-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

বিদ্যুৎ কেনায় স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন

নিজস্ব প্রতিবেদক
বিদ্যুৎ কেনায় স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন

দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও লোকসানের চক্র থেকে বের হতে পারছে না বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। অন্যদিকে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে গ্রাহকের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে বাড়তি খরচ। এদিকে, একটি দৈনিকে ‘লোকসান মেনে বিদ্যুৎ কিনছে পিডিবি’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শেষে কিছু শর্ত পূরণ হওয়ার পর বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ বা সিওডি (কমার্শিয়াল অপারেশন ডেট) ঘোষণা করা হয়। এরপর ওইদিন থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনে পিডিবি।

 

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনায় সাধারণত এমন নিয়ম অনুসরণ করা হলেও ব্যতিক্রম হয়েছে কয়লাভিত্তিক দুটি কেন্দ্রের ক্ষেত্রে। এর একটি বহুল আলোচিত রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, যেখানে নিম্ন মানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। অন্যটি হলো বরিশাল ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, যেটি নির্মিত হয়েছে নদী ও সরকারি খাসজমি দখল করে। এ নিয়ে আপত্তি রয়েছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের।

 

অভিযোগ রয়েছে কেন্দ্র দুটিকে ‘ব্যাক ডেটে’ বা আগের তারিখে বিল পরিশোধ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, কোনো কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। পাশাপাশি অন্যান্য শর্ত পূরণের পর কমিটি বাণিজ্যিক উৎপাদনের তারিখ ঘোষণার সুপারিশ করে। বাণিজ্যিক উৎপাদনের আগে উৎপাদিত বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করা হয় না।

 

অভিযোগ উঠেছে, ক্যাপাসিটি চার্জ বা কেন্দ্র ভাড়া নেয়ার আশায় শর্ত পূরণ না করেই তড়িঘড়ি করে রামপাল ও বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ যতটুকুই উৎপাদন হোক তার বিল তো পাবেই, পাশাপাশি উৎপাদন না করলেও কেন্দ্রভাড়া দিতে হবে এসব কেন্দ্রকে।

 

অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিআরসি) নখদন্তহীন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। তাদের ক্ষমতাকে খর্ব করে সরকার অযাচিতভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়াচ্ছে। তা ছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ আইনের কারণে বিদ্যুৎ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হচ্ছে না। এর ফলে গোষ্ঠীবিশেষ সুবিধা পাচ্ছে।

 

ধীরে ধীরে আমাদের কয়লা ও জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সরে আসতে হবে। নতুন করে আর যেন কোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। এর সঙ্গে কোনোভাবেই যেন এই খাতে আর ভর্তুকি না বাড়ে সেদিকে নজর দিতে হবে। বিদ্যুৎ আমদানি ও নতুন কেন্দ্র স্থাপন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি সংকট ও সঞ্চালন-বিতরণ লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায় না। ফলে অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে।

 

এমন একটা ক্রিটিক্যাল সময়ে যখন মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, যখন মূল্য যৌক্তিকীকরণের কথা বলি, তখন সেটা সাধারণ মানুষের ওপর এসে পৌঁছায়। যেখানে সুশাসন দিয়ে বড় রকমের সাশ্রয় করতে পারি, আধুনিক টেকসই জ্বালানি খাত তৈরি করতে পারি, সেটার দিকে নজর দেয়া উচিত।

 

পিডিবি জনগণকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছে না। অথচ প্রতি বছর দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে লোকসানে বিদ্যুৎ কেনার দায় জনগণ কেন নেবে? সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোতে যে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অপচয় হয়, তার দায় ভোক্তাদের ওপর চাপানো যাবে না। দুর্নীতি ও অপচয় কমিয়ে পিডিবির আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version