মোখার আঘাত থেকে অধিকাংশ উপকূলীয় এলাকা রক্ষা পেলেও সেন্টমার্টিন ভয়ংকরভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশে শুধু সেন্টমার্টিনের ওপর দিয়েই গেছে, বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৪৭ কিলোমিটার। বাকিটা গেছে মিয়ানমারের ওপর দিয়ে। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির।
গতিপথ বদল করায় বাংলাদেশের ভূখন্ডে তেমন জোরালো আঘাত করেনি বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়। ব্যাপক শক্তি নিয়ে মোখা কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলের দিকে ধেয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত মূল ছোবল হেনেছে মিয়ানমার উপকূলে। মোখা উপকূলের খানিকটা শুধু ছুয়ে গেছে তাতেই যেন লন্ডভন্ড হয়ে গেছে দ্বীপ সেন্টমার্টিন ও টেকনাফসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। দ্বীপটিতে ১১ হাজারের মতো মানুষের বাস।
টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনে ২ হাজারের মতো ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। ১০ হাজারের বেশি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৭০০টির মতো ঘরবাড়ি প্রায় পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব কাঁচা অথবা ঝুপড়ি টিন, চাটাই অথবা ত্রিপল দিয়ে তৈরি। আরো ৩০০টির মতো ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দোকানপাট, হোটেল, রিসোর্টও ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেক গাছপালা ভেঙেছে।
জানা গেছে, এবারে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানার আগেই প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছিল। তথ্য মতে, সাড়ে ৭ লাখ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার কাজ করেছেন। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো বাড়িঘর থেকে হাঁটা দূরত্বে হওয়ায় লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ফলে অনেকটাই দুর্ঘটনা এড়ানো গেছে। প্রাণহানির খবর না থাকলেও ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে সেন্টমার্টিন, টেকনাফ আর শাহপরীর দ্বীপের মানুষ।
বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ দেশ। ঝড়, বন্যা ও জলোচ্ছাসের মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো প্রতি বছর এ দেশের মানুষের মোকাবিলা করতে হয়। সিডর, আইলা, ফণী, ইয়াসের মতো ভয়াবহ ও প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর এবার মোখা নতুন করে মারাত্মক আঘাত হেনেছে কক্সবাজার, টেকনাফ ও সেন্টমাটিনে।
সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেও প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা ধরনের আশঙ্কার বিষয় আলোচনায় আসছে। সঙ্গত কারণেই দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। গ্রহণ করতে হবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত পুনর্বাসন কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। দুর্গত এলাকায় ঘরবাড়ি, জমির ফসল হারিয়ে যারা দিনাতিপাত করছেন, তাদের পুনর্বাসনে প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
উপকূলীয় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত যে ক্ষতি হয়েছে, সেসব মেরামতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে ফসল ও ফসলি বাগান এবং দোকানপাট ও রিসোর্টের কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিরূপণ করে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে কর্তৃপক্ষকে দাঁড়াতে হবে। মানুষ প্রাথমিকভাবে সরকারি পর্যায়ে যে সহযোগিতা পেয়েছে তা সাময়িক। এখন তাদের স্থায়ীভাবে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে।
এক্ষেত্রে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য