত চলছে বন্দুকযুদ্ধ ও অপহরণের ঘটনা।
স্থানীয় অনেকের ধারণা, প্রকাশ্যে হত্যাকান্ড ঘটানোর মূল উদ্দেশ্য হলো এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে আধিপত্য বিস্তার করা। একই সঙ্গে বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটাতে এরা ভারি অস্ত্র সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনও বলছে, ‘ওরা’ এখন ‘সেকেন্ড ফেজ ইনসারজেন্সি’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা করছে।
পাহাড়ি সশস্ত্র গ্রুপ গুলোর কাছ থেকে সম্প্রতি যেসব অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তাতে তাদের ভারি অস্ত্র সংগ্রহের প্রমাণ মিলছে। ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ঐকমত্যের সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
এই চুক্তির আওতায় সে সময়কার বিচ্ছিন্নতাবাদী শান্তি বাহিনীর ২ হাজার সশস্ত্র কর্মী অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। অবসান ঘটে অব্যাহত রক্তপাতের। দুঃখজনক ব্যাপার, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এখনো এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের দিকে সব সময় বন্দুক তাক করে থাকছে।
প্রায়ই শোনা যাচ্ছে, পাহাড়ি জনপদে অপহরণ, রক্তাক্ত সংঘর্ষ, জমি দখলের খবর। পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। আঞ্চলিক গ্রুপ গুলোর সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ন্ত্রণ করে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে হবে। পার্বত্য শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করে এর সুফল দৃশ্যমান করতে হবে পার্বত্যবাসীর কাছে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য