বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বর্তমান বৈশ্বিক দুঃসময়ে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ। বিশ্বব্যাংক সর্বশেষ বাংলাদেশের সঙ্গে ২২৫ কোটি ডলার, প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এর আগে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশকে, যার প্রথম কিস্তি এর মধ্যে পাওয়া গেছে। তবে ঋণ প্রদানের শর্ত হিসেবে তারা বাংলাদেশকে কিছু পরামর্শও দিয়েছে কতিপয় আর্থিক খাতে সংস্কারের জন্য। তদনুযায়ী সরকার কিছু কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও শুরু করেছে।
এরই অংশ হিসেবে বর্তমানে আইএমএফের ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আবারো ঢাকায় এসেছে। গত সপ্তাহে তারা আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে।
তারা বলেছেন, বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স। তবে বর্তমানে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকায় আগামীতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে অবস্থা মোকাবিলা করে বাংলাদেশকে রপ্তানি আয় আরো কিভাবে বাড়ানো যায় এবং প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হয়, সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।
এর পাশাপাশি প্রশ্ন তুলেছে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া পণ্যের বিপরীতে ৩শ কোটি ডলার দেশে আসছে না কেন? আইএমএফ মূলত রপ্তানির আড়ালে বিদেশে অর্থ পাচারের প্রশ্ন তুলেছে, যা দেশের একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। উল্লেখ্য, আইএমএফের প্রশ্ন অহেতুক অমূলক ও অযৌক্তিক নয়।
দেশ থেকে প্রতিবছর বিপুল অর্থ পাচার হচ্ছে বিদেশে। এটি একরকম ওপেন সিক্রেট। তবে এর সঠিক পরিমাণ কত তা জানে না কেউ। সরকারও এ নিয়ে মুখ খুলতে চায় না সহজে। দুর্নীতি দমন কমিশন মাঝে মধ্যে কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আনলেও সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণের অভাবে তা থেকে যায় অগোচরে।
অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের নাম ও তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কার্যত কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রায় কোনো নজির নেই বললেই চলে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির মূল্য বেশি দেখিয়ে (ওভার ইনভয়েসিং) এবং রপ্তানির মূল্য কম দেখিয়ে (আন্ডার ইনভয়েসিং) দেখিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীর বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ তো আছেই। এর বাইরে রয়েছে হুন্ডি ব্যবসায়ী, সোনা ও মাদক চোরাচালান, মানব পাচার বিশেষ করে নারী ও শিশু পাচার ইত্যাদি।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর অর্থ পাচারের পরিমাণ বাড়ছে। গত ছয় বছরে (২০০৯-১৫) বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা বা ৪৯৬৫ কোটি ডলার। এই হিসাবে গড়ে প্রতিবছর পাচার হয়েছে প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা।
এ সময়ে বৈদেশিক বাণিজ্যের ১৮ শতাংশই ছিল ভুয়া। ২০১৫ সালের পর জাতিসংঘকে বৈদেশিক বাণিজ্যের আর কোনো তথ্য দেয়নি বাংলাদেশ। তবে বিদেশে অর্থ পাচারের পরিমাণ যে বেড়েছে সে বিষয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই।
বিদেশে যেভাবে এবং যে পদ্ধতিতেই অর্থ পাচার করা হোক না কেন, সেদিকে নজরদারি করতে বিশেষ ভ‚মিকা রাখতে পারে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো, দুর্নীতি দমন কমিশনও এক্ষেত্রে ইতিবাচক অবদান রাখতে পারে। বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হলে দেশের সার্বিক উন্নয়নসহ বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে সুনিশ্চিত।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য