-->
সম্পাদকীয়

পাঠ্যবইয়ে জটিলতা অমার্জনীয় অপরাধ

পাঠ্যবইয়ে জটিলতা অমার্জনীয় অপরাধ

স্কুল পাঠ্যবইয়ে তথ্য বিকৃতি, বানান ভুল, লেখা পরিবর্তন, পরিমার্জন ইত্যাদি নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা নতুন কিছু নয়। এসব কারণে ভোগান্তিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা। পাঠ্যবইয়ে তথ্য বিকৃতি ও ভুলগুলো শুধু অদক্ষতাই নয়, এটি অমার্জনীয় অপরাধ। নতুন শিক্ষাক্রমে নানা ভুল, অসঙ্গতি ও বিভ্রান্তিকর তথ্য আসার পর দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

 

বিতর্কের মুখে পাঠ্যবইয়ের ভুলভ্রান্তি চিহ্নিত করে সংশোধন এবং এতে কারো কোনো গাফিলতি ছিল কিনা, খতিয়ে দেখতে দুটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নানামুখী চাপে গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের অসঙ্গতি, ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করে সুপারিশ দিতে গত ৩১ জানুয়ারি ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

পরবর্তী এক মাসের মধ্যে কমিটির প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও মাসপূর্তির আগেই কমিটি পাল্টে ৮ সদস্যের নতুন আরেকটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

 

সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। নতুন শিক্ষাবর্ষের চার মাস পর সংশোধনী প্রকাশ করল এনসিটিবি। ষষ্ঠ শ্রেণির ১১ বিষয়ে ২০১টি ভুলের সংশোধনী এবং সপ্তম শ্রেণির ১১ বিষয়ে ২২০টি ভুলের সংশোধনী এনসিটিবির ওয়েবসাইটে দেয়া হয়েছে।

 

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এনসিটিবির ওয়েবসাইটে পাঠ্যবই সংশোধনীর কপি ঝুলিয়ে দিয়ে বলা হয়, প্রধান শিক্ষকরা শ্রেণিশিক্ষকের মাধ্যমে সেই সংশোধনীর কপি শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেবেন। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ শিক্ষকই সংশোধনীর কপি প্রিন্ট করিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেন না।

 

ফলে শিক্ষার্থীরা কখনোই সংশোধিত কপি পায় না। এই বাস্তবতা খুবই উদ্বেগজনক। শিক্ষার্থীদের ভুল শিক্ষা গ্রহণ দেশের জন্য মোটেও সুফল বয়ে আনবে না। সংশোধনের নামে দীর্ঘ সময় চলে যাওয়ায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে।

 

সংশোধনীর কপি প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছানো এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি। শিক্ষক ও অভিভাবকদের সচেতনতা ও আন্তরিকতা কাম্য। শিক্ষার মতো এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়া খুবই দুঃখজনক। ফলে পাঠ্যবই প্রণয়নে শিক্ষা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের আন্তরিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

 

আমরা চাই, পাঠ্যবই প্রণয়ন নির্ভুল হোক। প্রণীত পাঠ্যবই প্রত্যাহার ও সংশোধনের মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়া স্বস্তিদায়ক নয়। একটি বই পড়তে শুরু করার পর সেটি বাদ দেয়ায় বিভ্রান্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। দায়িত্বপ্রাপ্তরা এই গাফিলতির দায় কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

 

নতুন শিক্ষাক্রমে ছাপানো পাঠ্যপুস্তকে ভুল হলো কেন? শিক্ষাক্রমের ভুল-ভ্রান্তির জন্য এনসিটিবির কোন কোন কর্মকর্তা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে হবে। এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষার মেরুদন্ড ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। এর আগেও স্কুল পাঠ্যবইতে ভুলের ছড়াছড়ি হয়েছে। কৌশলে হয়েছে তথ্য বিকৃতি। বিভিন্ন সময়ে সংবাদপত্রে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

 

কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে পাঠ্যবইয়ে যে পরিবর্তন করে সেই পরিবর্তন এই খাতে স্মরণকালের মধ্যে বড় সংস্কার হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। এ সময় পাঠ্যবইয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পাশাপাশি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ তুলে ধরা হয়।

 

কিন্তু আমরা দেখছি, ইতিবাচক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছর কোনো না কোনো বইতে ভুল ও বিকৃতি দেখা যায়। এর দায় কার? এনসিটিবির দায়িত্ব কী? নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। আমাদের সন্তানদের প্রকৃত ইতিহাস ও সঠিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

 

পাঠ্যবই বিকৃতি ও ভুলের নেপথ্যে যারা যুক্ত তাদের কোনোভাবেই ছাড় দেয়া যাবে না। পাঠ্যবইয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভুল-ভ্রান্তি ও বিকৃতি যেন ভবিষ্যতে কোনোভাবেই আর না হয় সে বিষয়ে সরকার ও সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ সচেতনতা আমরা আশা করি।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version