গত সাত মাসে সরকার ছয়বার চিনির দাম বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু কোনোবারই নির্ধারিত সেই দামে চিনি বিক্রি করা হচ্ছে না। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার কেজিপ্রতি ১৬ টাকা বাড়িয়ে প্রতি কেজি চিনি খোলা বাজারে ১২০ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১২৫ টাকা বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নিত্যপণ্যের প্রতিনিয়ত মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে।
মূল্যবৃদ্ধিকে অবশ্য যৌক্তিক বলছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৃহস্পতিবার মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দাম তখনই বাড়ানো হয় যখন প্রয়োজন হয়। ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন আছে, তারা এগুলো হিসাব করে। যে দামটা হওয়া উচিত সেটা হিসাব-নিকাশ করেই তারা কিছুটা বাড়িয়েছে।
আমরা দেখেছি অতীতে, ঘোষিত দর কখনোই বাজারে প্রতিফলিত হয় না, বরং বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে বেশি দামে পণ্যসামগ্রী বিক্রি হয়। দুঃখজনক হলো, এসব তদারকির তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে অসাধু সিন্ডিকেট ক্রেতাদের জিম্মি করে অধিক মুনাফা লুটে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
সর্বশেষ গত এপ্রিলে চিনির দাম বাড়ানো হয়েছিল। তখন প্রতি কেজি খোলা চিনি ১০৪ এবং প্যাকেটজাত চিনি ১০৯ টাকা করার ঘোষণা এসেছিল। শুরুতে সে অনুযায়ী বিক্রি হলেও তারপর চিনির দাম বাড়তে বাড়তে ১৪০ টাকায় উঠে এসেছে। সরকার দাম বেঁধে দেয়া দাম কতটা কার্যকর হবে সেটা এখন দেখার বিষয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা পদক্ষেপ নিলেও কোনো কাজে আসছে না।
সাধারণ মানুষ তার সুফল পাচ্ছে না। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সরবরাহ চেইন ভেঙে গিয়েছিল। জাহাজ ভাড়াও বেড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তা আরো বেড়েছে। আগে থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেল ও চিনির দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। আমদানি বিঘ্ন হওয়ায় মাঝে পেঁয়াজের বাজারেও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
তারা বলছেন, সব কিছুর দাম বাড়ায় সংসার খরচ বেড়ে গেছে। যে কারণে আয়ের সিংহভাগ চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের পেছনে। চাহিদার সঙ্গে দাম যাতে না বাড়ে, সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো দৃশ্যত কিছু বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়ে থাকে।
তবে আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, এসব ব্যবস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারেই উদ্যোগী হতে হবে।
প্রথমত, সরকারের সদিচ্ছা ও বাস্তব পরিকল্পনা।
দ্বিতীয়ত, পণ্যসামগ্রীর চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা করা। এজন্য দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশের উৎপাদনব্যবস্থার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্নে রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এর বাইরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।
আমরা এও মনে করি, কেন্দ্র থেকে স্থানীয় উৎপাদন ক্ষেত্র পর্যন্ত ব্যবস্থাপনাও নজরদারির আওতায় আনা জরুরি। একই সঙ্গে আমদানিকৃত ও দেশজ উৎপাদিত এই দুই ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন ও নির্বিঘ্নে রাখার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য