করোনার কারণে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজ স্থবির হয়ে পড়েছিল। একটি জাতীয় দৈনিকের খবরে প্রকাশ, মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
এরপর আসামিকে মৃত্যু পরোয়ানাও শোনানো হয়। তবে করোনা মহামারির কারণে সে সময় দন্ড কার্যকর প্রক্রিয়া আটকে থাকে।
করোনা-পরবর্তী আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিক হলেও আসামির করা রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদনের শুনানি এখনো শুরু হয়নি। প্রায় সাড়ে ৩ বছর পেরিয়ে গেলেও একাত্তরের খুনি বাহিনী আলবদরের রংপুর অঞ্চলের প্রধান এই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দন্ড কার্যকর প্রক্রিয়া এখনো স্থবির থাকা মোটেও কাম্য নয়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারকে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর মৃত্যুদন্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুরের বদরগঞ্জ থানার মোকসেদপুর গ্রামে গুলি চালিয়ে ১৪ জনকে হত্যা, বদরগঞ্জের ঝাড়–য়ার বিলের আশপাশের গ্রামে ১ হাজার চারশর বেশি হিন্দু গ্রামবাসীকে গুলি চালিয়ে হত্যা এবং কারমাইকেল কলেজের ৪ জন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপকের স্ত্রীকে দমদম ব্রিজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে পৃথক ৩টি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন আজহার। প্রায় ৫ বছর পর শুনানি শেষে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। ৬ মাস পর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ প্রকাশ হয় পূর্ণাঙ্গ রায়।
১৬ মার্চ ট্রাইব্যুনাল আজহারের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে। এরপর রিভিউ আবেদন দাখিল করেন আজহারের আইনজীবীরা। ওই সময় করোনার কারণে শুনানি আর হয়নি। যুদ্ধাপরাধীরা দেশের শত্রু। তাদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। এখন আদালতে বিচারকাজ পুরোদমে চলছে।
আমরা আশা করি, যুদ্ধাপরাধী আজহারুল ইসলামের মামলার রিভিউ শুনানি দ্রুত নিষ্পত্তি করে দন্ড কার্যকর করা হবে। রায় কার্যকর করে এই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি খুব জরুরি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে ২০১০ সালের ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ২০১৩ সাল থেকে রায় দেয়া শুরু হয়। এরপর প্রতি বছর কোনো না কোনো মামলার রায় হয়।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর পর গত প্রায় ১০ বছরে রায় হয়েছে ৪২টি মামলার। দন্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা ৯৭। গড়ে বছরে রায় হয়েছে ৪টি করে মামলার। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে এর আগে যে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে, তাদের মধ্যে ৫ জন জামায়াত নেতা এবং একজন ছিলেন বিএনপি নেতা।
জামায়াতের যে ৫ নেতা ফাঁসিতে ঝুলেছেন, তাদের মধ্যে ৪ জনই এটিএম আজহারুল ইসলামের মতোই আলবদর বাহিনীর নেতা ছিলেন।
এরা হলেন মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও মীর কাসেম আলী। আর ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত অন্যজন হলেন বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধগুলো গণহত্যার বিচারে অনন্য নজির স্থাপন করেছে, যা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অপ্রতিরোধ্য অঙ্গীকারের প্রতিফলন।
প্রকাশ্য, স্বচ্ছ এবং অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সব ধরনের সুযোগ নিশ্চিত করে এ বিচারব্যবস্থা আগ্রহ ও নজর কেড়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়ের।
আশা করছি, ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ চালিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগী হবেন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর হবে। তা না হলে গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য