-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

সচেতন হোন, বাল্যবিয়ে ঠেকান

সচেতন হোন, বাল্যবিয়ে ঠেকান

বাল্যবিয়ে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও সমস্যাটি রয়ে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এখনো প্রতি চারজন তরুণীর মধ্যে একজনের ১৮ বছরের আগেই বিয়ে হচ্ছে। বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের প্রচলন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং বিশ্বে অষ্টম বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ।

 

বুধবার ইউনিসেফের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিষয়টি উদ্বেগের। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে প্রশাসন উদ্যোগ নিচ্ছে। সেই সঙ্গে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। সচেতন হতে হবে। বাল্যবিয়ের কারণ হিসেবে দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়। করোনা মহামারির সময় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছিল। এর দায় যেমন রাষ্ট্রের, তেমনি সমাজেরও।

 

২০১৯ সালের বাংলাদেশ মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভের তথ্য ব্যবহার করে তৈরি করা ইউনিসেফের এই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ৫১ শতাংশ তরুণীর বিয়ে হয়েছিল তাদের শৈশবে। দেশটিতে বাল্যবিয়ের প্রচলন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং বিশ্বের মধ্যে অষ্টম সর্বোচ্চ। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৪৫ লাখ নারীর বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর হওয়ার আগে এবং ১ কোটি ৩ লাখ নারীর বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর হওয়ার আগে।

 

অভিভাবকদের কর্মহীনতা, সন্তানের স্কুল খোলার নিশ্চয়তা না থাকা এবং নিরাপত্তাবোধ থেকে দেশে বেড়ে গেছে বাল্যবিয়ের হার। দেশে আগের তুলনায় বাল্যবিয়ে বেড়েছে ১৩ শতাংশ। বিগত ২৫ বছরের মধ্যে এবারই এ হার সবচেয়ে বেশি। বৈশ্বিক পরিসংখ্যান বলছেÑ সংঘাত, দুর্যোগ কিংবা মহামারির সময় বাল্যবিয়ের সংখ্যা বাড়ে।

 

আমাদের দেশের ২০ শতাংশ মানুষ এখন দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে, করোনার কারণে আরো ২০ শতাংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। বাল্যবিয়ের ঝুঁকি এসব পরিবারেই বেশি। বর্তমানে ৪৭ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে ১৮ বছরের নিচে। বাংলাদেশ এখনো বাল্যবিয়ের উচ্চহারের দেশের তালিকায় রয়েছে। বাল্যবিয়ের কারণে অনেক মেয়ে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একমাত্র বাল্যবিয়ের কারণেই মাধ্যমিকের গন্ডি পার হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে অনেক কিশোরীর শিক্ষাজীবন। অথচ তারা সমাজের অন্য মেয়েদের মতো শিক্ষিত, স্বাবলম্বী হতে পারত।

 

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাল্যবিয়ে বন্ধ করার জন্য অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক ও সমাজের অগ্রসর নাগরিকদের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে বাল্যবিয়ে রোধে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে।

 

আর জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, বাল্যবিয়ে নির্মূল করতে হবে ২০৪১ সালের মধ্যে। বাল্যবিয়ে রোধে অনেক বছর ধরেই সরকার সচেষ্ট। নানা পদক্ষেপ গ্রহণসহ সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনে সাজা ও জরিমানা বাড়ানো হয়েছে।

 

তবে এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের দায়িত্ব যাদের, সেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এমনকি সংসদ সদস্যরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে সুফল পাওয়া যাবে। সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। বাল্যবিয়ে রোধে প্রাথমিকভাবে মা-বাবার মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা প্রয়োজন। বাল্যবিয়ে রোধের জন্য প্রতিটি উপজেলায় যে কমিটিগুলো আছে, তা খুব বেশি সচল করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version