এসডিজির এজেন্ডাগুলোকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং ২০২১-৪১ সাল পর্যন্ত পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনার লক্ষ্যগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে বাস্তবায়নের জন্য সরকার কাজ করছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জটি বেশ কঠিন। এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভ‚মিকা গুরুত্বপূর্ণ। সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়ন শেষে জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্টসমূহ ঘোষণা করে। এতে মোট ১৭টি অভীষ্ট, ১৬৯টি লক্ষ্য ও ২৩২টি সূচক নির্ধারণ করা হয়।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পেছনে বড় উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যকে পরাজিত করা এবং একই সঙ্গে পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশকে সুরক্ষা দেয়া। জানা গেছে, ২০১৫ সালে শুরু হওয়া এসডিজি মহাপরিকল্পনার ইতোমধ্যে ৭ বছর পার হয়েছে; যার বাস্তবায়ন গতি কোভিড-১৯ মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে কিছুটা হলেও হুমকির মুখে পড়েছে। ক্ষুধা-দারিদ্র্য হ্রাসের পরিবর্তে এখন তা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সামনে মোটা দাগে চারটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এগুলো হলো- অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তির পরিসর বাড়ানো, স্থিতিশীল সুশাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনরোধ ও অভিযোজন। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চলছে নানা কার্যক্রম। তবে এর গতি আশানুরূপ না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে। এ কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি বৈশ্বিক খাদ্য, জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলো এসডিজি অর্জনের সব লক্ষ্যমাত্রা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে আরো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত তহবিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বৈশ্বিক পর্যায়ে এসডিজি সফলভাবে বাস্তবায়নে অবকাঠামোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থায়নের ব্যবস্থা করাটা প্রকৃতপক্ষে বৃহত্তম চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
অর্থনৈতিক সূচকের দিক থেকে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি; কিন্তু উন্নয়নকে টেকসই মনে করতে পারছি না। কারণ ঋণখেলাপির পরিমাণ বেড়েই চলছে, ক্রমেই প্রকট হচ্ছে ধনী-গরিবের আয় ও ভোগ-ব্যবধান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ব-দ্বীপ রাষ্ট্র বাংলাদেশ, সে ক্ষেত্রে জলবায়ুর চরমভাবাপন্ন বৈরী আচরণ এবং পরিবেশের অবনমন দেশে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে চ্যালেঞ্জ।
২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। উত্তাপ বাড়ার কারণে হিমবাহের গলন আরো বাড়ার আশঙ্কা। হিমালয় অঞ্চলে তৈরি হবে অসংখ্য হিমবাহ লেক। এসব লেকে বিস্ফোরণ হলে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, খরা, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াসহ বেশকিছু সমস্যা এসডিজির লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্যানিটেশনের ক্ষেত্রেও আমাদের অগ্রগতি কম। ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন বা পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিত করতে হবে। বৈশ্বিকভাবে ৮০ শতাংশ পানি দূষিত হয়ে পরিবেশে চলে যাচ্ছে, যা একদিন ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
পৃথিবীর ১৮ বিলিয়ন মানুষ অপরিশোধিত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। ৬৬৩ মিলিয়ন মানুষের নির্দিষ্ট কোনো পানির উৎস নেই। ঢাকায় যে পরিমাণ বর্জ্য পানি তৈরি হচ্ছে তার ৮০ শতাংশই ব্যবস্থাপনার বাইরে থেকে যাচ্ছে। যুগোপযোগী পানি ব্যবস্থাপনা নীতি প্রণয়নের পাশাপাশি পানি, জনস্বাস্থ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্ত সংস্থা বা সরকারি বিভাগগুলোর সমন্বয়ও বিশেষ প্রয়োজন।
আমরা আশা করব, সরকারের নীতিনির্ধারকরা এসব বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য