-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

ভাবনায় ও চেতনায় শ্রমিক দিবস

ভাবনায় ও চেতনায় শ্রমিক দিবস

হতদরিদ্ররাই সবসময় বঞ্চনার শিকার হয়েছে। নিপীড়ন, নির্যাতন আর কষ্টের মুখোমুখি হয়েছে মানবজাতির সূচনা লগ্ন থেকেই। পাশাপাশি বঞ্চনার আকাক্সক্ষাই দেখিয়েছে মুক্তির পথ। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং পরিক্রমা। এ প্রক্রিয়া চলছে এবং চলবে। সভ্যতার এগিয়ে যাওয়ার পথ তার ইঙ্গিত বহন করে। পৃথিবী থেকে একদিন যে এই বঞ্চনার অবসান হবে এ রকম স্বপ্ন অনেকেই দেখেছেন। তবে তখনকার পরিবেশ কী রকম হবে, তার রূপরেখা কেউ দিয়ে যেতে পারেননি।

 

তবে তাদের একজন বলেছেন, পৃথিবীতে অসংখ্য রাষ্ট্রের অস্তিত্ব হারিয়ে একটি একক রাষ্ট্রের জন্ম দেবে। যে রাষ্ট্রে বঞ্চনার বিষয়টি ইতিহাস হয়েই থাকবে।

 

সেই ধারাবাহিক পরিক্রমায় আজ বঞ্চনা থেকে মুক্তির আকাক্সক্ষা নিয়ে বিশ্বের শ্রমিকেরা প্রতিবছর আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস তথা মে দিবস পালন করেন। ১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের শ্রমিকেরা আট ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন।

 

আজ বাংলাদেশের শ্রম পরিবেশ অতীতের তুলনায় যতটা এগিয়েছে, তার পেছনেও রয়েছে শ্রমিকদের ত্যাগ ও সংগ্রাম। তা সত্তে¡ও বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরির দাবি এখনো উপেক্ষিত, এখনো তাদের বিরাট অংশ মৌলিক মানবাধিকার থেকেও বঞ্চিত।

 

মে দিবসের আকাক্সক্ষা বিশ্বের শ্রমিকদের সংহতি যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি তাদের ওপর শোষণের বিরুদ্ধেও প্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছে। মে দিবসের পথ ধরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের অধিকার, বিশেষ করে মজুরি, কাজের পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা এসব ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। কিন্তু গত দুই দশকে বিশ্বায়নের ফলে অর্থনৈতিক গতিশীলতা ও সমৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে বৈষম্য ও বঞ্চনা।

 

বাংলাদেশের শ্রমিকদের, বিশেষ করে পোশাকশিল্প, জাহাজশিল্প, ইমারত নির্মাণশিল্পসহ অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রে কর্মরত লাখো শ্রমিক উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও অন্যান্য অধিকার পান না। মৌলিক চাহিদা পূরণ করে মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের জন্য প্রয়োজন জাতীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করা। কিন্তু কাগজের সেই নিয়মের বাস্তবায়ন এখনো হয়নি।

 

শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রেও মালিক ও পুলিশপক্ষ বহুভাবে বাধা সৃষ্টি করে রাখে। আমাদের দেশে রানা প্লাজা, তাজরীনসহ গত দুই বছরের পোশাকশিল্পে হাজারো শ্রমিকের মৃত্যুর যথাযথ ক্ষতিপূরণ দান এবং দোষী ব্যক্তিদের উল্লেখযোগ্য বিচার এখনো হয়নি।

 

দেশে শিল্পশ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া উন্নতির লক্ষণ। শিশুশ্রম গত ১০ বছরে অর্ধেকেরও বেশি কমেছে। কিন্তু প্রবাসের শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করায় সরকারি উদ্যোগ ও সামর্থ্য নেই বললেই চলে। বিপুলসংখ্যক খেটে খাওয়া মানুষ শ্রমিকের স্বীকৃতি পান না। কৃষি খাতের মজদুর বা গৃহস্থালি সহকারীদের জীবন এখনো মানবেতর দশাতেই পড়ে রয়েছে।

 

এ ছাড়া রিকশাচালক ও এ ধরনের স্বনিয়োজিত শ্রমিকদের জীবিকার বেলায় নেই কোনো নিশ্চয়তা। দুস্থদের মধ্যে আরো দুস্থ হলো নারী ও শিশুশ্রমিকেরা। বিশেষ করে আমাদের নারী শ্রমিকেরা তাদের মর্যাদা এখনো প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। প্রকৃত অর্থে পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থা এর প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

তবে সব কথার শেষ কথা, শ্রমিকের স্বার্থ ও কল্যাণের দিকটি অবহেলা করে- বিশেষ করে নারী সমাজের উন্নয়নের বিষয়টিকে পাশ কাটিয়ে কোনো সত্যিকার উন্নতি সম্ভব নয়।

 

মনে রাখা জরুরি যে, শ্রমিকেরাই সমাজে সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং নারীদের অবস্থান বিশ্বের মোট জনসমষ্টির ৫০ ভাগ। সময় এসেছে নতুন করে ভেবে দেখার।

 

আমরা আশা করি, মানব জাতি-গোষ্ঠী সে ভাবনায় মনোনিবেশ করে শ্রমিক দিবসকে মহিমান্বিত করবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version