-->
শিরোনাম
সম্পাদকীয়

আশু সমাধা চাই গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের

আশু সমাধা চাই গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের

জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে গ্যাস সংকট ও ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে। ঘূর্ণিঝড় মোকার কারণে কক্সবাজারের মহেশখালীতে অবস্থিত দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আপাতত বন্ধ থাকায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

 

চট্টগ্রামে বাসাবাড়িতে চুলা জ্বলছে না, ভোগান্তি চরমে। রাজধানী ঢাকায় গ্যাস থাকলেও চাপ অনেক কম। গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল পরিবহন খাতসহ বাসাবাড়ি ও হোটেলগুলোতেও দেখা দিয়েছে রান্নার সংকট। চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদার পুরোটাই সরবরাহ করা হয় এলএনজি টার্মিনাল থেকে। ঘূর্ণিঝড় মোকার প্রভাবে ক্ষতি এড়াতে ভাসমান বন্ধ দুটি টার্মিনালের মধ্যে একটি টার্মিনাল গত শুক্রবার রাতে নির্ধারিত স্থান থেকে গভীর সমুদ্রের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।

 

ফলে ওই দুটি টার্মিনাল থেকে এত দিন দৈনিক গড়ে যে ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ হতো, সেটি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে গ্যাসের বড় ঘাটতি হয়েছে। গ্যাসের এই সংকট কাটতে আরো কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

 

আমরা আশা করি, দ্রুত এর সমাধানে উদ্যোগ নেবে কর্তৃপক্ষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের দেশে নতুন নয়। দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ-পরবর্তী সময়ে গ্যাস ও বিদ্যুতের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে আমাদের কেবল এলএনজির ওপর নির্ভর করলে চলবে না। বিকল্প পথ খুঁজে বের করে অবিলম্বে সমস্যার সমাধান করা জরুরি।

 

ভবিষ্যতে যাতে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, সেজন্য একটি বাস্তবসম্মত, পরিকল্পিত ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের রূপরেখা তৈরি ও বাস্তবায়নে সরকারের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। এমনিতেই ঘূর্ণিঝড় মোকার কারণে উপকূলীয় অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার ওপর এখন গ্যাসের অভাবে খাবার, পরিবহন ও বিদ্যুৎ সংকট ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ানো খুবই দুঃখজনক।

 

আমরা এ সমস্যার দ্রুত সমাধান আশা করি। বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে পেট্রোবাংলা সর্বোচ্চ সরবরাহ করত ২৮০০-২৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এলএনজি টার্মিনাল দুটি বন্ধ থাকায় দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে রোববার পেট্রোবাংলা সরবরাহ করেছে ২২৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। চাহিদা ও সরবরাহের বড় ঘাটতি সংকটের কারণ।

 

সারা দেশে শুক্রবার রাত থেকেই বারবার লোডশেডিং হচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হলেও রাজধানীর বাইরে গ্রামাঞ্চলে দিনে-রাতে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে।

 

অতিরিক্ত গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারছে না। ব্যাটারিচালিত ভ্যান ও অটোচালকরা ঠিকমতো চার্জ দিতে না পারায় দিনের অর্ধেক সময়ও গাড়ি চালাতে পারছেন না।

 

এতে একদিকে যেমন তাদের আয় কমে গেছে, অপরদিকে দেখা দিয়েছে পরিবহন সংকট। আমাদের দেশে গ্যাসের মজুত অফুরন্ত নয়। অথচ চাহিদা বেড়েই চলেছে। নতুন নতুন সংযোগও দেয়া চলছে। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে আমাদের গ্যাসের ব্যবহার নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

 

যেমন পাইপলাইনে সরবরাহকৃত গ্যাসের প্রচুর অপচয় ঘটে। এই অপচয় ঠেকাতে মিটার সিস্টেম চালু করা বা এরকম কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে না। পরিবহন খাতে অবাধে সিএনজির ব্যবহার চললেও নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ নেই।

 

অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসনির্ভরতাও কমছে না। গ্যাসের সংকট উত্তরণে নতুন নতুন কূপ অনুসন্ধান ও খনন করে গ্যাসের মজুত বাড়ানোর বিকল্প নেই। গ্যাসের অপচয় রোধ করতে হবে। গ্রাহক পর্যায়ে গ্যাস ব্যবহারে সচেতনতা ও মিতব্যয়িতাও কাম্য। গ্যাসের সঞ্চালন ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।

 

সর্বোপরি গ্যাস ও বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ও সুপরিকল্পিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version