সারা দেশে থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ভয়াবহ তাপপ্রবাহে যেন অস্থির হয়ে উঠেছে। কয়েক দিন ধরে লোডশেডিং ও পানির সংকটে হাঁসফাঁস অবস্থা বিরাজ করছে। টানা তাপপ্রবাহ মাঝারি থেকে তীব্র, তীব্র থেকে আরো তীব্রতর হচ্ছে। ভয়াল দুর্যোগ পরিস্থিতির রূপ নিয়েছে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে চলমান তাপপ্রবাহ।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় তীব্র তাপপ্রবাহে পারদ উঠেছে ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত রোববার দুপুর ১টা পর্যন্ত ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন শনিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত ৫৮ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।
রাজধানী ঢাকা, ফরিদপুর, পাবনা, যশোর, কুষ্টিয়াসহ দেশের ৮ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপদাহের সঙ্গে গরম বাতাসও বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া দেশের বাকি ৫৬ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। এ অবস্থা আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এ ছাড়া দেশজুড়ে তাপমাত্রা আরো বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটির তথ্যানুসারে, আগামী ২ দিনে তাপমাত্রা সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। আর আগামী ৫ দিনের শেষদিকে সারা দেশে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এতে কিছুটা কমে আসতে পারে তাপমাত্রা। চলমান তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে রাজধানীর বাড্ডা, বনশ্রী, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় দেখা দিয়েছে লোডশেডিং ও পানির সংকট।
এ অবস্থায় বয়স্ক ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। লোডশেডিংয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পানির সরবরাহেও সংকট দেখা দিয়েছে। ওয়াসার পানির পাইপ বসানোর কাজ চলমান থাকায় কোথাও কোথাও পানির সংকট হচ্ছে। তীব্র গরমে পানি সংকটের বিষয়টি কোনোভাবেই কাম্য নয়। জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহজেই মুক্তি মিলছে না এই সমস্যা থেকে।
সারাদিন কড়া রোদের সঙ্গে প্রচন্ড ভ্যাপসা গরমে সর্দি, কাশি, জ্বরসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বিভিন্ন বয়সের মানুষ। ডায়রিয়া, আমাশয়সহ পেটের পীড়া, জ্বর-সর্দি-কাশি, চর্মরোগ, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে প্রত্যেক ঘরে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছে। অসংখ্য মানুষ হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। গণমাধ্যমে খবর আসছে বেশ কয়েক দিন ধরে স্থানীয় সরকারি হাসপাতালগুলোতে এসব রোগ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসছেন রোগীরা। শিশু ও বৃদ্ধদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে চিকিৎসকরা।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আকাশে মেঘ নেই, পাশাপাশি বাতাসে আর্দ্রতা কমে গেছে। এতে কমছে না গরমের তীব্রতা। এদিকে তীব্র গরমে সারা দেশের জনজীবন অতিষ্ঠ। প্রয়োজনে যারা বাইরে বের হচ্ছেন, পড়ছেন অস্বস্তিতে। মানুষ প্রকৃতির ওপর নানাভাবে খবরদারি করছে। খাল-বিল, নদী-নালা দখল করা হচ্ছে। পাহাড় কাটা চলছে নির্বিচারে। কৃষি জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে ঘরবাড়ি। নানাভাবেই চলছে প্রকৃতির ওপর অত্যাচার।
যে কারণে প্রকৃতি বৈরী হয়ে উঠছে। আবহাওয়ার এই চরমভাবাপন্ন পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে আমাদের পর্যাপ্ত গাছ লাগানো দরকার। পরিকল্পিত নগরায়ণের বিকল্প নেই।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য